শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫, ঢাকা

খুলছে কপাল, বহিষ্কৃতদের সবুজ সংকেত দিয়েছে বিএনপি

মো. ইলিয়াস
প্রকাশিত: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৪ পিএম

শেয়ার করুন:

খুলছে কপাল, বহিষ্কৃতদের সবুজ সংকেত দিয়েছে বিএনপি

২০২৫ সালের শেষ দিকে কিংবা ২০২৬ এর শুরুতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে পারে বলে জানিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। অতীতের যেকোনো নির্বাচনের চেয়ে এবারের নির্বাচন অনেক কঠিন হবে বলে মনে করছে বিএনপি। এমন অবস্থায় তৃণমূলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীর মাঝে চাঙা ভাব ফিরিয়ে এনে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে চায় দলটি। এজন্য বিভিন্ন সময় দল থেকে বহিষ্কৃত নেতাদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সবুজ সংকেতও পেয়েছেন বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত অনেক নেতা।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্টের পর চাঁদাবাজি, দখলসহ দলের শৃঙ্খলাবিরোধী অভিযোগে যাদের বহিষ্কার করা হয়েছে, তাদের কিছুতেই ক্ষমা করবে না দল। তবে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যায়নি, তাদের দ্রুত সময়ের মধ্যেই দলে ফেরানো হবে। এছাড়া বিগত সময়ে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে অনেক নেতাকর্মী দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন। এদের মধ্যে যারা সবসময় দলীয় কর্মসূচি পালন করে এসেছেন, দলের প্রতি আস্থা রেখেছেন; এমনকি যারা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে বারবার দলে ফেরার আবেদন করেছেন, তাদের ফেরানোর কথা ভাবছে বিএনপি।


বিজ্ঞাপন


জানা গেছে, গত এক দশকে সারাদেশে ইউনিয়ন থেকে শুরু করে জেলা-মহানগরের অনেক নেতাকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বহিষ্কার করা হয়। ২০১৯ সালে ১৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপির হাইকমান্ড। এরপর থেকে বিভিন্ন সময় সিটি ও পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ ও ইউপি নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী হয়ে বহিষ্কৃত হন সহস্রাধিক নেতা। বহিষ্কৃত এসব নেতা দলীয় ফোরামে ক্ষমা চেয়ে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের আবেদন করেন। যেসব নেতাকর্মী তাদের ভুল বুঝতে পেরেছেন তাদের বিষয়ে নমনীয় হয়েছে দলটির হাইকমান্ড।

আরও পড়ুন

বিএনপিতে প্রকট হচ্ছে ভারতবিরোধী মনোভাব

বিগত সময় যেসব নেতাকর্মীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে, এদের মধ্যে অনেক নেতাকে ইতোমধ্যে দলে ফেরানোর সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে। কাউকে কাউকে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করতে বলা হয়েছে। এই তালিকায় রয়েছে প্রায় ৫০০ জন নেতার নাম। প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাই শেষে প্রথম পর্বে নিজ এলাকায় যারা জনপ্রিয়, অতীতের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের রেকর্ড যাদের ভালো এবং ছোটখাটো ভুল রয়েছে, এমন শতাধিক নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হচ্ছে শিগগিরই। ইতোমধ্যে বহিষ্কার হওয়া অনেক নেতা তাদের পদ ফিরে পেয়েছেন।


বিজ্ঞাপন


BNP2

এদিকে গত ২ নভেম্বর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির নিউমার্কেট থানা সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাজি জাহাঙ্গীর হোসেন পাটোয়ারীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। এরপর ১০ নভেম্বর দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুলের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। গত ২১ আগস্ট ফরিদপুরের নগরকান্দায় বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় তাদের পদ স্থগিত করে দলটি। গত ২৩ ডিসেম্বর কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক মো. আমিরুজ্জামান আমিরের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়।

এছাড়া এস আলম গ্রুপের গাড়িকাণ্ডে শাস্তির মুখে পড়া চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম এবং কর্ণফুলী উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক এস এম মামুন মিয়ার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) দলীয় গঠনতন্ত্রের ৫ (গ) ধারা মোতাবেক দলীয় পদ স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারসহ প্রাথমিক সদস্য পদ ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

কুমিল্লা সিটির পরপর দুইবার নির্বাচিত সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু ঢাকা মেইলকে বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যাতে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করার জন্য আমি আবেদন করি। দলে ফিরে কাজ করার জন্য আমি পরপর দুইবার আবেদন করেছি। আমি দলের জন্য কাজ করতে চাই।

আরও পড়ুন

যত্রতত্র পোস্টার-ব্যানার: ‘হার্ডলাইনে’ যাচ্ছে বিএনপি

২০২৩ সালের ৫ অক্টোবর কুমিল্লার কালাকচুয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বিএনপির রোডমার্চ চলাকালে মনিরুল হক সাক্কুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেদিন মির্জা ফখরুল সাক্কুকে বলেছিলেন- 'ধৈর্য ধরো, অপেক্ষা করো।’ তিনি এবার আশা করছেন, দলের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হবে এবং তিনি আবার দলীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয় হতে পারবেন।

BNP3

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আব্দুস সালাম আজাদ ঢাকা মেইলকে বলেন, যারা দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ করেন তাদের বহিষ্কার করা হচ্ছে সাংগঠনিক একটি প্রক্রিয়া। এটা পূর্বেও ছিল, সামনেও থাকবে। তবে যাদের বহিষ্কার করা হয়েছে তাদের বিষয়ে যাচাই-বাছাই চলছে। এই প্রক্রিয়া শেষে যারা প্রকৃত দোষী নয়, মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয়েছে, এমনকি বিএনপির নেতৃত্ব বিশ্বাস করেন এবং অন্য কোনো দলেও যাননি এসব নেতাকে দলে ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন

ফুরফুরে বিএনপিতে দুশ্চিন্তার ছাপ!

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ঢাকা মেইলকে বলেন, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে যারা বহিষ্কার হয়েছেন, তাদের মধ্যে ছোটখাটো ভুল যাদের রয়েছে, এর মধ্যে হয়ত দুই একজনের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হচ্ছে।

এমই/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর