শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫, ঢাকা

বিএনপিতে প্রকট হচ্ছে ভারতবিরোধী মনোভাব

মো. ইলিয়াস
প্রকাশিত: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৯ এএম

শেয়ার করুন:

বিএনপিতে প্রকট হচ্ছে ভারতবিরোধী মনোভাব

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে চলে যাওয়ার পর থেকে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অনেকটা তলানিতে গিয়ে ঠেকে। ‘প্রিয়ভাজন’ শেখ হাসিনার ভয়াবহ এই পতন কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না ভারত। ফলে দেশটির সরকারের কিছু ব্যক্তি, জনগণের একটি অংশ, বিশেষ করে গণমাধ্যম বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একের পর এক অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় বাংলাদেশেও ভারতবিরোধী সুর দিন দিন জোরালো হচ্ছে। স্বাধীন বাংলাদেশে এর আগে এতটা জোরালোভাবে ভারতবিরোধী আওয়াজ উঠেছে বলে কেউ স্মরণ করতে পারছেন না।

শুরু থেকেই বিএনপির সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠ কোনো সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। কয়েক দফায় বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে ভারতের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। গত প্রায় ১৬ বছর ভারত এক দিকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে একচেটিয়া সম্পর্ক গড়েছে, অন্যদিকে বিএনপির সঙ্গে দেশটির দূরত্ব আরও বেড়েছে। ভুয়া ও জালিয়াতির ভোটে ক্ষমতায় থাকতে আওয়ামী লীগকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে। এই অবস্থায় বিএনপিতে ভারতবিরোধী মনোভাব আরও প্রকট হয়েছে। গত কয়েক মাস ধরে বিএনপির দায়িত্বশীল নেতাদের থেকে শুরু করে সাধারণ কর্মীদের কথায় সেটা অনুভব করা গেছে। বিএনপি ভারতবিরোধী কর্মসূচিও পালন করছে।


বিজ্ঞাপন


রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা কারণে ভারত বিরোধিতার বিষয়টি নতুন নয়। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটি আবার নতুন করে উসকে দিচ্ছে ভারতই। আওয়ামী লীগের পতনের পর ভারত চাইলে সম্পর্ক কিছুটা স্বাভাবিক করতে পারত। তবে দেশটি এখানে আওয়ামী লীগের বিকল্প হিসেবে কাউকে ভাবতে পারছে না। ফলে তাদের আচরণে সেটা ‍ফুটে উঠছে। এছাড়া ভারতের গণমাধ্যমের গুজবনির্ভর সাংবাদিকতার ফলে দুই দেশের সম্পর্ক আরও তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।

bnp-office
ফাইল ছবি।

এতদিন বিএনপি ভারত সম্পর্কে আকারে-ইঙ্গিতে কথা বললেও সম্প্রতি দলটি প্রকাশ্যে ভারতবিরোধী কর্মসূচি ঘোষণা করে। এর মধ্যে গত ১১ ডিসেম্বর ‘ভারতীয় আগ্রাসনের’ প্রতিবাদে 'ঢাকা টু আখাউড়া লংমার্চ' করেছে বিএনপির অঙ্গ সংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। গত ১০ ডিসেম্বর রাজশাহীর ভুবন মোহন পার্কে ‘দেশীয় পণ্য কিনে হও ধন্য’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বিছানার চাদর আগুন দিয়ে পুড়িয়েছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এর আগে আগে গত ৫ ডিসেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সাধারণ চিকিৎসক সমাজের উদ্যোগে ‘দেশীয় পণ্য কিনে হও ধন্য’ ব্যানারে ভারতীয় পণ্য বর্জন ও দেশি পণ্য ব্যবহারে উৎসাহিত করতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নিজের স্ত্রীর ভারতীয় শাড়ি আগুন দিয়ে পোড়ান রিজভী। তার সাম্প্রতিক বিভিন্ন বক্তব্যেও ভারতের বিরুদ্ধে প্রচণ্ড ক্ষোভ প্রকাশ পায়। রিজভী ছাড়াও বিএনপির বেশ কয়েকজন দায়িত্বশীল নেতাও ভারত বিরোধিতায় সরব রয়েছেন।


বিজ্ঞাপন


বিএনপি নেতারা বলেছেন, আমরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। একটি রাষ্ট্রের প্রতি আরেকটি রাষ্ট্রে যে কর্তব্য, যে সম্মান, শ্রদ্ধাবোধ, কূটনৈতিক শিষ্টাচার- এসব ভারত বজায় রাখতে পারলে আমাদের অবস্থান (ভারত বিরোধিতা) পরিবর্তন হবে। আর যদি মনে করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য তারা বাংলাদেশ স্বাধীন করেছে; সে আধিপত্য তারা বজায় রাখবে, তাহলে যে অসন্তোষ জনমনে রয়েছে, এটা আরও প্রকট হবে। আমরা চাই না প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক খারাপ পর্যায়ে যাক। আমরা চাই যতটুকু হয়েছে এখান থেকে আমরা যাতে সুসম্পর্কে এগিয়ে আসতে পারি।

bnps

বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের প্রোপাগান্ডার অভিযোগ করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাজাহান ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘বাংলাদেশের বিষয় নিয়ে ভারতের খবরদারি আজকে নতুন নয়। খবরদারির কারণে তারা এসব বলছে। আমরা রাষ্ট্র হিসেবে তাদের থেকে ছোট হতে পারি, কিন্তু মর্যাদার দিক দিয়ে, আত্মসম্মানের দিক দিয়ে কোনো অংশে কম নই। কারণ আমাদের জাতিসত্তা রয়েছে, আমাদের ভূখণ্ড রয়েছে, সরকার রয়েছে, সার্বভৌমত্ব রয়েছে। এটাকে নিয়ে যদি কেউ কটাক্ষ করে তবে এর জবাব দেওয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আমরা মনে করি, এটা একটি গর্হিত কাজ। তারা যদি মনে করে বাংলাদেশ তৈরির মধ্য দিয়ে পাকিস্তান দুর্বল হয়েছে এবং ভারতের কেউ যদি মনে করে এটা তাদেরও একটি জয়, সেটা ভিন্ন বিষয়। সেটা নিয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। পাকিস্তান ভেঙে এখানে তাদের মাতব্বরি বা আধিপত্য যেটাই বলি না কেন, যুদ্ধের সময় এমন প্রশ্ন অনেকের কাছ থেকে উত্থাপিত হয়েছে। আল্টিমেটলি সে কি আমাকে বন্ধু হিসেবে সহযোগিতা করেছে নাকি আধিপত্য বিস্তারের জন্য সহযোগিতা করেছে, এটা নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে।’

বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘মোদির বক্তব্য স্পষ্ট যে, তিনি অতীতে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে যেভাবে হত্যা করেছেন, যেভাবে নির্লজ্জের মতো এ দেশকে শাসনের জন্য শেখ হাসিনাকে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করেছেন, আবার নতুন করে তিনি শেখ হাসিনাকে ভারতে আশ্রয় দিয়ে আবারও ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন। ফলে ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা, যারা খালি পায়ে হাফ প্যান্ট পরে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন, তাদের প্রতি অবমাননাকর কথা উচ্চারণ করেছেন। বাংলাদেশের বিজয় দিবসকে তাদের বিজয় উল্লেখ করেছেন। এটাতে আমরা ঘৃণা প্রকাশ করি এবং এতে প্রমাণিত হয়, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলেও তাদের যে প্রেতাত্মারা এখনো হিন্দুস্তানে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের এ সরকারকে (অন্তর্বর্তী) অস্বস্তিতে পড়ার একটি প্রয়াস চালাচ্ছে। আমাদের ফরেন অ্যাফেয়ার্স প্রতিবাদ করেছে এবং ফরেন অ্যাফেয়ার্স মিনিস্ট্রি বলেছে- মোদি এবং মমতার যে বক্তব্য সেই বক্তব্যে প্রমাণিত হচ্ছে স্বাধীন বাংলাদেশ নিয়ে তাদের বক্তব্য সৌজন্যমূলক নয়।’

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, ভারত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতন মেনে নিতে পারছে না। যে কারণে তাদের বক্তব্য বিবৃতি কর্মকাণ্ডে আমরা পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি। এটা দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের অনুকূলে নয়। আমরা একটি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি এবং এখান থেকে তাদের সরে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। একই সাথে আমাদের বিজয় দিবসে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর যে টুইট এবং বিরোধী দলের প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর যে বক্তব্য, তা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রামকে অবমাননা করা হয়েছে বলে মনে করি।’

এমই/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর