জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
০৫ মে ২০২৩, ০৪:৩৩ পিএম
রাজধানীর লালবাগে নকল সার্টিফিকেট তৈরিকারী চক্রের হোতাসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। এই তালিকায় একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক ছাড়াও উচ্চতর পড়াশোনা করে আসা একজন প্রকৌশলীও রয়েছেন। তারা হলেন- প্রকৌশলী জিয়াউর রহমান, তার স্ত্রী নুরুন্নাহার মিতু, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার ইয়াসিন আলী ও দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটির ডিরেক্টর বুলবুল আহমেদ।
ডিবি বলছে, চক্রের হোতা জিয়াউর রহমান। তিনি বিদেশে উচ্চতর পড়াশোনা করেছেন। দেশে ফিরে শিক্ষা নিয়ে কাজ করতে গিয়ে জড়িয়ে পড়েন নকল সার্টিফিকেট তৈরিতে। জিয়া মূলত একজন সহযোগীকে দিয়ে এই কাজ করাতেন। তার নাম ইয়াসিন। আর তাকে এই কাজে সহায়তা করতেন দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটির ডিরেক্টর বুলবুল আহমেদ। তারা এখন পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষের কাছে এসব জাল সার্টিফিকেট বিক্রি করেছেন।

লালবাগ বিভাগের ডিবির ডিসি মশিউর রহমান বলেন, জিয়া বিলাসবহুল জীবনযাপন করতেন। এই জাল সার্টিফিকেট বিক্রি করে তিনি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটও কিনেছেন। যা আমরা তদন্তে ও তার মুখ থেকে জানতে পেরেছি। মূলত জিয়া এক একটি সার্ফিফিকেট বিক্রি করতেন তিন লাখ টাকায়। আর সেটি তৈরির জন্য তার খরচ হতো মাত্র ১০০ টাকা। যা সবটাই লাভ ও অবৈধ টাকা। তাদের মধ্যে কেউ ১৪ বছর, কেউ ১২ বছর ধরে এসব কাজ করে আসছিলেন।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তা পরিচয়ে প্রতারণা, অবশেষে ধরা
পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, অনলাইন বিজ্ঞাপন দিয়ে জাল সার্টিফিকেট বিক্রি করছে বলে আমরা জানতে পারি। তারা সার্টিফিকেট, মার্কশিট, ট্রান্সক্রিপট ও টেস্টিমোনিয়াল বানিয়ে দেয়। যাতে মানুষেরা দেশ বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে।
মশিউর রহমান বলেন, তাদের হাতে বানানো এই ভুয়া সার্টিফিকেটগুলো হাজার হাজার মানুষের কাছে চলে গেছে। ফলে তারা আসল সার্টিফিকেটধারীরা এই নকল সার্টিফিকেট কেনা ব্যক্তিদের কাছে প্রতিবন্ধক হচ্ছেন।

জিয়া এর আগে র্যাব, ডিবি, সিআইডি, পুলিশের কাছে গ্রেফতার হয়েছেন। তারা মূলত ব্যাকডেটেড বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সার্টিফিকেট বিক্রি করতেন। তারা নর্থসাউথ ও ইনডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট তৈরি করতেন। এছাড়া তারা উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়েরও সার্টিফিকেট বিক্রি করতেন। এই চক্রের সাথে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী, কোষাধ্যক্ষ ও লোকজন জড়িত। সে ব্যাপারে আমরা বিস্তারিত তথ্য জেনে জানাতে পারব।
আরও পড়ুন: ফিজিওথেরাপিস্ট মাহফুজের অভিনব প্রতারণা
ডিবির লালবাগ বিভাগের ডিসি জানান, তারা মূলত অনলাইনে ডিজিটাল পদ্ধতিতে এই ব্যবসা চালাচ্ছিলেন। প্রথমে জিয়া ও তার স্ত্রীকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর বাকিদের গ্রেফতার করা হয়। তারা অনেক দিন ধরেই এই কাজ করে আসছিলেন। বিভিন্নজনকে সার্টিফিকেট ও এডুকেশনাল কনসালটেন্সির কথা বলে কারও কাছে তিন লাখ, কারও কাছে এক লাখ ৮০ হাজার, এক লাখ ২০ হাজার টাকা নিয়েছে চক্রটি। যেগুলোকে অনলাইনে দেওয়া যায় না তাদের কাছ থেকে লামসাম টাকা নিত। হাজার হাজার সার্টিফিকেট তৈরি করে বিভিন্নজনকে দিয়েছে তারা। যেগুলো বেশির ভাগই বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে বানানো। তবে এই কাজটি করতেন একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারকে দিয়ে, যার নাম ইয়াসিন। তিনি এসব স্বীকার করেছেন।

মশিউর জানিয়েছেন, নামিদামি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে বানানো ও হাজার হাজারজনকে এসব সার্টিফিকেট দিয়েছেন বলে জিয়া ডিবিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন। তিনি এক সময় নীলক্ষেতে এসব কাজ করতেন। কিন্তু পরিস্থিতি ভালো না জেনে লালবাগে বাসায় এসব কাজ করছেন। এজন্য তিনি স্ক্যানার, মেশিন ও প্রিন্টার বসিয়ে একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারকে দিয়ে হাজার হাজার জাল সার্টিফিকেট, মার্কশিটপত্র, ট্রান্সক্রিপট ও টেস্টিমোনিয়াল তৈরি করে বিক্রি করেছেন। তবে তিনি যেসব প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট জাল করেছেন অনেকগুলোর অস্তিত্ব এখন নেই। আবার কোনোটা আছে। এছাড়া বোর্ডের নামেও সার্টিফিকেট তৈরি করতেন তিনি।
আরও পড়ুন: প্রতারিত হয়ে তিনি নিজেই শুরু করেন প্রতারণা
ডিবির লালবাগ বিভাগের ডিসি বলছেন, এসব সার্টিফিকেট খালি চোখে দেখলে বোঝার উপায় নেই যে, এগুলো জাল সার্টিফিকেট। এগুলোর ছাপ, লেখা, অ্যাম্বুস সব অরিজিনাল মনে হবে। তিনি স্বীকার করেছেন, এই চক্রে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও বোর্ডের কর্মকর্তারা জড়িত। তাদের টাকা দিয়েই তিনি এসব কাজ করতেন। এছাড়া আরও কিছু লোক আছে যারা মোটা অংকে সার্টিফিকেট বিক্রি করেন, তারা তার কাছে এসব সার্টিফিকেট নেন। জিয়ার সঙ্গে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জড়িত আছেন, তারা কীভাবে কাজ করেছেন- এসব নিয়ে আমাদের তদন্ত চলমান থাকবে।
এমআইকে/জেবি