আব্দুল হাকিম
৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১২:১৮ পিএম
# ঢাকায় প্রতিদিন উৎপন্ন হচ্ছে ৬,৫০০ টন বর্জ্য।
# একজনে দিনে গড়ে ০.৬১ কেজি বর্জ্য তৈরি করে।
# বর্জ্য থেকে ৫৭৩ গিগাওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব।
# গত ৭ বছরে ব্যয় ৩,৩২৩ কোটি টাকা।
# গবেষণায় ৬০ শতাংশ এসটিএসে গন্ধ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নেই।
# ৫৫ শতাংশ বর্জ্য সঠিকভাবে সংগ্রহই করা হয় না।
রাজধানীর রাস্তাঘাটে বর্জ্যের তীব্র দুর্গন্ধ এখন নাগরিক জীবনের নিত্যসঙ্গী। এমন অবস্থায় রাজধানীর অনেক এলাকায় শ্বাস নেওয়াই কষ্টকর। শহরের রাস্তাঘাট, ফুটপাত থেকে শুরু করে খাল ও অনেক আবাসিক এলাকার পাশে জমে থাকা ময়লা থেকে নির্গত গন্ধে অতিষ্ঠ নগরবাসী। সকালবেলায় ঘুম ভাঙে দুর্গন্ধে, দিনের যাতায়াতও হয়ে উঠছে দুর্বিষহ অভিজ্ঞতা। প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ছয় হাজার টন বর্জ্য উৎপন্ন হয় এই শহরে। কিন্তু সঠিকভাবে অপসারণ না হওয়ায় তা জমে থেকে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করছে।
বিশেষ করে আমিনবাজার ও মাতুয়াইল ল্যান্ডফিল এলাকাগুলো এখন বর্জ্যের পাহাড়ে পরিণত হয়েছে। সেখানে নির্গত দুর্গন্ধে দীর্ঘ সময় শ্বাস নেওয়াই কষ্টকর হয়ে উঠেছে।
অকার্যকর ট্রান্সফার স্টেশন ও বাড়তি গন্ধ
রাজধানীতে বর্তমানে প্রায় ১১৮টি সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) রয়েছে, যেখানে সাময়িকভাবে গৃহস্থালি ও বাজার এলাকার বর্জ্য সংরক্ষণ করা হয়। তবে এসব কেন্দ্রের অধিকাংশই সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দুর্গন্ধের উৎসে পরিণত হয়েছে। মিরপুর, মোহাম্মদপুর, ধানমণ্ডি, কারওয়ানবাজার, যাত্রাবাড়ি ও পুরান ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ বাসিন্দারা।
স্থানীয় বাসিন্দা জাইদা খাতুন বলেন, আমাদের এলাকার ট্রান্সফার স্টেশনের পাশে হাঁটাও দায় হয়ে পড়েছে। তরল বর্জ্য রাস্তায় পড়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়ছে।
সিটি করপোরেশনের সীমাবদ্ধতা
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের চিফ ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট কর্মকর্তা জানান, জনসংখ্যা ও বর্জ্যের পরিমাণ দ্রুত বেড়ে যাওয়ায় পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনা বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রয়োজনীয় যানবাহন ও যন্ত্রপাতির অভাবে অনেক ক্ষেত্রে সময়মতো বর্জ্য অপসারণ সম্ভব হয় না।
উত্তর সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানান, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় জায়গার অভাব বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কেবল স্টেশন স্থাপন নয়- এসব স্থাপনার কার্যকারিতা নিশ্চিত করাই আসল বিষয়। অনেক স্টেশনে নেই তরল বর্জ্য ফিল্টারিং ব্যবস্থা, বাউন্ডারি ওয়াল বা স্যানিটারি কাঠামো। ফলে বর্জ্যের তরল অংশ রাস্তায় ছড়িয়ে ড্রেন ও খাল দূষিত করছে।
সম্প্রতি এক বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, দূষণ রোধে এখনই কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। দূষণকারীদের সেন্ট্রাল ইটিপি (বর্জ্য শোধনাগার)-এর আওতায় আনা, কিংবা প্রয়োজনে কিছু প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া-সব কটি বিকল্প নিয়েই কাজ করতে হবে। শুধু সরকারি নজরদারি যথেষ্ট নয়, শিল্পমালিকদেরও নিজেদের দায়িত্ব নিতে হবে। আমরা প্রায়ই শিল্পবর্জ্যের কথা বলি, কিন্তু এখনো কার্যকর পয়ঃবর্জ্য ও কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে পারিনি।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ব্যর্থ চক্র
সিটি করপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, দুই করপোরেশনের ১২৯টি ওয়ার্ড থেকে প্রতিদিন গড়ে ৬,৮০০ থেকে ৭,৫০০ মেট্রিক টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়। তবে এর ৫৫ শতাংশই সঠিকভাবে সংগ্রহ হয় না। ফলে বিপুল বর্জ্য খাল, নদী ও উন্মুক্ত স্থানে জমে থেকে জনস্বাস্থ্যের জন্য গুরুতর হুমকি তৈরি করছে।
ঢাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা চার ধাপে পরিচালিত হয় বাড়ি থেকে প্রাথমিক সংগ্রহ, এসটিএসে জমা, ট্রাকে করে ল্যান্ডফিলে পরিবহন এবং চূড়ান্ত নিষ্পত্তি। কিন্তু প্রতিটি ধাপেই দুর্বলতা স্পষ্ট। শেষ ধাপ অর্থাৎ পুনর্ব্যবহার ও নিষ্পত্তির ব্যবস্থা কার্যত নেই। শহরের বর্জ্য পরিশোধন প্ল্যান্টগুলোও অপর্যাপ্ত, ফলে অধিকাংশ বর্জ্য শেষ পর্যন্ত খোলা জায়গায় ফেলা হয়। তাদের প্রশিক্ষণ নেই, সুরক্ষা সরঞ্জাম নেই, গ্লাভস বা মাস্ক ছাড়াই তারা প্রতিদিন খালি হাতে কাজ করেন। এতে তারা নানা রোগের ঝুঁকিতে পড়ছেন।
পরিকল্পনা থাকলেও বাস্তবায়ন নেই
গত সাত বছরে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ব্যয় করেছে প্রায় ৩,৩২৩ কোটি টাকা। তবুও শহরজুড়ে রয়ে গেছে ২৫০টিরও বেশি অনিয়ন্ত্রিত ভাগাড়। ২০১৯ সালে তারা যৌথভাবে ১৫ বছর মেয়াদি ‘সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা মহাপরিকল্পনা’ গ্রহণ করেছিল। যার প্রতিপাদ্য ছিল ‘শূন্য বর্জ্যের পথে।’ এতে Reduce, Reuse, Recycle (থ্রি আর) নীতি বাস্তবায়ন, ল্যান্ডফিলের আয়ু বৃদ্ধি, ওয়ার্ডভিত্তিক ব্যবস্থাপনা ও ‘ইকো-টাউন’ গঠনের পরিকল্পনা ছিল।
তবে উত্তর সিটি করপোরেশন সেই পরিকল্পনা থেকে সরে গিয়ে চীনের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রতিদিন ৩ হাজার টন বর্জ্য পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রকল্প নেয়। কিন্তু ঢাকার বর্জ্যের ক্যালোরিফিক ভ্যালু মাত্র ৬০০ কিলোক্যালরি, যা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন কার্যত অসম্ভব।
আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতাও বলে, এ ধরনের প্রকল্প অর্থনৈতিকভাবে অকার্যকর ও পরিবেশগতভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। অন্যদিকে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মহাপরিকল্পনার দিকেই এগিয়েছে। তারা মাতুয়াইল ল্যান্ডফিল সম্প্রসারণ ও আধুনিক স্যানিটারি ল্যান্ডফিল নির্মাণে ১,৫৪৪ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে, যা কিছুটা হলেও টেকসই ব্যবস্থাপনার দিকে অগ্রগতির ইঙ্গিত দেয়।
২০২৫ সালের ২১ অক্টোবর আন্তর্জাতিক সাময়িকী ‘সায়েন্টিফিক রিপোর্টস’-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকা শহরে প্রতিদিন গড়ে ৬ হাজার ৪৬৫ টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এর মধ্যে প্রায় ৪ হাজার ৭০০ টন বর্জ্য সরাসরি আমিনবাজার ও মাতুয়াইল ল্যান্ডফিলে ফেলা হয়। এই দুই স্থানই ইতোমধ্যেই প্রায় পূর্ণ হয়ে গেছে, ফলে নতুন বর্জ্যের জন্য জায়গা পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গবেষণায় আরও জানা যায়, রাজধানীর প্রতিজন নাগরিক প্রতিদিন গড়ে ০.৬১ কেজি বর্জ্য তৈরি করে। এসব বর্জ্যের প্রায় ৮৫ শতাংশই খাদ্য ও সবজির জৈব বর্জ্য, যা কম্পোস্টিংয়ের মাধ্যমে পুনঃব্যবহারযোগ্য।
গবেষণার বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, এই বিপুল জৈব বর্জ্য যদি কম্পোস্টিং প্রক্রিয়ায় রূপান্তর করা যায়, তবে তা শুধু জমি সাশ্রয়ই করবে না, বরং কৃষিতে পরিবেশবান্ধব জৈব সার উৎপাদনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনাও গবেষণায় বিবেচনা করা হয়েছে।
ইনসিনারেশনের মাধ্যমে বছরে সর্বাধিক প্রায় ৫৭৩ গিগাওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা সম্ভব, যা ঢাকার মোট বিদ্যুৎ চাহিদার মাত্র চার থেকে পাঁচ শতাংশ।
গবেষণায় বর্তমান ল্যান্ডফিল পদ্ধতিকে ঢাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রধান সংকট হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ল্যান্ডফিলে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বর্জ্য ফেলার ফলে জমি দ্রুত নষ্ট হচ্ছে, মাটি ও ভূগর্ভস্থ পানিতে মিশছে বিষাক্ত পদার্থ, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছে। এছাড়া, এসব বর্জ্য থেকে নির্গত মিথেন ও অন্যান্য গ্যাস জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবও বাড়িয়ে তুলছে।
গবেষক দল জানিয়েছে, জৈব বর্জ্য কম্পোস্টিং ও অবশিষ্ট বর্জ্য ইনসিনারেশনের মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাত করলে পরিবেশগত ক্ষতি ৫০ শতাংশেরও বেশি কমানো সম্ভব। পাশাপাশি, ল্যান্ডফিলের ওপর নির্ভরশীলতা কমবে এবং শহরের জমি ব্যবহারের চাপ কমবে।
ঢাকার বর্তমান ল্যান্ডফিল পদ্ধতি কেবল পরিবেশের ক্ষতিই করছে না, বরং মানুষের স্বাস্থ্যের ওপরও দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলছে। বর্জ্য সংগ্রহ ও পরিবহনে যুক্ত শ্রমিকরা পর্যাপ্ত সুরক্ষা পান না। ফলে তারা নানা জীবাণু ও গ্যাসের সংস্পর্শে থেকে শ্বাসকষ্ট ও ত্বকের রোগে ভোগেন। বর্তমান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ঢাকায় শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা, ক্যানসার এবং অন্যান্য রোগ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হতে পারে।
গবেষণাটি প্রকাশনাটি প্রকাশ করেন বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. রওশন মামতাজ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব নেভাদা, রেনোর গবেষক শায়েক মোহাম্মদ জোয়ার্দার।
গবেষক শায়েক মোহাম্মদ জোয়ার্দার বলেন, ‘বর্তমানে যেভাবে সব বর্জ্য একসঙ্গে ল্যান্ডফিলে পাঠানো হচ্ছে, তা শুধু জমির অপচয় নয়, বরং পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্যও বিপজ্জনক। আমরা দেখতে পেয়েছি, যদি জৈব বর্জ্যকে আলাদা করে প্রক্রিয়াজাত করা যায় এবং অবশিষ্ট বর্জ্যকে ইনসিনারেশনের মাধ্যমে ব্যবহারের উপযোগী করা যায়, তাহলে ঢাকার বর্জ্য সমস্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। যে মডেলে ৭৫ শতাংশ বর্জ্য কম্পোস্টিং এবং প্রায় ৯ শতাংশ ইনসিনারেশনের মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। যদি আমরা এখনই পরিবর্তন না আনি, তাহলে কয়েক বছরের মধ্যে জমি সংকট ও পরিবেশ দূষণ অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠবে।’
বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক রওশন মামতাজ বলেন, ‘আমরা বিশ্লেষণ করে দেখেছি, কম্পোস্টিং এবং ইনসিনারেশনের ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবহার ঢাকার জন্য সবচেয়ে বাস্তবসম্মত পথ। শুধু ল্যান্ডফিলের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে। কারণ এই পদ্ধতিতে জমি দ্রুত শেষ হয়ে যায় এবং তাতে জমা হয় বিষাক্ত পদার্থ। ঢাকার মতো শহরে জমি একবার নষ্ট হলে তা আর পুনরুদ্ধার করা যায় না। আমাদের গবেষণার ফল দেখাচ্ছে, যদি বর্জ্যের তিন-চতুর্থাংশ কম্পোস্ট করা যায়, তাহলে পরিবেশগত দূষণ অর্ধেকেরও বেশি কমে যাবে। একই সঙ্গে এই প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন সার কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহার করলে রাসায়নিক সারের ওপর নির্ভরশীলতা কমানো সম্ভব।’
অধ্যাপক মামতাজ বলেন, ‘আমরা প্রায়ই দেখি, শহরের পরিষ্কারকর্মীরা কোনো গ্লাভস বা মাস্ক ছাড়াই বর্জ্য সংগ্রহ করছেন। এই মানুষগুলোই প্রথম সারিতে থেকে শহরকে পরিষ্কার রাখছে, অথচ তারাই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে। তাই শুধু প্রযুক্তিগত উন্নয়ন নয়, মানবিক দিক থেকেও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নতুন চিন্তা দরকার। বর্জ্য কোনো বোঝা নয়, সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করা গেলে এটিই হতে পারে সম্পদ। ঢাকার বর্জ্য থেকেই আমরা সার, শক্তি এবং টেকসই ভবিষ্যৎ সবকিছুই পেতে পারি। এখন প্রয়োজন কেবল রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও পরিকল্পিত বাস্তবায়ন।’
তারা বলেন, ঢাকায় বিদ্যমান ল্যান্ডফিল পদ্ধতিতে জমির ব্যবহার অত্যন্ত বেশি। এই অবস্থায় কম্পোস্টিং প্রক্রিয়া প্রয়োগ করলে জমির ব্যবহার প্রায় ৭৮ শতাংশ পর্যন্ত কমানো সম্ভব। ইনসিনারেশন পদ্ধতিতেও প্রাথমিকভাবে জমির চাহিদা কমে যায়, তবে ছাই ও অবশিষ্টাংশ জমে থাকায় দীর্ঘমেয়াদে আবার জমি প্রয়োজন হয়।
শ্যামলী ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট টিবি হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার বলেন, ‘বর্তমানে বায়ুদূষণ মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠেছে। শিল্পকারখানার ধোঁয়া, যানবাহনের নির্গমন, ঘরের এসি ও ফ্রিজ থেকে নির্গত গ্যাস, বর্জ্য এমনকি ধূমপানের ধোঁয়া-সব মিলেই বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও ক্ষতিকর কার্বন কণার পরিমাণ ভয়াবহভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই কণা শ্বাসের সঙ্গে শরীরে প্রবেশ করে শ্বাসতন্ত্র, হৃদযন্ত্র, কিডনি ও অন্যান্য অঙ্গের ক্ষতি করছে।’
তিনি জানান, ‘দূষণ শুধু মানুষের নয়, প্রাণীকূলেরও ক্ষতি করছে। এ অবস্থা থেকে বের হতে হলে ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ জরুরি। বেশি করে গাছ লাগানো, শহর পরিষ্কার রাখা, যেখানে সেখানে বর্জ্য না ফেলা, শিল্পকারখানাগুলো আবাসিক এলাকা থেকে দূরে স্থাপন কররত হবে। এছাড়া, সিটি করপোরেশন, পরিবেশ অধিদফতরসহ সব সংস্থাকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। বর্তমানে অসংক্রামক রোগ বাড়ছে, কিন্তু এ নিয়ে পর্যাপ্ত কাজ হচ্ছে না। এখনই ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে বিপর্যয় আরও বাড়বে। সবচেয়ে বড় কথা হলো জনগণের সচেতনতা বাড়াতে হবে।’
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এস. এম. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের কোনো গাড়ি রাস্তার পাশে ময়লা ফেলে না। আমাদের যাচাই কম দেখেছি, মহাসড়কে সাভার পৌরসভাই ময়লা ফেলছে। আমরা তাদেরকে মৌখিকভাবে সতর্ক করেছি, এখন লিখিত নোটিশ পাঠানো হবে এবং জরিমানা করা হবে।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট কর্মকর্তা এয়ার কমডোর মো. মাহাবুবুর রহমান তালুকদার বলেন, ‘ঢাকায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে জনবলই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিটি এলাকার পরিমাণ অনুযায়ী সঠিকভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ চালাতে হলে অন্তত ৭ হাজারের বেশি পরিচ্ছন্নতা কর্মী প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমানে তাদের হাতে আছে মাত্র ৪,৭০০ কর্মী-যা প্রয়োজনের তুলনায় প্রায় আড়াই হাজার কম। প্রতিটি নতুন ওয়ার্ডে অন্তত ৩০০ থেকে ৪৫০ জন জনবল থাকা প্রয়োজন, কিন্তু আমরা সেখানে মাত্র ১৭-১৮ জন করে দিতে পেরেছি। এভাবে টেকসই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা কঠিন। নতুন জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত পর্যাপ্ত জনবল ও আধুনিক যন্ত্রপাতি না আসে, ততক্ষণ আদর্শ স্মার্ট ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট চালু করা বাস্তবে কঠিন।’
স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি যাতে জনগণের স্বাস্থ্যের কোনো হুমকি না তৈরি হয়। কোথাও অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছি। লক্ষ্য হলো ময়লা রাস্তায় বা খোলা জায়গায় ২৪ ঘণ্টার বেশি যেন না থাকে। জনবল বাড়লে কাজ আরও দ্রুত এবং সুন্দরভাবে করা সম্ভব হবে। আমরা যখনই যে কমপ্লেনটা পাচ্ছি সমাধানের চেষ্টা করছি।’
এএইচ/এমআর