images

রাজনীতি

যে কারণে ঢাকা-১৭ থেকেও নির্বাচন করছেন তারেক রহমান

বোরহান উদ্দিন

২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:৩৭ পিএম

যুক্তরাজ্যে ১৭ বছর নির্বাসিত জীবন কাটানোর পর দেশে ফিরেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। নিজভূমে ফিরেই সরাসরি নির্বাচনী লড়াইয়ে নামতে যাচ্ছেন তিনি। জীবনের প্রথমবারের মতো নির্বাচনে অংশ নিতে যাওয়া তারেক রহমান ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে একাধিক আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। কয়েকদিন আগে বগুড়া-৬ আসন থেকে তার পক্ষ থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন নেতাকর্মীরা। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ও ‘এলিট’ আসন হিসেবে পরিচিত ঢাকা-১৭ থেকেও তিনি ভোটে অংশ নিতে পারেন বলে গুঞ্জন ছিল। এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে তৈরি হয়েছিল নতুন কৌতূহল ও সমীকরণ। কারণ আসনটি থেকে বিএনপির দীর্ঘদিনের মিত্র বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিভ রহমান পার্থ নির্বাচন করবেন তা অনেকটা নিশ্চিত ছিল। বিএনপি তাকে ছেড়ে দেবে সেই আলোচনাও ছিল।

কয়েকদিন ধরে এমন গুঞ্জন থাকলেও শেষ পর্যন্ত রোববার (২৮ ডিসেম্বর) সকালে তারেক রহমানের হয়ে ঢাকা-১৭ আসন থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়। সেক্ষেত্রে আন্দালিভ রহমান পার্থ ভোলায় তার বাবার আসন থেকে নির্বাচন করলে তাকে ওই আসন ছেড়ে দেবে বিএনপি।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, তারেক রহমান বগুড়া-৬ আসনের পাশাপাশি ঢাকা-১৭ আসন থেকেও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। ফলে পার্থকে ভোলা-১ আসন ছেড়ে দেবে বিএনপি।

ভোলা-১ আসনে বিএনপি এরই মধ্যে জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম নবী আলমগীরকে প্রাথমিক প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছিল। তবে সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এই আসনে বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থের বিপরীতে বিএনপি কোনো প্রার্থী রাখবে না।

তারেক রহমানকে ঢাকা-১৭ আসনের প্রার্থী করার আলোচনা যেভাবে

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার তারেক রহমান দেশে ফেরার আগে সবশেষ ভার্চুয়াল বৈঠকে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের পক্ষ থেকে তাকে ঢাকা-১৭ আসনে নির্বাচনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। তিনি এই প্রস্তাব ভেবে দেখার কথা বলেন। 

বিশেষ করে নির্বাচনের মাঠে প্রার্থী হিসেবে তার প্রচারণায় অংশ নেওয়া, বাসা, দলীয় কার্যালয় ঘিরে গুলশানকেন্দ্রিক বেশি সময় কাটাতে হবে। একইসঙ্গে তার নিরাপত্তার বিষয়টিও বড় গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করে এমন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল বলে জানা গেছে।

কারণ বগুড়া বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। ফলে সেখানে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তারেক রহমানের কাজটি স্থানীয় নেতাকর্মীরা সারতে পারবেন। তবে ঢাকার গুলশান-বনানী, ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় প্রার্থী হলে তারেক রহমানের প্রচারণা করার জন্যও অনেকটা সুবিধা হবে।

এখনো সমঝোতা হয়নি বিএনপি-বিজেপির

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মিত্রদের সঙ্গে আসন সমঝোতা অনেকটা গুছিয়ে এনেছে বিএনপি। তবে এখনো বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) মধ্যে আনুষ্ঠানিক কোনো নির্বাচনী সমঝোতা হয়নি। বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থ ঢাকা-১৭ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছেন। এই এলাকায় প্রচার প্রচারণাও চালিয়েছেন তিনি। তবে শেষ মুহুর্তে এই আসনেও তারেক রহমানের প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ায় এটি হয়েছে বিএনপির ‘নতুন চমক’।

এরই মধ্যে শনিবার রাজধানীর গুলশান এলাকার নিজ বাসার ঠিকানায় ভোটার হওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন তারেক রহমান। এরপর থেকেই ঢাকা-১৭ আসনে তার প্রার্থিতা নিয়ে আলোচনা জোরালো হয়।

বিএনপির একজন দায়িত্বশীল নেতা ঢাকা মেইলকে জানান, আন্দালিভ রহমান পার্থকে ভোলা সদর আসনটি ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণভাবে বিএনপির দলীয় ফোরামের ওপর নির্ভর করছে। এক-দুই দিনের মধ্যেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

অন্যদিকে আন্দালিভ রহমান পার্থ স্পষ্টভাবে বলেছেন, বিএনপিতে যোগ দেওয়ার বিষয়ে তার সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি। তিনি নিজ দল বিজেপির প্রতীক নিয়েই নির্বাচনে অংশ নেবেন।

এ বিষয়ে আন্দালিভ রহমান পার্থ ঢাকা মেইলকে বলেন, নির্বাচন নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার পর এ বিষয়ে কথা বলব।

প্রথমবার সরাসরি নির্বাচনে তারেক রহমান

দীর্ঘ ১৭ বছর দেশের বাইরে থাকা তারেক রহমান এবারই প্রথমবারের মতো সরাসরি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। যদিও দীর্ঘদিন ধরে তিনি দল পরিচালনা ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন, তবে কখনোই সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হননি।

গত ৩ নভেম্বর বিএনপি প্রথম দফায় ২৩৭ আসনের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে। সেখানে দলের ‘ঘাঁটি’ হিসেবে পরিচিত বগুড়া-৬ (সদর) আসনে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান থেকে তারেক রহমানকে প্রার্থী করা হয়। এর মাধ্যমে তিনি প্রথমবার সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হন। ইতোমধ্যে স্থানীয় নেতাকর্মীরা তার পক্ষে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।

এক-এগারো পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৮ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা হলেও সে সময় বিদেশে অবস্থান করায় তারেক রহমান ভোটার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেননি। ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর কারামুক্ত হয়ে তিনি লন্ডনে যান এবং এরপর আর দেশে ফেরেননি। ফলে দীর্ঘদিন ভোটার তালিকার বাইরেই ছিলেন তিনি। দেশে ফেরার পর শনিবার তিনি ভোটার হতে জাতীয় পরিচয়পত্র পেতে নিবন্ধন করেছেন।

বগুড়া-৬: বিএনপির ঐতিহ্যবাহী দুর্গ

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান বগুড়া-৬ আসন বিএনপির জন্য ঐতিহাসিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৯১ সাল থেকে বগুড়া-৭ এবং ১৯৯৬ (জুন) সাল থেকে বগুড়া-৬ আসনে নির্বাচন করেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এই দুই আসনে তিনি কখনো পরাজিত হননি।

১৯৯৬ সালে (জুন) নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে খালেদা জিয়া আসনটি ছেড়ে দিলে উপ-নির্বাচনে জয় পান বিএনপির জহুরুল ইসলাম। ২০০১ ও ২০০৮ সালেও এই আসন থেকে বিপুল ভোটে জয়ী হন খালেদা জিয়া। ২০০৮ সালের উপ-নির্বাচনে নির্বাচিত হন ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার।

২০১৪ সালের নির্বাচন বিএনপি বর্জন করে। ২০১৮ সালে খালেদা জিয়া দণ্ডিত হওয়ায় প্রার্থী হতে না পারলে বিএনপির পক্ষে লড়েন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি জয়ী হলেও শপথ নেননি। পরবর্তী উপ-নির্বাচনে গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ ধানের শীষ প্রতীকে জয়ী হন। ২০২৪ সালের নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি। এবার সেই ঐতিহ্যবাহী বগুড়া-৬ আসনের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা-১৭ আসন।

বিইউ/এমআর