images

জাতীয়

ফেব্রুয়ারি এলেই ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করা হয় শহীদ মিনার!

খলিলুর রহমান

১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৪:০১ পিএম

ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিসৌধ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রস্থল ঢাকা মেডিকেল কলেজের বহিঃপ্রাঙ্গণে অবস্থিত এই সৌধে প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি হাজার হাজার মানুষ ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবস উপলক্ষে শহীদ মিনারের যত্ন বাড়লেও বছরজুড়ে গুরুত্বপূর্ণ এই স্থাপনাটি পড়ে থাকে অযত্ন-অবহেলায়। ২১ ফেব্রুয়ারির আগেই শুধু ধোয়া-মোছা আর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ চলে এখানে।

গত শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সুষ্ঠুভাবে পালনের জন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই বেষ্টনি দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে শহীদ মিনারের চারপাশ। সেই সঙ্গে দক্ষিণ ও পূর্বদিকের শহীদ মিনারের প্রবেশপথ লোহার শিকল দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন: আমাদের শহীদ দিবস যেভাবে সারা বিশ্বের হলো

এদিন পুরো শহীদ মিনার এলাকায় পুলিশ সদস্যদের কড়া পাহারায় দেখা গেছে। পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা ঢাকা মেইলকে জানিয়েছেন, গত তিন দিন থেকেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ভেতরে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। ভেতরের অংশ ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করার কাজ চলছে। এছাড়া মূল বেদীসহ সংলগ্ন এলাকায় নতুন করে রঙের প্রলেপ দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা শহীদ মিনারের চারদিকে সিসিটিভি স্থাপনের কাজ করছেন।

minar2

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সারা বছর অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকে জাতীয় শহীদ মিনারটি। শুধু ফেব্রুয়ারি মাস এলেই এখানে চলে মৌসুমি পরিচ্ছন্নতা অভিযান। হাইকোর্টের নির্দেশনা বড় করে লেখা থাকলেও সেদিকে যেমন মনোযোগ থাকে না কারও। ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরাও এই নির্দেশনার তোয়াক্কা করেন না বলে জানা গেছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গেইটে ভাসমান চায়ের দোকানি মকলেছুর রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় প্রায় ১০ বছর থেকে চা বিক্রি করি। কিন্তু বছরের প্রতিটি দিনই শহীদ মিনারে শত শত দর্শনার্থী ঘুরতে আসে। এছাড়া ঢাকায় বসবাসরত অনেকেই শহীদ মিনারে গিয়ে বিশ্রাম নেন। আর ওই দর্শনার্থী ও বিশ্রামকাঙ্ক্ষীদের দ্বারা বছরের প্রতিটি দিনই ক্ষুণ্ণ হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের মর্যাদা।’

এই চা বিক্রেতা জানান, অনেকে শহীদ মিনারের মূল বেদিতে উঠে পড়েন। সেখানে ইচ্ছেমতো ঘুরে বেড়ান, সেলফি তোলেন ৷ এমনকি পায়ে জুতা নিয়েও অনেককে শহীদ মিনারের বেদিতে উঠতে দেখা যায়।

আরও পড়ুন: ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে ঢাবির প্রস্তুতি সম্পন্ন

ভাসমান বাদাম বিক্রেতা মাহবুব ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় অনেক দিন ধরে বাদাম বিক্রি করি। কারণ এখানে অনেকেই পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসেন। এখানে এসে তারা মিনারের পাদদেশে বসেন। তবে বেশিরভাগ সময় প্রেমিক-প্রেমিকারা শহীদ মিনারে এসে অবসর সময় কাটান। তাদের কাছে আমি বাদাম বিক্রি করে থাকি।’

বাদাম বিক্রেতা বলেন, ‘অনেক সময় দেখা যায়, প্রেমিক-প্রেমিকারা শহীদ মিনার চত্বরের ভেতরে বসে প্রকাশ্যে ধূমপান করছেন। আবার বাদামের খোসাসহ নানা ধরনের খাবারের উচ্ছিষ্ট ফেলে দেন। কেউ কেউ মিনারের পাদদেশকে রাস্তা হিসেবে ব্যবহার করেন।’

minar2

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাজন মিয়া ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘বছরজুড়েই মিনারের চারপাশে ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকে। এছাড়া মিনারের পাদদেশে পাখির মল পড়ে সাদা হয়ে যায়। এমনকি ভবঘুরেরা এখানে এসে শুয়ে থাকে। এসব অব্যবস্থাপনা ও অবহেলা রোধে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয় না কর্তৃপক্ষ।’ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আরও সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন বলে মনে করেন এই শিক্ষার্থী।

সংবিধানের ১০২নং অনুচ্ছেদ ও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনায় শহীদ মিনারের আশপাশে ভবঘুরেদের অবস্থান, অসামাজিক কার্যকলাপ, মিটিং মিছিল ও পদচারণার ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। শহীদ মিনারের একপাশে এসব নিয়ম-কানুন সম্বলিত নোটিশ বোর্ডও রয়েছে। তবে সেই নোটিশ বোর্ডের দিকে নজর নেই কারও।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আসলে শহীদ মিনার এলাকা উন্মুক্ত থাকার কারণে ঠিক যেভাবে রাখা দরকার সেইভাবে রাখা যাচ্ছে না। আসলে কোনো উন্মুক্ত জায়গাই সঠিকভাবে রাখা যায় না।’

আরও পড়ুন: দলবেঁধে জুতা পায়ে শহীদ মিনারে গ্রাজুয়েটরা

প্রক্টর বলেন, ‘শহীদ মিনার ভাষা আন্দোলনের প্রতীক। এটা বাঙালি জাতির প্রতীক। এই শহীদ মিনারকে আমরা যেভাবে রাখতে চাই, ঠিক সেইভাবে রাখতে পাইছি না। তবে দর্শনাথীসহ সবার সহযোগিতা থাকলে এটাকে আরও বেশি সুন্দর রাখা যাবে।’

কেআর/জেবি