images

রাজনীতি

‘অবৈধ’ সংসদের যেসব সুবিধা নিয়েছেন বিএনপির এমপিরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৪ ডিসেম্বর ২০২২, ১০:১৮ এএম

বিএনপির ৬ জন সংসদ সদস্য গত ১১ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর ওই ছয়টি আসন শূন্য ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করেছে সংসদ সচিবালয়। এর পরপরই আলোচনায় এসেছে, চার বছর ধরে যে সংসদকে তারা ‘অবৈধ’ বলে এসেছেন, সেই সংসদ থেকে নেওয়া সুযোগ-সুবিধাগুলোর কি হবে।

ইতোমধ্যে জাতীয় সংসদের সদস্য থাকাকালে বিএনপির সংসদ সদস্যরা কী কী সুবিধা নিয়েছেন তা জানতে চেয়ে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।

সংসদ সচিবালয়ের সচিব, অর্থ সচিব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ সংশ্লিষ্টদের এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে। আগামী সাত দিনের মধ্যে বিএনপির এমপিরা রাষ্ট্র থেকে যেসব সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন তা জানাতে বলা হয়েছে। অন্যথায় আইনিব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: সংসদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা বিএনপির এমপিদের

নোটিশে বলা হয়, জনগণ তাদের পাঁচ বছরের জন্য ভোট দিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করেছেন। আর এই পাঁচ বছরে জনগণকে সেবা দেওয়ার জন্যই তারা শপথ নিয়েছেন। অথচ পাঁচ বছর পূর্ণ না করে, জনগণকে সেবা না দিয়ে রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করা বেআইনি।

২০১৮ সালে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি। তবে নির্বাচনের দিনই ফলাফল বর্জন করে এবং পরবর্তীতে সংসদকে ‘অবৈধ’ আখ্যা দেয় দলটি। কিন্তু সেই সংসদেই এমপি হিসেবে শপথগ্রহণ করে বিএনপির ৭ জন।

বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, সংসদ সদস্যদের মাসিক বেতন ৫৫ হাজার টাকা। তারা প্রতি মাসে নির্বাচনি এলাকার ভাতা ১২ হাজার ৫০০ টাকা, সম্মানী-ভাতা ৫ হাজার টাকা, পরিবহন ভাতা ৭০ হাজার টাকা, নির্বাচনি এলাকায় অফিস খরচ ১৫ হাজার টাকা, লন্ড্রি-ভাতা এক হাজার ৫০০ টাকা, ক্রোকারিজ ও টয়লেট্রিজ খরচ ৬ হাজার টাকা এবং ৭ হাজার ৮০০ টাকা টেলিফোন ভাতা পেয়ে থাকেন। এ ছাড়া দেশের অভ্যন্তরে বার্ষিক ভ্রমণ খরচ ১ লাখ ২০ হাজার টাকা ও স্বেচ্ছাধীন তহবিল বার্ষিক ৫ লাখ টাকা পেয়ে থাকেন।

একাধিক তথ্য ও সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, এর বাইরেও সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্তভাবে গাড়ি আমদানির সুবিধা রয়েছে। বিএনপির ৭ সংসদ সদস্যের সবাই শুল্কমুক্ত গাড়ির সুবিধা নিয়েছেন। আগে সংসদ সদস্যদের জন্য রাজধানীতে প্লট বরাদ্দের রেওয়াজ থাকলেও রাজউকের প্লট খালি না থাকায় চলতি সংসদে তা বন্ধ রয়েছে।

তবে সরকারকে ‘অবৈধ’ বলার পরও রাজধানীর পূর্বাচলে ১০ কাঠার একটি প্লট চেয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী বরাবর আবেদন করেছিলেন বিএনপির সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। যদিও পরে ব্যাপক সমালোচনার মুখে সেই আবেদনপত্রটি প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন রুমিন ফারহানা।

bnp-mpএছাড়া সংসদ সদস্যদের জন্য সংসদ ভবন এলাকায় অবস্থিত এমপি হোস্টেল বিএনপির ৭ সংসদ সদস্যই ফ্ল্যাট বরাদ্দ নিয়েছেন।

অন্যদিকে জোট সরকারের সময় ২০০৫ সালে বিএনপির হারুনুর রশীদ সংসদ সদস্য হিসেবে শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির এক সপ্তাহ পরই তিনি তা বিক্রি করে দেন। শুল্কমুক্ত গাড়ি এনে তা বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ মামলায় হারুনুর রশীদকে ৫ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছিলেন আদালত। ২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম এ রায় ঘোষণা করেন।

এদিকে সংসদকে ‘অবৈধ’ বললেও চার বছর ধরে সংসদ সদস্য হিসেবে নেওয়া সুযোগ-সুবিধা অনৈতিক হয়নি বলে দাবি করেছেন রুমিন ফারহানা।

সংসদ থেকে পদত্যাগ করায় বেতন-ভাতা ফেরত দেবেন কি না- সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বেতন-ভাতা নিয়েছি, এর বিনিময়ে আমরা কাজ করেছি। তাই এটা ফেরত দেওয়ার কোনো প্রশ্ন উঠতে পারে না।

আরও পড়ুন: স্পিকারকে পদত্যাগপত্র দিয়েছেন বিএনপির এমপিরা

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের বিএনপির পদত্যাগী এমপি আমিনুল ইসলামও গণমাধ্যমকে বলেছেন, সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সময় আইন অনুযায়ী সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করা অনৈতিক হতে পারে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ ও আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ বলেছেন, সংসদকে ‘অবৈধ’ দাবি করার পরও সংসদ সদস্য হিসেবে সব সুযোগ-সুবিধা নেওয়া কতটা নৈতিক সেই প্রশ্ন যে কেউই তুলতে পারেন। কারণ ‘অবৈধ’ দাবি করার পরও সুবিধা গ্রহণ করাটা অনৈতিক। এ জন্য জনগণের কাছে তাদের জবাবদিহি করতে হবে। তবে আইন অনুযায়ী তিনি সব সুযোগ-সুবিধাই পাবেন। আর সংবিধান অনুযায়ী পদত্যাগ করার এখতিয়ার রয়েছে যেকোনো সংসদ সদস্যের।

ডব্লিউএইচ/জেএম