মাহফুজ উল্লাহ হিমু
৩০ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:৩৫ এএম
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনে জমে উঠেছে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা। রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রের এই আসনটিতে মোট নয়জন প্রার্থী রয়েছেন। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ছাড়া কাউকেই চেনেন না ভোটাররা। মাঠেও উপস্থিতি নেই অন্য প্রার্থীদের। এমনকি পোস্টারেও তাদের উপস্থিতি তেমন নেই।
ভোটের আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরুর আগেই আচরণবিধি লঙ্ঘন করে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির নোটিশ পেয়েছিলেন নাছিম। এরপরও আচরণবিধি লঙ্ঘন থেমে নেই। দড়িতে পোস্টার লাগানোর বাধ্যবাধকতা থাকলেও অনেক প্রার্থীর পোস্টার বিদ্যুতের খুঁটি, বাড়ির দেয়ালে শোভা পাচ্ছে।
আরও পড়ুন
শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) সরেজমিনে রাজধানীর কাকরাইল, সেগুনবাগিচা, তোপখানা রোড এলাকা ঘুরে এসব চিত্র দেখা যায়।
কাকরাইল, সেগুনবাগিচা, মগবাজারের আউটার সার্কুলার রোডের একপাশ, রমনা, শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-৮ আসন। এই আসনের ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মোট নয়টি ওয়ার্ড রয়েছে। এগুলো হলো— ৮, ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৯, ২০ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ড।
এই আসনের টানা তিনবারের সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন এবার ১৪ দলীয় জোট থেকে আসনটিতে ছাড় পাননি। তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে বরিশাল-২ আসনে। ঢাকা-৮ আসনে প্রথমবারের মতো নৌকার মাঝি হয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং মাদারীপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।
এই আসনে অন্য প্রার্থীরা হলেন আম প্রতীকে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) মো. আবুল কালাম জুয়েল, মোমবাতি প্রতীকে বাংলাদেশ ইসলামিক ফ্রন্টের এস এম সরওয়ার (মোমবাতি), সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের মো. রাসেল কবির (ছড়ি), একতারা প্রতীকে বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির খন্দকার এনামুল নাছির, জাতীয় পার্টির মো. জুবের আলম খান (লাঙ্গল), তৃণমূল বিএনপির এম এম ইউসুফ (সোনালী আঁশ), বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মুহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান (ফুলের মালা) এবং টেলিভিশন প্রতীকে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) মো. সাইফুল ইসলাম।
সরেজমিনে আসনটির বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন অলি-গলি পোস্টারে ছেয়ে গেছে। নৌকাসহ লাঙ্গল, মোমবাতি, টেলিভিশসহ বিভিন্ন প্রতীকের প্রার্থীদের কম-বেশি পোস্টার লক্ষ্য করা গেছে। এলাকাগুলোতে বেশিরভাগ পোস্টার দড়ি দিয়ে টানিয়ে রাখতে দেখা যায়। তবে দড়ির পাশাপাশি বৈদ্যুতিক পিলারে এবং মানুষের বাড়ির দেওয়ালেও পোস্টার দেখা গেছে। শুধু ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির পাশে একটি ভবনের দেয়ালেই তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী এম এ ইউসুফের ১৫ থেকে ২০টি পোস্টার দেখা যায়। যা নির্বাচনী আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
এদিকে নির্বাচনী প্রচারণায় প্রর্থীদের প্রচার কেন্দ্র একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলেও নৌকার প্রার্থী ছাড়া অন্য কারো প্রচারকেন্দ্র তেমন চোখে পড়েনি। শুধু বিজয়নগর এলাকাতেই আওয়ামী লীগের একটি প্রচার কেন্দ্র এবং নির্বাচন পরিচালনা কার্যালয় লক্ষ্য করা গেছে। তবে আশেপাশের এলাকা ঘুরে অন্য প্রার্থীদের এমন কার্যালয় চোখে পড়েনি।
এছাড়া সশরীরে প্রচারণায়ও অন্য প্রার্থীদের তেমন উপস্থিতি নেই বলে জানিয়েছেন এলাকার বাসিন্দা ও ভোটাররা। আসনটিতে বাহাউদ্দিন নাছিমের বিরুদ্ধে কার্যত শক্তিশালী কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। ফলে অনেকটাই নির্ভার আওয়ামী লীগের এই প্রভাবশালী নেতা। এরপরেও প্রায় প্রতিদিনই নির্বাচনী এলাকার অলিগলিতে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। বিপরীতের বাকি প্রার্থীদের তেমন আনাগোনা নেই। এলাকাবাসীও চিনেন না তাদের।
তোপখানা রোডের চা দোকানে অসীম ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘নৌকা ছাড়াও একাধিক প্রার্থীর পোস্টার দেখা গেলেও প্রচারণায় তারা নেই। অন্য কোনো প্রার্থীকে চিনি না। তাদের খুব একটা সক্রিয় দেখছি না। মাইকে নৌকার প্রার্থীর প্রচারণা চালাতে শুনেছি, বাকিদের শুনিনি। আর কোনো প্রার্থীকেই সরাসরি এলাকায় আসতে এখন পর্যন্ত দেখিনি।’
সেগুনবাগিচার এলাকার ফল বিক্রেতা ফজলু বলেন, ‘নির্বাচনী প্রচারণা আর কী? সবই তো নৌকা। অন্যান্য যারা আছে নামের মাত্রই নির্বাচনে আছে। অনেকেই পোস্টার দেখছি। তবে প্রচারণা নৌকা প্রার্থী করছে। বাকিদের আমরা কেউ চিনি না। তারা এলাকায়ও আসেন না।’
এমএইচ/জেবি