images

রাজনীতি

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা চান সম্পাদকরা, পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস বিএনপির

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:০৪ পিএম

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে সম্পাদক, বার্তাপ্রধান ও গণমাধ্যমসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছে বিএনপি।

মতবিনিময় সভায় সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকেরা বলেন, দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার দায়িত্ব বিএনপির রয়েছে।  

এ বিষয়ে দলের শীর্ষ নেতারা বলেন, অতীতের সব তিক্ততা ভুলে ভবিষ্যতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গেলে বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের দমন–পীড়নের অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে গণমাধ্যমকে পূর্ণ সহযোগিতা দেওয়া হবে।

রোববার (২১ ডিসেম্বর) রাজধানীর হোটেল র‍্যাডিসনে আয়োজিত এ সভায় দেশের প্রথম সারির অধিকাংশ গণমাধ্যমের সম্পাদক, নির্বাহী সম্পাদক ও বার্তাপ্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে বিএনপির কাছে এ ধরনের প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেন সম্পাদক ও সাংবাদিকেরা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, বিএনপি আগামীতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গেলে গণমাধ্যমকে পূর্ণ সহযোগিতা দেওয়া হবে। অতীতের ফ্যাসিবাদী সরকারের দমন–পীড়নের অভিজ্ঞতা থেকেই এই সহযোগিতা নিশ্চিত করা হবে।

1

মতমিনিময় সভায় প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, দেশের গণমাধ্যমের ওপর হামলার ঘটনায় দল-মতনির্বিশেষে যারা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে, এই রেশ বজায় থাকবে বলে বিশ্বাস করি। আগের ফ্যাসিবাদী শাসনামল ছিল গণমাধ্যমের জন্য কঠিন একটা সময়। এর আবসান ঘটবে বলেও আশাপ্রকাশ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, মিথ্যা মামলায় কয়েকজন সাংবাদিককে কারাগারে যাওয়ার মতোও ঘৃণ্য ঘটনার সাক্ষী হয়েছে দেশ। পত্রিকার মালিকানা বদলে দেওয়া, সম্পাদক পরিবর্তনসহ সরাসরি গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বাধা দেওয়া হতো।

তুলনামূলকভাবে বিএনপির শাসনামল গণমাধ্যমের জন্য অধিকতর স্বস্তিদায়ক ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা এই মুহূর্তে দেশের বৃহৎ দল। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিতে তাদেরও বড় দায়িত্ব রয়েছে।

নির্বাচন নিয়ে নিজেদের করা জরিপের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত বিএনপি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ দল, এটা স্বীকৃত। আমাদের জরিপ, আমরা যেটা করেছি।

আমরা এটা বিশ্বাস করি যে জরিপটা মোটামুটি সত্যের কাছাকাছি বা মানুষের চিন্তা জগতের কাছাকাছি। সেখানে বিএনপি কিন্তু বৃহত্তম দল হিসেবে এসেছে। নির্বাচনে অনেক বেশি ভোট পেয়ে তারা বিজয়ী হবেন, সেটা কিন্তু আছে। আমরা এটা বিশ্বাস করতে চাই, বা আমরা এটা হয়তো ভাবতে পারি যে, তারা ক্ষমতায় আসছেন।

ভবিষ্যৎ ক্ষমতাসীন দল হিসেবে এসময় বিএনপির নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে বিনয় প্রত্যাশা করেন প্রথম আলো সম্পাদক।

তিনি জানান, গণমাধ্যমের ওপর সাম্প্রতিক হামলার ঘটনায় দল-মত নির্বিশেষে যে সংহতি দেখা গেছে, তা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন। 

দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কোনো মিডিয়া হাউসে আগুন দেওয়া হয়নি। সর্বপ্রথম প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে এ ঘটনা ঘটেছে।

তিনি বলেন, সমালোচনা ও মতপ্রকাশের ইস্যুকে অবশ্যই সুস্থ ধারার একটি প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসার জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে।

বিএনপি নেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বিএনপি এই মুহূর্তে মিডিয়ার সঙ্গে বেশ সৌহার্দ্যপূর্ণভাবই প্রকাশ করছে। এর একটা কারণ হতে পারে দলটি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতায় আসেনি। যখন তারা ক্ষমতায় আসবে, তখনই দেখা যাবে তাদের সমালোচনা গ্রহণ করার মানসিকতা এখনকার মতো বজায় থাকে কি না।

তিনি বলেন, গত অর্ধশতাব্দীতে যারাই দেশের ক্ষমতায় ছিল, কেউই গণমাধ্যমের করা বিশ্লেষণভিত্তিক সমালোচনা পছন্দ করেনি। আগামীর বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের রাজনীতি নতুন এই আবহে প্রবেশ করবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

মতবিনিময় দৈনিক মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, আগামী দিনে চ্যালেঞ্জ যেটা আসছে, তা মোকাবিলা করতে হলে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ না হই, রাষ্ট্র বিপন্ন হয়ে যাবে। সেই রাষ্ট্রের যদি অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে যায়, তাহলে আমরা কেউই থাকব না। বর্তমান পরিস্থিতিকে অস্থির ও কঠিন সময় উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশটা দু’ভাগে বিভক্ত।

তিনি বলেন, বিভাজনের মধ্যে কথা বলাও খুব ডিফিকাল্ট (কঠিন)। তবে আজকের এই অনুষ্ঠানে এসে আমার খুবই ভালো লেগেছে এই কারণে বিএনপির যে তিনজন নেতা বক্তৃতা করেছেন, আগামী দিনে দলটি ক্ষমতায় এলে মিডিয়া পলিসি কী হবে, তা সালাহউদ্দিন আহমদ ও রিজভী আহমেদের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট। আমি খুবই আশাবাদী হতে চাই আগামী দিনে যদি এর সিকিভাগ বাস্তবায়িত হয়।

মতিউর রহমান চৌধুরী আরও বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে গণমাধ্যমের সামনে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে এবং এই সময়ে দেশের সবচেয়ে বড় সংকট হয়ে উঠেছে নিরাপত্তা।

2

প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টার ভবনে হামলার প্রতিক্রিয়ায় যমুনা টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফাহিম আহমেদ বলেন, এ ঘটনায় অনেকেই ব্যথিত হয়েছেন, প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হয়েছে, আবার অনেকেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। তবে বিএনপির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

তিনি বলেন, বিএনপি বলতে পারে তারা ক্ষমতায় নেই। তবে ক্ষমতায় না থেকেও এর বিরুদ্ধে জোরালোভাবে দাঁড়ানো যেতো, ভূমিকা রাখা যেতো। বিএনপি কি এর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পেরেছে? বিএনপির নেতাকর্মীরা কি এর বিরুদ্ধে জোরালোভাবে কথা বলেছে?

তিনি বলেন, আমরা বরাবরের মতো ক্ষমতাকে প্রশ্ন করতে চাই। গত ১৫ বছরেও যথাসম্ভব চেষ্টা করেছি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে চাইলেও প্রশ্ন করা যায় না, তবুও আমরা প্রশ্ন করার চেষ্টা করেছি। তবে কিছু ক্ষেত্রে এখনও যখন ক্ষমতাকে প্রশ্ন করি আর অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলি তখন 'ফ্যাসিবাদের দোসর' বলে অভিহিত করা হয়, ট্যাগ দেয়া হয়। আগামী দিনে এর অবসান ঘটবে বলে আশাপ্রকাশ করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে অতিথিরা প্রতি তিন বা ছয় মাসে অন্তত গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে সার্বিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে এ রকম মতবিনিময় আয়োজনের প্রতিও দৃষ্টিপাত করেন তারা।

মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, নয়া দিগন্তের সম্পাদক সালাহউদ্দিন মুহাম্মদ বাবর, দৈনিক খবরের কাগজ সম্পাদক মোস্তফা কামাল, কালের কণ্ঠ সম্পাদক হাসান হাফিজ, প্রতিদিনের বাংলাদেশ সম্পাদক মারুফ কামাল খান, সআজকের পত্রিকা সম্পাদক কামরুল হাসান, আমার দেশ নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, ইনকিলাব সম্পাদক আ ক ম বাহাউদ্দীন, ডেইলি সান সম্পাদক রেজাউল করিম লোটাস, বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, বাসসের এমডি মাহবুব মোর্শেদ, জনকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক খুরশিদ আলম, বাংলানিউজ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু, ঢাকা মেইলের নির্বাহী সম্পাদক হারুন জামিল, সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল প্রমুখ অংশ নেন।

বিএনপি নেতাদের মধ্যে এ সময় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, সেলিমা রহমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ, বিএনপি মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ আহমেদ পাভেল, সদস্য সচিব শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সদস্য শাম্মী আক্তার, মোর্শেদ হাসান খান, মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, আতিকুর রহমান রুমন, শায়রুল কবির খান, ব্যারিস্টার আবু সায়েম, এডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুল, জাতীয় প্রেসক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য জাহিদুল ইসলাম রনি উপস্থিত ছিলেন।

বিইউ/এআর