আব্দুল হাকিম
২৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:৫৫ এএম
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা টানা প্রায় ১৫ বছর ক্ষমতা ধরে রেখেছিলেন। সবকিছু ছিল তার নিয়ন্ত্রণে। প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে নিজের লোক সেট করেছিলেন তিনি। তারা পেশাদারিত্ব বাদ দিয়ে দেখিয়েছেন দলীয় আনুগত্য। সারাক্ষণ গুণগানে ব্যস্ত ছিলেন সরকারপ্রধানের। কারণে-অকারণে শেখ হাসিনার নাম ব্যবহার করতেন।
আরও পড়ুন: বৃক্ষসেবার নামে ‘পার্ক দখল’
এই ধারাবাহিকতায় সরকারি ওয়েবসাইটগুলো শেখ হাসিনার গুণকীর্তনে ভরপুর ছিল। গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে সবকিছুতেই বড় পরিবর্তন এসেছে। তবে প্রায় দেড় বছরেও সরকারি অনেক ওয়েবসাইটে বহাল রয়েছে ফ্যাসিস্ট তকমা পাওয়া গণহত্যার অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া শেখ হাসিনার গুণগান।
সরকারি ওয়েবসাইট ও উপজেলা পর্যায়ের অফিসগুলোতে শেখ হাসিনার ছবি, পোস্টার এবং তার প্রশংসামূলক লেখা এখনো বহাল রয়েছে। ক্ষমতার শীর্ষে থাকার সময় তিনি দেশের বিভিন্ন প্রকল্পকে রাজনৈতিক আঙ্গিকে ব্যবহার করতেন, সেই রাজনৈতিক দাপট এখনো সরকারি প্রতিষ্ঠানে দৃশ্যমান। শুধু সরকারি প্রকল্পে নয়- অনেক জায়গায় পোস্টার, ব্যানার ও ওয়াল স্ট্যান্ডিংয়ে লেখা আছে তার গুণগান।
আরও পড়ুন: আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস
ওয়েবসাইটে এবং অফিসে এই অবস্থার কারণে সাধারণ নাগরিকরা বিভ্রান্ত হচ্ছেন। অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা করছেন। সরকার পরিবর্তনের পরও কেন এসব সরানো হচ্ছে না- সেটা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। তাদের মতে, এটি সরকারের রাজনৈতিক নিরপেক্ষতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং নতুন প্রশাসনের স্বচ্ছতা প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, ফরিদপুর, বরিশালসহ বিভিন্ন জেলা পর্যায়ের ওয়েবসাইট পরিদর্শনে দেখা গেছে, উপজেলা অফিসে এখনো ফ্যাসিস্ট সরকারের ছবি, উক্তি ও প্রচারণামূলক লেখা বহাল তবিয়তে আছে।

অভিযোগ রয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশ ও ছাত্রজনতার থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকলেও তার রাজনৈতিক প্রভাব সরকারি ওয়েবসাইট ও অফিসে বিরাজ করছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় আইনজীবী ও প্রশাসনিক বিশেষজ্ঞরা বলেন, সরকারি ওয়েবসাইট ও অফিসে কোনো রাজনৈতিক উপাদান থাকা উচিত নয়। পোস্টার ও ছবির মাধ্যমে ব্যক্তি‑প্রচার চললে তা প্রশাসনিক স্বচ্ছতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
তারা আরও উল্লেখ করেন, দেশের জনগণ সাবেক প্রধানমন্ত্রীর স্বৈরাচারী শাসনকাল থেকে শিক্ষা নিয়েছে, আর এ ধরনের উপকরণ এখনো সরকারি স্থাপনায় থাকাটা উদ্বেগের কারণ।

একাধিক জেলা ও উপজেলা কর্মকর্তার কাছ থেকে জানা গেছে, ওয়েবসাইটে পোস্টার ও ছবি অপসারণের জন্য কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।
নাগরিকরা বলছেন, সরকার পরিবর্তনের পরও যদি এই উপকরণ রয়ে যায়, তাহলে নতুন প্রশাসনের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। শেখ হাসিনার রাজনৈতিক স্বার্থে সরকারি প্রকল্প ও ওয়েবসাইটকে ব্যবহার করেছেন। নতুন সরকার যখন দায়িত্ব গ্রহণ করেছে, প্রশাসনিক পদক্ষেপের অভাব ও বিলম্ব এখনো তার স্বৈরাচারী প্রভাবকে দৃশ্যমান রাখছে।
বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা অফিসের ওয়েবসাইট থেকে স্ক্রিনশট শেয়ার করে অনেকেই অভিযোগ করেছেন, সরকার পরিবর্তনের পরও সরকারি স্থাপনায় স্বৈরাচারী সরকারের প্রতীক বহাল রয়েছে। এতে সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার প্রতি আস্থা কমছে।
আরাফ তাসনিম নামের এক ব্যক্তি লিখেছেন, বাহ! সরকার পরিবর্তনের পরও সরকারি স্থাপনায় স্বৈরাচারী সরকারের প্রতীক বহাল! দেশ কি আসলে সৈরাচারের দোসরের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে? আর কতদিন এরা থাকবে? প্রশাসনের কি নজরে আসে না?
‘আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্পে শেখ হাসিনার ছবি এখনো ঝুলছে। এ প্রসঙ্গে প্রকল্পটির সাবেক যুগ্ম-সচিব এবং উপ-প্রকল্প পরিচালক (প্রশাসন ও সমন্বয়) নজির আহমদ ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘এই প্রকল্প শেষ হয়ে গেছে আগেই। তবে প্রজেক্ট শেষ হলেও এখনো পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক হিসেবে মানুষ ব্যবহার করছে। প্রজেক্টের যারা লোক ছিল তারা ব্যাংকে ট্রান্সফার হয়ে গেছে। তাই এটার আর কোনো মালিক নাই। এগুলো দেখার কোনো লোক নাই।’
আরও পড়ুন: ঝকঝকে হাতিরঝিলের ‘বেহাল দশা’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারি ওয়েবসাইট ও অফিস থেকে স্বৈরাচারী রাজনৈতিক উপাদান অপসারণ করা জরুরি। পুরনো পোস্টার ও ছবি সরিয়ে প্রকল্পের তথ্য, উপকারভোগীর তালিকা এবং সরকারি সেবা‑সংক্রান্ত উপকরণ প্রদর্শন করতে হবে। প্রশাসনিক পদক্ষেপ না নিলে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও স্বৈরাচারী নেতার ব্যক্তিগত প্রভাবের মধ্যে বিভ্রান্তি চলতেই থাকবে।
এএইচ/জেবি