নিজস্ব প্রতিবেদক
২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:৩১ পিএম
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন মীর আরশাদুল হক। সেই সাথে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকালে তার ফেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে তিনি পদত্যাগের ঘোষণা করেন।
মীর আরশাদুল হক লিখেছেন, ‘আমি মীর আরশাদুল হক জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব, নির্বাহী কাউন্সিলের সদস্য, মিডিয়া সেল ও শৃঙ্খলা কমিটির সদস্য, পরিবেশ সেলের প্রধান এবং চট্টগ্রাম মহানগরের প্রধান সমন্বয়কারীসহ অন্যান্য সব দায়িত্ব ও পদ থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিচ্ছি৷ আমি এই মুহূর্তে এনসিপি থেকে পদত্যাগ করলাম৷ চট্টগ্রাম-১৬ সংসদীয় আসনে (বাঁশখালী) এনসিপির হয়ে আমি নির্বাচন করছি না।’
তিনি বলেন, ‘আজকে একটি বিশেষ দিনে এই ঘোষণাটি দিচ্ছি, যেদিন দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসন শেষে দেশে ফিরলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সুস্বাগতম।’
মীর আরশাদুল হক বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের প্রতিশ্রুতি নিয়ে এনসিপির যাত্রা শুরু হয়েছিল৷ কিন্তু এনসিপির প্রতিষ্ঠা থেকে এখন পর্যন্ত গত ১০ মাসের অভিজ্ঞতায় আমার কাছে প্রতীয়মান হয়েছে যে এই দল ও দলের নেতারা সে প্রতিশ্রুতি রক্ষার্থে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন৷ যে স্বপ্ন ও সম্ভাবনা দেখে এনসিপিতে যোগ দিয়েছিলাম, তার কিছুই আর অবশিষ্ট নেই৷ দল ও বড় অংশের নেতারা ভুল পথে আছেন বলেই মনে করি আমি। এই ভুল পথে আমি চলতে পারি না। এই মুহূর্ত থেকে এনসিপির সাথে আমার কোনো রাজনৈতিক সম্পর্ক নেই৷ তবে ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকবে৷ তাদের প্রতি শুভকামনা রইল৷’
তিনি বলেন, ‘২০২৪ সালের ৫ আগস্ট স্বৈরাচারের পতন ও পলায়নের দিন আমি এতোই অভিভূত হয়েছিলাম যে মনে হয়েছিল এবার নতুন একটি বাংলাদেশ হবে৷ যেখানে মানুষের ন্যূনতম অধিকার ও মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হবে৷ কিন্তু বাস্তবে হয়েছে তার বিপরীত৷ জুলাই অভ্যুত্থানের ১৪০০ অধিক শহীদ, হাজার-হাজার আহত এবং এত আত্মত্যাগের পরও একটা শান্তিপূর্ণ ও ন্যায্যতার বাংলাদেশ দেখতে পাইনি৷ এনসিপিও এক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে৷’
মীর আরশাদুল হক বলেন, ‘অস্থিরতা তৈরি করা, পবিত্র ধর্ম ইসলামকে ব্যবহার করে সমাজে বিভাজন তৈরি করা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টির একটি প্রবণতা বর্তমানে বাংলাদেশে লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ একটা গোষ্ঠী বা চক্র নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য দেশকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিতে চাচ্ছে৷ এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি প্রয়োজন হচ্ছে গণতন্ত্রে উত্তরণ এবং বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করা৷’
তিনি বলেন, ‘প্রয়োজন আগামী দিনের কথা মাথায় রেখে রাজনৈতিক সচেতন, উন্নত ও প্রগ্রেসিভ চিন্তার নতুন তরুণ নেতা, নতুন উদ্যোগ ও বর্তমান বাংলাদেশপন্থী দলগুলোকে সংগঠিত করা, শক্তিশালী করা।’
তিনি আরও বলেন, দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি দায় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রজীবনের শুরু থেকেই আমি সচেতনভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক তৎপরতার সাথে যুক্ত ছিলাম৷ বহুবার আক্রমণ নির্যাতনের শিকার হয়েছি। যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সবসময় আমার প্রথম অগ্রাধিকার ছিল বাংলাদেশ ও এ দেশের মানুষের স্বার্থ৷ দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে আমার কাছে মনে হচ্ছে, তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি ও জোটের সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করার কোনো বিকল্প নেই৷ জুলাই অভ্যুত্থান ও পরবর্তী সময়ে তারেক রহমানের বিভিন্ন কার্যক্রম ও বক্তব্য পর্যালোচনা করে আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, এই মুহূর্তে সবাইকে ধারণ করে দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার দক্ষতা ও সক্ষমতা তিনিই রাখেন৷
মীর আরশাদুল হক বলেন, ‘যখন অন্যান্য দল ধর্ম ও পপুলিজমকে প্রধান অ্যাজেন্ডা করে নির্বাচনি বৈতরণি পার হতে চাচ্ছে, তখন তারেক রহমান স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবেশসহ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে একটি ক্লিয়ার ভিশন জাতির সামনে উপস্থাপন করছেন৷ আগামী দিনে জনগণের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবেশ, সংস্কৃতি, কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন খাতভিত্তিক সুনির্দিষ্ট ও বাস্তবসম্মত সমাধানের কথাও তিনি বলছেন৷ এই স্মার্ট অ্যাপ্রোচ আমাকে আকৃষ্ট করেছে৷’
তিনি লিখেছেন, ‘তরুণদের উচিত হবে পপুলিজম বা কোনো হুজুগে প্রভাবিত না হয়ে দেশের সামগ্রিক স্বার্থ, ভবিষ্যৎ ও কল্যাণের কথা বিবেচনা করে তারেক রহমানের জনকল্যাণমূলক ভিশন বাস্তবায়নে সহযোগিতা ও সমর্থন জানানো৷ আমি ব্যক্তিগতভাবে আমার পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে রাখলাম৷ ধন্যবাদ।’
এসএইচ/এমআই