images

রাজনীতি

কার্যালয়ে আসছেন হাসিমুখে, ফেরার পথে আতঙ্ক!

বোরহান উদ্দিন

০৭ ডিসেম্বর ২০২২, ০২:২৮ পিএম

বিএনপির সমাবেশের স্থান নিয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। অনানুষ্ঠানিকভাবে নয়াপল্টনে নেতাকর্মীদের আসার নির্দেশনা থাকলেও নির্দিষ্ট করে কিছু বলা হয়নি দলের পক্ষ থেকে। তবে আপাতত সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু নয়াপল্টন কার্যালয়। তাই সকাল থেকে দিনভর নেতাকর্মীদের আসা-যাওয়ায় মুখরিত থাকছে রাজধানীর নয়াপল্টন।

যারা আসছেন তাদের সবার চোখেমুখে অনেকটা তৃপ্তির হাসি দেখা গেলেও বের হওয়ার সময় আতঙ্ক দেখা গেছে। কারণ হিসেবে নেতাকর্মীরা বলছেন, কার্যালয়ের বাইরে পোশাকধারী ও সাদা পোশাকের পুলিশের হাতে যেকোনো সময় আটক হতে পারেন।

ইতোমধ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনিকে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) রাতে পল্টন থানা ছাত্রদলের এক নেতাকে ডিবি পুলিশ গ্রেফতারের চেষ্টা করেছে। এতে আতঙ্ক আরও বেড়েছে।

আরও পড়ুন: সমাবেশের আগে বিএনপির অবস্থানের আশায় গুড়েবালি!

মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) রাতে নয়াপল্টন ঘুরে নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। যদিও দিনভর নেতাকর্মীরা কার্যালয়ের সামনে ট্রাকে রাখা মাইকে স্লোগানে মুখরিত করে রাখেন গোটা এলাকা। রাতে অনেকটা শান্ত হয়ে যায় নয়াপল্টন। কমতে থাকে নেতাকর্মীদের ভিড়। বুধবার (৭ ডিসেম্বর) সকাল থেকে আবার ভিড় বাড়তে থাকে নয়াপল্টনে।

রাত নয়টার দিকে কেরানীগঞ্জ থেকে আসা বিএনপির একজন ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতার সঙ্গে কথা হয় কার্যালয়ের তৃতীয় তলায়। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের অনুসারী তিনি।

ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, 'পার্টি অফিসে এলে গ্রেফতারও হইতে পারি এটা জানি সবাই। এরপরও আসছি অনেকের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হইতেছে। সবাই এক জায়গায় থাকলে সাহস পাওয়া যায়।'

polton2

তৃণমূলের এই নেতার সঙ্গে যখন কথা হয় তখন তৃতীয় তলার মহাসচিবের পাশের রুমে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে ছিলেন বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমান, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও আমিনুল হক।

খানিক সময় অপেক্ষার পর রুমে ঢুকে কথা হয় বিএনপির এই তিন নেতার সঙ্গে। একজন বলেন, 'আমাদের সবকিছু চূড়ান্ত। সরকার কী করবে সে সিদ্ধান্ত তাদের, আমরা সমাবেশ করবো এটা ফাইনাল।'

সব বিভাগে সমাবেশ হলেও ঢাকার সমাবেশ নিয়ে সার্বিকভাবে কোনো চাপ অনুভব করছেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘চাপের কিছু নেই। রাজনীতি করলে সে পথ একদম সহজ-সরল হবে এমনটা ভাবার কারণ নেই। এতটুকু আপনাকে বলতে পারি, শনিবার একদম শান্তিপূর্ণ ও সফল সমাবেশ হবে।'

আরও পড়ুন: গাড়ি ভরে পানি আসছে পল্টন কার্যালয়ে, নিচতলায় রান্নার আয়োজন

তৃতীয় তলায় ঘুরে দফতরের লোকজন ছাড়াও কার্যালয়ে প্রায় শ' খানেক নেতাকর্মীর দেখা মেলে। যাদের মধ্যে ঢাকার বাইরে থেকে আসা লোকজনও আছেন।

সাইফুল ইসলাম নামে একজন ছাত্রদল কর্মী কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে এসেছেন বলে ঢাকা মেইলকে জানান। তিনি বলেন, 'বাস বন্ধ করে দিতে পারে এই ভয়ে আগেভাগে এসেছি। পরিস্থিতি যাই হোক, সমাবেশ শেষ করে বাড়ি যাবো।'

এর আগে কার্যালয়ের ঢোকার পথে দেখা যায়, পিকআপভর্তি পানি সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে একে একে ভেতরে নিয়ে যাচ্ছেন নেতাকর্মীরা। তবে তাদের চোখেমুখে ক্লান্তির কোনো ছাপ দেখা যায়নি।

পুষ্টি কোম্পানির পানি নিয়ে আসা একজন কর্মী ঢাকা মেইলকে বলেন, '২৪ পিসের একেক কেসে এক ট্রিপে ১০ হাজার বোতলের মতো পানি আসছে। যতদূর জানি লাখখানেক বোতল পানির অর্ডার আছে।'

এত পানি কেন আনা হচ্ছে- জানতে চাইলে পাশে দাঁড়ানো বিএনপি কার্যালয়ের একজন কর্মী বলেন, 'এত মানুষ আসবে তাদের অন্তত এক বোতল পানি তো দিতে হবে। দেখা গেল পরে সব দোকানপাট বন্ধ করে দিলো।'

polton3

এসময় মহিলা দলের কেন্দ্রীয় ক্রীড়া সম্পাদক নীলুফা ইয়াসমীন নীলুকে কয়েকজনসহ কার্যালয় থেকে বের হতে দেখা যায়। কার্যালয়ের মূল ফটকে দাঁড়িয়ে ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, 'সারাদিন পার্টি অফিসে ছিলাম। এখন বাসায় যাচ্ছি। আবার আসবো। যতই ভয় দেখানোর চেষ্টা করুক নয়াপল্টন ছাড়বো না। দলের নির্দেশ এবার রাজপথে ফয়সালা হবে।'

এদিকে রাত দশটার দিকে দেখা গেছে, বিএনপি কার্যালয়ের পাশের হোটেল ভিক্টোরির সামনে একদল পুলিশ সদস্য সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছেন। এসময় পুলিশের মতিঝিল জোনের একজন কর্মকর্তাকে অধীনস্থদের বেশ কিছু নির্দেশনা দিতেও দেখা যায়।

আরও পড়ুন: বিএনপির সমাবেশ ঘিরে আবাসিক হোটেলে কড়াকড়ি

রাত দশটার পর বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমান, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী ও আমিনুল হক একসঙ্গে কার্যালয় ছাড়েন। তারা বের হওয়ার আগে সঙ্গে থাকা কর্মীদের দ্রুত গাড়ি প্রস্তুত করার নির্দেশনা দিতে দেখা যায়। পরে একসঙ্গে দ্রুত তিনজন বের হয়ে যান।

তবে কার্যালয়ের তিন তলায় নিজের রুমে অবস্থান করছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদ, আন্দোলনে নেতাকর্মী নিহত হওয়ার বিচার দাবি ও দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিভাগীয় সমাবেশ করেছে বিএনপি। চট্টগ্রাম দিয়ে শুরু করে ইতোমধ্যে সব বিভাগে কর্মসূচি শেষ করলেও এখন ঢাকার সমাবেশ বাকি। আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকার সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এ পর্যায়ের কর্মসূচি।

বিইউ/জেবি