প্রতি বার নির্বাচনে ভোটাররা সাধারণত দলীয় প্রতীক দেখে কিংবা ব্যক্তি দেখে ভোট দেয়। তবে এবারের নির্বাচনে ঢাকা-১৩ আসনে ভোটাররা অনেকটা বিপাকে পড়েছেন। বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো নির্বাচন বর্জন করায় এমনিতেই ভোট প্রতিদ্বন্দ্বিতা হারিয়েছে। এই আসনে নেই আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র কোনো প্রার্থীও। ফলে এখানে একজন ছাড়া আর কাউকেই সেভাবে চেনেন না ভোটাররা। নৌকা প্রতীকের বাইরে আর কে নির্বাচন করছেন সেটা জানেন না এই আসনের বেশির ভাগ ভোটার। আরও কারা ভোট করছেন সেটা জানার কৌতূহল লক্ষ্য করা গেছে ভোটারদের মধ্যে।
মোহাম্মদপুর-আদাবর ও শেরেবাংলা নগরের আংশিক নিয়ে গঠিত আসনটিতে নৌকার প্রার্থী জাহাঙ্গীর কবির নানক। তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য।
বিজ্ঞাপন
নবম ও দশম জাতীয় সংসদে ঢাকা-১৩ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন নানক। গত নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি। ক্ষমতাসীন দলের হেভিওয়েট এই নেতাকে মোটামুটি সবাই চিনেন। এছাড়া এই আসনে প্রচারেও এগিয়ে আছেন নানক। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে নিজে উপস্থিত থেকে প্রচার চালিয়েছেন সাবেক এই সংসদ সদস্য।
ঢাকা-১৩ আসনের অন্তর্গত ২৮, ২৯, ৩০, ৩১, ৩২, ৩৩ ও ৩৪নং ওয়ার্ড নানকের পোস্টার ও ব্যানারে সয়লাব। জায়গায় জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে নির্বাচনী অস্থায়ী প্রচার কেন্দ্র।
বিজ্ঞাপন
ঢাকা-১৩ আসনে মোট প্রার্থী ছয়জন। নির্বাচন কমিশনের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে। তবে ভোটের মাঠে নানক ছাড়া অন্য কারও কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি।
ইসির তথ্য অনুযায়ী, এই আসনে জাহাঙ্গীর কবির নানক ছাড়া আরও লড়ছেন বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের মো. শাহাবুদ্দীন। তার প্রতীক ছড়ি। সোহেল সামাদ বাচ্চু বাংলাদেশ সুপ্রিম পাটির প্রার্থী। প্রতীক একতারা৷ কামরুল আহসান ফুলের মালা প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মনোনয়ন নিয়ে৷ জাহাঙ্গীর কামাল বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ মনোনীত প্রার্থী। প্রতীক টেলিভিশন। এছাড়া মোমবাতি প্রতীক নিয়ে মো. জাফর ইকবাল নান্টু আছেন। তিনি বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের প্রার্থী।
তারা নামেও আছেন, ব্যালটেও থাকছেন। কিন্তু ভোটের প্রচার-প্রচারণায় নেই বললেই চলে। শনি, রোব ও সোমবার (২৩-২৫ ডিসেম্বর) ঢাকা-১৩ আসনের প্রতিটি ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, নৌকার প্রার্থী বাদে অন্যদের তেমন কোনো প্রচার-প্রচারণা নেই।
মোহাম্মদপুর তাজমহল রোডের কবরস্থান মাঠের সামনে দেখা মিলেছে মোমবাতি প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেওয়া মো. জাফর ইকবাল নান্টুর পোস্টার। একই প্রার্থীর কিছু পোস্টার দেখা গেছে শিয়া মসজিদ মোড়ে। একই স্থানে কিছুসংখ্যক পোস্টার মিলেছে কামরুল আহসানের। বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের এই প্রার্থীর পক্ষে মাইকিং করতে দেখা গেছে রোববার৷ এছাড়া একতারা প্রতীকে ভোটের মাঠে থাকা সোহেল সামাদ বাচ্চুর সামান্যসংখ্যক পোস্টার চোখে পড়েছে। বাকিদের কোনো পোস্টার বা ব্যানারের দেখা মেলেনি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নৌকা ছাড়া অন্য কোনো প্রার্থীর পোস্টার-ব্যানার তাদের নজরে আসেনি। এমনকি নৌকা ছাড়া অন্য কোনো প্রার্থী ভোটের মাঠে আছেন, সেটাও তাদের জানা নেই।
৩১নং ওয়ার্ডের ভোটার ফারুকের কাছে প্রার্থীদের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, 'আওয়ামী লীগ থেকে নানক ভাই আছেন। বাকি কারও কোনো কিছু তো দেখলাম না।'
আসনের ৩৩নং ওয়ার্ডের ভোটার আব্দুল মমিন বলেন, 'প্রার্থীই তো খুঁজতেছি। একজন ছাড়া (নৌকা ছাড়া) কাউকে তো দেখি না।'
শেখেরটেক এলাকার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম ৩০নং ওয়ার্ডের ভোটার। গত দুই নির্বাচনে ভোটও দিয়েছেন তিনি। এবার প্রার্থীর ঘাটতি দেখছেন এই ভোটার৷ তিনি বলেন, 'শুনছি ৫/৬ জন প্রার্থী আছে। কারা যে দাঁড়াইলো জানি না। দুইজনের মনে হয় পোস্টার দেখছি। চিনিই না।'
আসনটি বেশ কয়েকজন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটারও আছেন। পাহাড়ি নামে একজন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ঢাকা মেইলকে বলেন, 'আওয়ামী লীগ আছে এটা জানি। বাকি কেউ আছে! কেউ তো আসলো না, ভোটও চাইলো না। কেউ ভোটে দাঁড়াইলে তো একটু-আকটু মিছিল-প্রচারও করে।'
ভোটারদের এসব প্রশ্ন তুলে ধরা হয় প্রার্থীদের কাছে। তবে কিছু প্রার্থী ভোটের আগেই নিশ্চিত তারা জিতবেন না।
বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের প্রার্থী কামরুল আহসান ফুলের মালা প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। তবে ভোটে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী নন তিনি। ঢাকা মেইলের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, 'তারা (আওয়ামী লীগ) সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাদের প্রচারণা বেশি। আমরা আমাদের জায়গা থেকে চেষ্টা করছি। আমরা আশা করছি, আমরা একটা ভালো পর্যায়ে থাকবো।' ভোটের মাঠে এখনো কোনো বাধা-বিপত্তির অভিযোগ নেই এই প্রার্থীর।
একই তথ্য জানিয়েছেন বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের প্রার্থী মো. জাফর ইকবাল নান্টু। তার প্রতীক মোমবাতি৷ প্রচারণায় পিছিয়ে থাকার কারণ জানতে চাইলে এই প্রার্থী লোকবল ও আর্থিক সংকটের কথা তুলে ধরেন। একই সঙ্গে প্রচার-প্রচারণার গতি ধীরে ধীরে বাড়ানো হবে বলেও জানিয়েছেন জাফর ইকবাল নান্টু৷
এদিকে টানা মাঠে আছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর কবির নানক৷ নবম ও দশম সংসদে আসনটিতে এমপি ছিলেন তিনি। সেই জনপ্রিয়তা এখনো রয়ে গেছে৷ পাশাপাশি আসনটিতে আওয়ামী লীগের কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী নেই। ফলে তৃতীয়বারের মতো এই আসনে এমপি হওয়া এখন নানকের জন্য সময়ের ব্যাপার মাত্র।
কারই/জেবি