images

রাজনীতি

পিছিয়ে যাচ্ছে তারেক রহমানের দেশে ফেরা!

মো. ইলিয়াস

১২ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:২১ পিএম

প্রায় দেড় যুগ ধরে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এক-এগারোর সরকারের সময় গ্রেফতারের পর গুরুতর অসুস্থ হয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি লন্ডনে যান। এরপর থেকে সেখানেই অবস্থান করছেন বিএনপির এই শীর্ষ নেতা। আওয়ামী লীগ টানা চার মেয়াদ ক্ষমতায় থাকাকালে তার বিরুদ্ধে দায়ের করেছে একের পর এক মামলা। বেশ কিছু মামলায় তিনি দণ্ডিতও হন। ফলে যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা তারেক রহমানের আর দেশে ফেরা হয়নি। 

তবে গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে তারেক রহমানের দেশে ফেরার পথ অনেকটা সুগম হয়। একে একে বিভিন্ন মামলা থেকে খালাস পেতে থাকেন তিনি। দলের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়, শিগগির তাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশে ফিরবেন। ২০২৫ সালের শুরুতে তারেক রহমান দেশে ফিরবেন এমন গুঞ্জনও শোনা যাচ্ছিল। বলা হচ্ছিল, কিছু জটিল মামলা নিষ্পত্তি হলেই দেশে ফিরবেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বড় ছেলে। তবে ইতোমধ্যে মামলার বাধা অনেকটা কেটে গেলেও খুব তাড়াতাড়ি তারেক রহমান দেশে ফিরছেন না বলে জানা গেছে।

বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আলাপে জানা যায়, তারেক রহমানের দেশে ফিরতে এখন মামলা কোনো বাধা নয়। তিনি চাইলে যেকোনো সময় দেশে ফিরতে পারেন। তবে তার মা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। তিনি গত ৮ জানুয়ারি যুক্তরাজ্যে গেছেন উন্নত চিকিৎসার জন্য। সেখানে তার চিকিৎসা ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। এই চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে। তাছাড়া এখান থেকে চিকিৎসার জন্য তিনি যুক্তরাষ্ট্রেও যেতে পারেন। সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে কয়েক মাস সময় লেগে যেতে পারে। ফলে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা শেষ হওয়া পর্যন্ত বড় ছেলে তারেক রহমানের দেশে ফেরার সম্ভাবনা খুবই কম।

বিএনপি নেতারা বলেছেন, যুক্তরাজ্যের লন্ডনে স্বনামধন্য একটি হাসপাতালে বিএনপি চেয়ারপারসন চিকিৎসাধীন। মায়ের সমস্ত দেখভালের দায়িত্ব পালন করছেন বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। খালেদা জিয়ার চিকিৎসা শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেখানেই থাকতে হচ্ছে তাকে। এজন্য তার দেশে ফিরতে একটু বিলম্ব হচ্ছে।

Tareq2

তারেক রহমানের আইনজীবীরা বলেছেন, তার দেশে আসার সঙ্গে মামলার কোনো সম্পর্ক বা কোনো বাধা নেই। তিনি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল একজন মানুষ, তাই আইনি প্রক্রিয়ায় মামলার পদক্ষেপ বা নিষ্পত্তি করা হবে। যেহেতু তিনি মামলায় আইনি প্রক্রিয়ায় পদক্ষেপ নেবেন, নিষ্পত্তি করবেন, সেই কারণে দেশে ফিরতে মামলা কোনো বাধা নয়। তার বিরুদ্ধে যেসব মামলা রয়েছে তার দুই-তৃতীয়াংশ মামলা খারিজ হয়ে গিয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া বাতিল হয়ে গিয়েছে। অন্য মামলাগুলো আইনি প্রক্রিয়া মেনে নিষ্পত্তি হবে।

ছেলে তারেক রহমানকে নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেশে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক। গত বুধবার (৮ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, ‘মা ছেলেকে নিয়ে বাংলাদেশে আসবে, কেউ ঠেকাতে পারবে না তার জনপ্রিয়তাকে।'

‘তারেক রহমানের দেশে ফেরায় মামলা বাধা নয়’

বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ও তারেক রহমানের আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল ঢাকা মেইলকে বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে আসার সঙ্গে মামলার কোনো সম্পর্ক বা কোনো বাধা নেই। কারণ তিনি আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন, তার বিরুদ্ধে যে মামলা রয়েছে তা আইনের গতিতে চলবে। তিনি প্রচলিত আইন এবং আদালতের প্রতি আস্থাশীল। যেহেতু আইন আদালতের প্রতি আস্থাশীল অতএব উনার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত প্রত্যেকটি মামলায় আইনি প্রক্রিয়ায় মোকাবিলা করা হচ্ছে এবং হবে।

আরও পড়ুন

নজর রোডম্যাপে, ভোটের দাবিতে মাঠে নামার চিন্তা বিএনপির

তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলার সবশেষ তথ্য জানিয়ে কায়সার কামাল বলেন, উনার বিরুদ্ধে প্রায় ৮২টির মতো মামলা দায়ের করা হয়েছিল। এর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ মামলা খারিজ হয়ে গিয়েছে। এসব মামলা আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বাতিল হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি মামলায় তাকে দণ্ড দেওয়া হয়েছিল। ২১ আগস্টের এবং নড়াইলে একটি মানহানি মামলায় খালাস পেয়েছেন। আর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় অ্যাপিলেট ডিভিশন শুনানি চলছে। আর মানিলন্ডারিং মামলা অ্যাপিলেট ডিভিশনে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে এবং সম্পদ বিবরণী মামলা এখনো নিম্ন আদালতে রয়েছে।

Tareq4

বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক বলেন, তার (তারেক রহমান) আইনজীবী হিসেবে যেটা বলব, তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত প্রত্যেকটি মামলা আইনি প্রক্রিয়ায় সংবিধান আইন, সিআরপিসি, প্যানাল কোর্ট যা আছে, যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে এবং অব্যাহত থাকবে। এটাই তার নির্দেশনা।

এই আইনজীবী বলেন, বড় ধরনের মামলার মধ্যে যেগুলো খারিজ বা বাতিল হয়েছে, যেমন ১/১১ এর সময় দায়েরকৃত বিভিন্ন চাঁদাবাজি মামলা, যে মামলাতে এফ আই আর এ ওনার নাম ছিল না, সেগুলো আরও আগে আমরা স্ট্রে করে রেখেছিলাম। সেগুলো বাতিল হয়েছে। এছাড়া ২০১৪-১৫ সালে মানহানির মামলা করা হয়েছিল। সেই মামলায় যিনি বাদী ছিলেন মামলা দায়েরের পরে তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। অনেকাংশে বাদীও মারা গেছে। আইনি প্রক্রিয়া সেগুলো খারিজ হয়ে গিয়েছে। এখন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলাটা রয়েছে, যেটায় উনার বিরুদ্ধে ১০ বছরের দণ্ড দেওয়া হয়েছে। সেটা মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে অ্যাপিলেট ডিভিশনে শুনানির জন্য রয়েছে। এরপর যেটা মানিলন্ডারিং মামলা যেটা সাত বছরের দণ্ড দেওয়া হয়েছে। সেটাও অ্যাপিলেট ডিভিশনে শুনানির জন্য রয়েছে। কবে নাগাদ শুনানি হবে সেটা বলা যাচ্ছে না, কিন্তু আমরা আইনি প্রক্রিয়ায় যেভাবে সুন্দর হয় সেভাবেই চেষ্টা করছি।

আরও পড়ুন

খুলছে কপাল, বহিষ্কৃতদের সবুজ সংকেত দিয়েছে বিএনপি

ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে আসতে বাধা কোথায় জানতে চাইলে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ঢাকা মেইলকে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া যেহেতু চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গিয়েছেন আপাতত তাকে নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন তিনি। এছাড়া তিনি নিজেও পুরোপুরি সুস্থ নন। পরিবেশ পরিস্থিতি চিন্তা করেই সবকিছু ব্যবস্থা করা হবে। তার বিরুদ্ধে মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো সমস্যা নয়। অধিকাংশ মিথ্যে মামলা ইতোমধ্যে খালাস হয়ে গিয়েছে। যে পরিমাণে মামলা ছিল, সেই তুলনায় এখন যা রয়েছে তা কিছুই নয়। এখন ম্যাডামের চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন, উপযুক্ত সময় যখন আসার সিদ্ধান্ত হবে তখনই দেশে চলে আসবেন। তিনি দ্রুতই দেশে আসবেন ইনশাআল্লাহ।

Tareq3

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দেশে ফেরার বিষয় জানতে চাইলে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া যেহেতু উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গিয়েছেন এখন তার চিকিৎসকরা বলতে পারবেন সুস্থ হতে কত সময় লাগবে। সেই পর্যন্ত তো ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ওখানে থাকতে হচ্ছে। তার মাকে রেখে তো তিনি আর দেশে ফিরে আসতে পারবেন না। তারেক রহমানের মামলার বিষয় নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই। বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা শেষে তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারছেন।

আরও পড়ুন

বিএনপিতে প্রকট হচ্ছে ভারতবিরোধী মনোভাব

ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময় ২০০৭ সালের ৭ মার্চ তারেক রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পেয়ে ১১ সেপ্টেম্বর চিকিৎসার জন্য সপরিবার যুক্তরাজ্যে যান তিনি। তখন থেকেই তিনি লন্ডনে রয়েছেন। সেখানে থাকাকালে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তাঁর মা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন তারেক রহমান। সেখানে থেকেই তিনি দল পরিচালনা করছেন।

এমই/জেবি