images

রাজনীতি / সাক্ষাৎকার

‘নৌকার বিপক্ষে লড়ব ভাবতেও পারি না, সাকিবের পাশে আছি’

কাজী রফিক

২৯ নভেম্বর ২০২৩, ০৭:৫৪ পিএম

প্রধামনন্ত্রীর সাবেক সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) সাইফুজ্জামান শিখর গত সংসদ নির্বাচনে মাগুরা-১ আসনে নৌকার টিকিটে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। তবে এবারের নির্বাচনে তিনি নৌকার মনোনয়ন পাননি। তারকা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে নৌকার মাঝি হিসেবে বেছে নিয়েছে ক্ষমতাসীন দল। দেশের বিভিন্ন আসনে যখন মনোনয়ন বঞ্চিতরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন তখন ব্যতিক্রমী অবস্থানে রয়েছেন শিখর। তিনি জানিয়েছেন, নৌকার বিপক্ষে প্রার্থী হবেন সেটা তিনি স্বপ্নেও ভাবেন না। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা যাকে উপযুক্ত মনে করেছেন তাকে নৌকা দিয়েছেন। দলের একজন কর্মী হিসেবে নৌকার প্রার্থীকেই বিজয়ী করা তার প্রধান দায়িত্ব।

বুধবার (২৯ নভেম্বর) দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনে নিজ কার্যালয়ে ঢাকা মেইলের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় শিখর এসব কথা বলেন।

সাইফুজ্জামান শিখর বলেন, '২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দল থেকে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। মাগুরার মানুষ বিপুল ভোটে নির্বাচিত করে। পাঁচ বছর চেষ্টা করেছি মাগুরার মানুষকে ভালো রাখার। ভবিষ্যৎ বলবে, আমি তাদের কতটুকু ভালো রাখতে পেরেছি।'

আরও পড়ুন

মাগুরা-১ আসনে নৌকার মাঝি সাকিব আল হাসান 

নিজের অর্জন ও অবদান সম্পর্কে জানিয়ে তিনি বলেন, 'তবে আমি মনে করি, মাগুরার মানুষ স্বপ্নেও যা ভাবেনি তার চেয়ে বেশি উন্নয়ন করেছি। মাগুরার মানুষের সুশাসন নিশ্চিত করেছি। নিশ্চিন্তে ঘুমানোর রাস্তা ঠিক করে দিয়েছি। নিশ্চিন্তে মানুষ তাদের দৈনন্দিন জীবন-যাপন করতে পারেছে। ব্যবসায়ীরা স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবসা করতে পারেছে।'

মনোনয়ন না পাওয়ার বিষয়ে শিখর বলেন, 'দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা ও মনোনয়ন বোর্ড বসে যাচাই-বাছাই করে আমার বিকল্প সাকিব আল হাসানকে মনোনয়ন দিয়েছে। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে মনে করি।'

Shikhor3
সাকিবের পাশে থাকার ঘোষণা শিখরের। ছবি: সংগৃহীত

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা মাগুরা-১ আসনে সাকিব আল হাসান এবং মাগুরা-২ আসনে বীরেন শিকদারকে মনোনয়ন দিয়েছেন। একজন আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে তাদের বিজয় এনে দিতে নিজ 'ক্ষুদ্র সামর্থ্য'র মধ্যে যা যা করণীয় তা করবেন বলে জানান সাইফুজ্জামান শিখর৷

আরও পড়ুন

শতাধিক আসনে নৌকার নতুন মুখ 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক এই এপিএস বলেন, 'সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে থেকে, তাদের পরামর্শ থেকে শুরু করে যেকোনো সহযোগিতা করা লাগে, সেটা আমার পক্ষ থেকে থাকবে।'

সাকিব আল হাসানের রাজনৈতিক কোনো দক্ষতা নেই, জনগণ তাকে কতটা গ্রহণ করবে- এমন প্রশ্নের জবাবে শিখর বলেন, 'সাকিব যদি সাকিব আল হাসান হিসেবে দাঁড়াতে যেত তাহলে আমরা বলতে পারতাম তার কোনো বেইজ নেই, সাংগঠনিক দক্ষতা নেই, কর্মী নেই, জনসম্পৃক্ততা নেই, সে কী করবে! কিন্তু সে তো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে গিয়েছে এবং মাগুরায় আওয়ামী লীগ অত্যন্ত শক্তিশালী।'

শিখর বলেন, 'আমরা শেখ হাসিনার যেকোনো সিদ্ধান্তের প্রতি আস্থাবান। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সাকিব আল হাসান দলের মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করবে, তখন সমস্ত আওয়ামী লীগ সাকিব আল হাসানের পক্ষে থাকবে। সুতরাং রাজনীতি তার বোঝাও লাগবে না, করাও লাগবে না।'

মাগুরা সাকিব জিতবে নাকি আওয়ামী লীগ জিতবে-এমন প্রশ্নের জবাবে শিখর বলেন, 'সাকিব আওয়ামী লীগের প্রার্থী, অবশ্যই মাগুরায় সাকিব আল হাসান জিতবে৷ তাকে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে। সুতরাং তাকে ভাবার কোনো অবকাশ নেই, সে নতুন মানুষ। ইলেকশন করবে আওয়ামী লীগ। নেত্রী নৌকা দিয়েছেন তার হাতে।'

এমপি শিখর বলেন, 'মাগুরা আওয়ামী লীগ অত্যন্ত শক্তিশালী এবং ঐক্যবদ্ধ। সুতরাং এখানে চিন্তার কোনো কারণ নেই।'

বিভিন্ন আসনে অনেক স্বতন্ত্র ও বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড়াচ্ছেন, সেখানে আপনি কেন দাঁড়াচ্ছেন না? এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'বিদ্রোহী প্রার্থী না দাঁড়ানোর বড় কারণ হচ্ছে আমার জন্ম হয়েছে আওয়ামী লীগ পরিবারে, নৌকা ও জয় বাংলা এই পরিবেশে জন্ম। সেখানে কীভাবে সম্ভব আমি নৌকার প্রতীকের বিরুদ্ধে গিয়ে নির্বাচন করি?'

আরও পড়ুন

জোট প্রশ্নে কোন কৌশলে এগোচ্ছে আওয়ামী লীগ? 

শিখর বলেন, 'আমার বাবা আছাদুজ্জামান পাঁচবারের সংসদ সদস্য ছিলেন। আমার জন্ম ৭১ সালে, সেই ৭০ এর নির্বাচনেও আবার বাবা নৌকা নিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ও চেতনার নাম নৌকা। আওয়ামী লীগের মাধ্যমেই স্বাধীনতা এসেছে। সুতরাং এই দলের বিরুদ্ধে গিয়ে নির্বাচন করা আদৌ যুক্তিযুক্ত কি না আমি জানি না।'

Shikhor2
প্রধানমন্ত্রীর এপিএস হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন শিখর। ছবি: সংগৃহীত

শিখর বলেন, 'মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার মতো ক্ষুদ্র কর্মীকে তার পাশে রেখে দীর্ঘ ১৫ বছর কাজের সুযোগ করে দিয়েছিলেন, আমাকে মনোনয়ন দিয়েছিলেন। সুতরাং নৌকার বিরুদ্ধে গিয়ে আমি নির্বাচন করব- এটা ভাবারও কোনো সুযোগ নেই। নৌকা বলুক, আর যেই বলুক, আমি নৌকার বাইরে গিয়ে নির্বাচন করব না।'

আওয়ামী লীগের এই তরুণ নেতা বলেন, 'নেত্রী প্রার্থিতা একদম উন্মুক্ত করে দিয়েছেন, তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আমি নৌকার বিরুদ্ধে গিয়ে নির্বাচন করব না, এটাই আমার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। আমার বাবা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। উনি স্বাধীনতা সংগ্রামের একটা অংশীদার। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বাবা মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রাম পরিষদ মাগুরার কনভেনার ছিলেন। সেই নৌকার বিরুদ্ধে আমি নির্বাচন করব, এটা আমি স্বপ্নেও ভাবি না।'

আরও পড়ুন

ভোটে লড়তে পদ ছাড়ার হিড়িক 

আওয়ামী লীগের গত জাতীয় সম্মেলনের আগে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন- নির্বাচনের পরে নির্ধারিত সময়ের আগে একটা সম্মেলন হবে। সেই সম্মেলনে আপনি কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটিতে কোনো পদ-পদবি প্রত্যাশা করছেন কি না- এমন প্রশ্নে শিখর বলেন, 'এটা ভবিষ্যৎ বলবে, নেত্রী বলবেন। আমরা তার ক্ষুদ্র কর্মী হিসেবে আমাদের যেখানে যতটুকু দরকার সেখানে ততটুকু কাজ করি, চেষ্টা করি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত নেবেন কাকে দিয়ে কোথায় কাজ করাবেন। জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে যে দায়িত্ব দেবেন আমি নিষ্ঠার সাথে সেই দায়িত্ব পালন করতে বাধ্য।'

শিখর বলেন, 'যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার সেটা শেখ হাসিনা নেবেন, এখানে আমাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কিছু নেই। আমার মতো হাজার হাজার কর্মী আছে, সুতরাং উনিই ভালো জানেন কাকে দিয়ে কাজ করালে দলের সাংগঠনিক দক্ষতা, শক্তি বাড়বে। উনিই বেছে নেবেন, ১০০ জন কিংবা ৭০ জন নেবেন কি না।'

এক প্রশ্নের জবাবে শিখর বলেন, 'আমি নিজেকে গত পাঁচ বছর এমপি হিসেবে ভাবিনি, মানুষের সেবক হয়ে কাজ করেছি। মানুষের মানুষের পাশে থেকে বরাবরের মতোই। চায়ের দোকানে আড্ডা, রাস্তায় দাঁড়িয়েছি, অটোরিকশা চড়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়েছি, তাদের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছি। আমার বাড়ির দরজা কখনো বন্ধ ছিল না। ফজরের নামাজের পর থেকে গভীর রাত অবধি মানুষ এসেছে, কোনো বাধা-নিষেধ ছিল না। কোনো বাছ-বিচার ছিল না, সবাই আসতে পেরেছে। সংসদ সদস্য ছিল একটা আইডেন্টিটি। রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে সব সময় মানুষের সাথেই সম্পর্ক ছিল, ভবিষ্যৎও মানুষের পাশেই থাকব। ক্ষুদ্র সামর্থ্যের মধ্য দিয়ে আমৃত্যু মানুষের কল্যাণের জন্য যতটুকু করার দরকার তাই দিয়েই তাদের পাশে থাকবো।'

কারই/জেবি