বোরহান উদ্দিন
১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:০০ এএম
গত কয়েক মাস ধরেই দেশজুড়ে চলছে নির্বাচনি হাওয়া। বিএনপি-জামায়াতসহ বেশির ভাগ দল ইতোমধ্যে নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে। মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন প্রার্থী ও তাদের কর্মী সমর্থকরা। অন্যান্য এলাকার মতো ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ঢাকা-১৬ আসনে বিরাজ করছে নির্বাচনি উত্তাপ। প্রার্থী ঘোষণার পর থেকেই নানা কার্যক্রমের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থীরা। তবে এই আসনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক সবার কাছে পরিচিত মুখ।
অন্যদিকে বিএনপির চেয়ে অনেকটা অপরিচিত জামায়াত প্রার্থী কর্নেল (অব.) আব্দুল বাতেন নিজের অবস্থান তুলে ধরতে ছুটছেন পাড়া-মহল্লায়। এর বাইরেও স্বতন্ত্রসহ একাধিক প্রার্থী মাঠে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। তবে তাদের খুব একটা তৎপরতা নেই।
কয়েক বারের নির্বাচনে অনেকটা এককভাবে প্রভাব বিস্তার করা আওয়ামী লীগের (বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ) ভোটের মাঠে অনুপস্থিতি নতুন সমীকরণ তৈরি করেছে এই আসনে। পাড়া-মহল্লার চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সব জায়গায় রাজনৈতিক উত্তেজনা স্পষ্ট। সামাজিক নিরাপত্তা ও দূষণরোধে কাজ করবে এমন যোগ্য ব্যক্তিকেই স্থানীয়রা নির্বাচিত করবেন বলে জানান।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিএনপির প্রার্থী সবার কাছে এক নামে পরিচিত। কিন্তু জামায়াতের প্রার্থী সেভাবে পরিচিত না হওয়ায় খুব একটা সুবিধা করতে পারছেন না। তবে নিজের চেয়ে দলের প্রতীক দাঁড়িপাল্লার ওপরেই জামায়াতের বেশি ভরসা করতে হচ্ছে।
>> আরও পড়তে পারেন:
ঢাকা-১১ আসনে কাইয়ুম-আতিকের লড়াই, নাহিদ এলে পাল্টে যাবে হিসাব
স্থানীয় বাসিন্দা ও ভোটাররা জানান, ফুটবলার হিসেবে আমিনুল সবার পরিচিত। এছাড়া অনেক দিন ধরে রাজনীতির মাঠে থাকায় সবার কাছে তিনি বেশ জনপ্রিয়। তবে কর্নেল (অব.) আব্দুল বাতেনকে সেভাবে আগে দেখা যায়নি। বর্তমানে নিজের অবস্থার জানান দেওয়ার চেষ্টা করছেন। সার্বিক বিবেচনায় এই আসনের ভোট বেশ জমজমাট হবে বলে জানান সাধারণ মানুষেরা।

এই আসনে বিএনপি ও জামায়েতের প্রার্থী ছাড়াও বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত কিন্তু মনোনীত না হওয়ায় স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করতে কাজ করছেন এ.কে.এম মোয়াজ্জেম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস মনোনীত প্রার্থী মুফতি আহসানুল্লাহ কাসেমী, মিরপুর-৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মেহেরুন্নেসা হক।
সরেজমিনে এই আসনের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মিরপুর-১২ এর বি ব্লকের ৬ নম্বর রাস্তার মোড়ে আমিনুল হকের একটি অফিস রয়েছে। যেখানে বিকেল থেকে বিএনপির নেতাকর্মীদের দেখা যায়। এছাড়া বাসা বাড়ির দেওয়ালে পোস্টার লাগানোর কড়াকড়ি থাকায় সেভাবে পোস্টার দেখা যায়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সবশেষ ১৯৭৯ সালে এই আসনে বিএনপি প্রার্থী আবুল কাসেম বিজয়ী হন। তারপর সীমানা পরিবর্তন হয়। এছাড়া ২০০৮ সাল থেকে এই এলাকায় সংসদ সদস্য হিসেবে ছিলেন ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ।
>> আরও পড়তে পারেন:
ঢাকা-১০: দল নয়, যোগ্য ও পরিচিত মুখে আস্থা রাখতে চান ভোটাররা
তবে বড় দুই দলের কর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, আসলে ভোটের এখনো বেশ দেরি আছে, তাই আগেই পোস্টার লাগানো হয়নি। এখন মানুষের কাছে গিয়ে এবং এলাকাভিত্তিক সভা-সমাবেশের মাধ্যমে প্রচারণা চলছে। তবে বিভিন্ন স্থানে ব্যানার-ফেস্টুন টানানো হয়েছে বিভিন্ন দিবস বা উপলক্ষে।
মিরপুর-১২ এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা আজহারুল ইসলাম ঢাকা মেইলক বলেন, ‘আমিনুল ভাই এই আসনের সবচেয়ে পরিচিত মুখ। খেলোয়াড় হিসেবে যেমন পরিচিত ঠিক রাজনৈতিক নেতা হিসেবেও সবার কাছে পরিচিত। আগামী নির্বাচনে উনি ভালো করবেন। এছাড়া মিরপুরবাসীর প্রত্যাশাও রয়েছে উনার কাছে।’
মিরপুর-১১ এলাকার একজন মুদি দোকানি ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘এই আসনের আমিনুল এবং বাতেন দুজনই ভালো মানুষ। তাদের ব্যক্তিগত পরিচিত মোটামুটি সবার কাছে রয়েছে। আশা করি এবার ভোট বেশ জমজমাট হবে।’

স্থানীয় একটি কলেজের শিক্ষার্থী আরিফ আহমেদ ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমিনুল ভাইকে চিনি। উনি সবার পরিচিত। তরুণদের কাছে উনি ব্যাপকভাবে পরিচিত। তরুণরা সব সময় স্মার্ট এবং পরিচিত লোকজনের নির্বাচনে ভোট দিতে চায়। সেদিক বিবেচনায় আমিনুল ভাই ভালো কিছু করবেন।’
মিরপুর-১১ এলাকার বাসিন্দা মারিয়ম বেগম নামের একজন বলেন, ‘কত দিন দেশে ভোট হয়নি। এবার ভোটে যে পাড়ার ড্রেন ও ময়লা নেওয়ার ব্যাপারে কাজ করবে তেমন প্রার্থীকে ভোট দেব। একটু বৃষ্টি নামলে পাড়ার রাস্তায় পানি জমে যায়। ফলে যোগ্য ব্যক্তি বিবেচনা করেই ভোট দিতে চাই।’
>> আরও পড়তে পারেন:
ঢাকা-১৭: সমীকরণ বদলে দেবে এলিট ও বস্তির ভোট
নির্বাচনের প্রস্তুতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বিএনপির প্রার্থী আমিনুল হক ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘শৈশব-কৈশোর থেকে এখন পর্যন্ত পুরো বয়স যে এলাকায় কেটেছে, সেখানকার মানুষের জন্য আমার দায়বদ্ধতাও সবচেয়ে বেশি। জাতীয় দলে খেলা শেষে রাজনীতিতে পা দেওয়ার পর থেকেই মানুষের জন্য কাজ করার চেষ্টা করেছি।’
আমিনুল বলেন, ‘যেহেতু আমি এই এলাকার সন্তান, তাই এখানকার সমস্যা আমার নখদর্পণে। এরপরও মানুষের কাছে প্রতিনিয়ত ছুটে যাচ্ছি। তাদের কথা শুনছি, সমাধানের পরিকল্পনাও তৈরি করছি। এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘোষিত ৩১ দফা পৌঁছে দিচ্ছি। এলাকায় মাদক অনেক বড় সমস্যা। তরুণদের খেলাধুলার মাঠ নেই। বয়স্ক মানুষের হাঁটার জায়গা নেই। সুযোগ পেলে এসব বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করার চেষ্টা করবো।’
জামায়াতের প্রার্থী কর্নেল (অব.) আব্দুল বাতেনের সঙ্গে কথা বলতে একাধিবার চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি।
বিইউ/জেবি/এএস