আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজধানীর আসনগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ঢাকা-১১। রামপুরা বাড্ডা ভাটারা এলাকা মিলে এই আসন গঠিত। এই আসনে সম্প্রতি বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ক্ষুদ্র ঋণ বিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাবেক প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. এম এ কাইয়ুম। কয়েকম মাস ধরেই এই আসনে নির্বাচনি প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সূরা সদস্য অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমান। এখন পর্যন্ত এই দুই প্রার্থীর লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। তবে একই আসন থেকে নির্বাচন করার কথা রয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের। যদি নাহিদ ইসলাম এই আসন থেকে নির্বাচন করলে হিসাব কিছুটা ভিন্ন হতে পারে। লড়াই হতে পারে ত্রিমুখী।
এই আসনের রামপুরা, মেরুল বাড্ডা, শাহাদাতপুর এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, জামায়াত প্রার্থী আতিকুর রহমান ও বিএনপি প্রার্থী এম এ কাইয়ুমের পোস্টার ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে পুরো এলাকা। একই জায়গায় পাশাপাশি চোখে পড়ছে রঙ-বেরঙের পোস্টার। এলাকায় এলাকায় গড়ে উঠেছে নির্বাচনি অফিস। অলিতে গলিতে লিফলেট হাতে প্রচরণা চালাচ্ছেন প্রার্থীরা। কখনো কখনো শোডাউন মিছিল করতে দেখা যাচ্ছে দুই প্রার্থীর।
বিজ্ঞাপন
মনোনয়ন পাওয়ার পরেই নির্বাচনি এলাকায় শোডাউন করেছেন বিএনপি প্রার্থী ড. এম এ কাইয়ুম। সম্প্রতি এক বক্তব্যে কাইয়ুম বলেন, বর্তমান বাংলাদেশ বৈষম্যমুক্ত। এই দেশে স্বৈরাচারের কোনো ঠাঁই নেই। স্বৈরাচার এই দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করে দিয়ে গিয়েছে। তাই দেশকে গড়ে তুলতে তোমাদের প্রস্তুত হতে হবে। আগামীর বাংলাদেশ হবে সম্ভাবনাময় আধুনিক বাংলাদেশ। এই বৈষম্যবিরোধী বাংলাদেশে কোনো অন্যায় থাকবে না। অত্যাচার, জুলুম, নির্যাতন থাকবে না, আইনের শাসন থাকবে। আগামীদিনে এই বিষয়গুলো আমরা অব্যাহত রাখবো।
>> আরও পড়তে পারেন
সম্প্রতি শাহদাতপুর থেকে রামপুরা পর্যন্ত শত শত মোটরসাইকেল নিয়ে মোটর শোভাযাত্রা করেন জামায়াত প্রার্থী আতিকুর রহমান। এক সমাবেশে অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমান বলেন, অতীতে যারা ক্ষমতায় ছিলেন তারা জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করেনি বরং নিজেরাই নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করে নিয়েছেন। আগামী নির্বাচনে জনগণ জামায়াতকে ভোট দিয়ে সরকারে পাঠালে ৫ বছরের মধ্যেই দেশের চেহারা পাল্টে দেওয়া হবে। দেশে কোনো দুর্নীতি থাকবে না। দেশ রক্ষায় আগামী নির্বাচনে দাঁড়িপাল্লার বিজয় নিশ্চিত করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

বিজ্ঞাপন
বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের উদ্যোগে প্রতিদিনই ঢাকা-১১ আসনের আওতাধীন প্রতিটি থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিটে চলছে পরিচিতি সভা, মতবিনিময় সভা, গণসংযোগ, লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি ইত্যাদি। রাজনৈতিক কর্মসূচির বাইরেও ড. এম এ কাইয়ুম নিজ উদ্যোগে সামাজিক কর্মসূচিও পালন করছেন।
অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমান ১৯৯৫ সালে ইসলামী ছাত্রশিবিরে যোগদান করে ২০১৬ সালে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে যোগ দেন জামায়াতে ইসলামীতে। ২০১৯ সাল থেকে তিনি বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়ে অদ্যাবধি দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ প্রগতিশীল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি ও জাতীয় শ্রমিক ঐক্যের সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ২০১৯ সাল থেকে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
>> আরও পড়তে পারেন
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে ‘মব ভায়োলেন্স’ থেকে সরে আসতে হবে: ফখরুল
এই দুই প্রার্থী ছাড়া অন্যান্য দলের তেমন কোনো প্রার্থীর তৎপরতা দেখা যায়নি। এনসিপির একজন শীর্ষ নেতা ঢাকা মেইলেকে বলেন, নাহিদ ইসলাম ঢাকা-১১ আসন থেকেই নির্বাচন করবেন। আমাদের এখনও মনোনয়ন বিতরণ চলছে। এসব শেষে হলে খুব শিগগিরই তিনি প্রচারণায় মাঠে নামবেন। তিনি চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের প্রধান নায়ক। সে হিসেবে সাধারণ মানুষ নাহিস ইসলামকেই বেছে নেবে।
এছাড়াও এই আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী রয়েছেন ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ। হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ দীর্ঘদিন ধরে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন থেকে শুরু করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বিভিন্ন সাংগঠনিক পদে দায়িত্ব পালন করছেন। ধর্মীয় শিক্ষায় গভীর জ্ঞানসম্পন্ন এ নেতা সমাজ সংস্কার ও তরুণদের মাঝে ইসলামী মূল্যবোধ জাগ্রত করার জন্য পরিচিত।
ঢাকা-১১ আসনটি ঢাকা মেট্রোপলিটন এর বাড্ডা থানা, ভাটারা থানা, রামপুরা থানা, হাতিরঝিল থানার একাংশ এবং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এর ২১, ২২ , ২৩ ,৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১,ও ৪২ নং ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। এই আসন থেকে উপ নির্বাচনসহ ৬ বার আওয়ামী লীগ, পাঁচবার বিএনপি ও দুইবার জাতীয় পার্টি থেকে দুইজন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়।
টিএই/এএস

