মোস্তফা ইমরুল কায়েস
২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৫৯ পিএম
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের আল্লাহ করিম মসজিদ থেকে বেড়িবাঁধ পর্যন্ত সড়কটির প্রস্থ ৩০ ফুট। কিন্তু সেটি বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাসমান কাঁচাবাজার, ফলমূল ও কাপড়ের দোকানে ভরে যায়। ফলে ৩০ ফুট প্রস্থের সড়কটি সরু হতে হতে প্রায় পাঁচ ফুট থাকে৷ যা দিয়ে চলাচল করে বিভিন্ন যানবাহন। ফলে এই সড়কে সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত যানজট লেগেই থাকে।
সরেজমিন সড়কটি ঘুরে দেখা গেছে, বেড়িবাঁধ পর্যন্ত সড়কটির দৈর্ঘ্য অর্ধ কিলোমিটারেরও কম। কিন্তু আল্লাহ করিম মসজিদের পেছনের অংশ থেকে শুরু হয় ভাসমান দোকান বসানোর প্রতিযোগিতা। কেউ বসে ভ্যানে কাঁচা সবজি নিয়ে, কেউ কলা, মাছ, ফলমূল ও বিভিন্ন গার্মেন্টস কাপড় নিয়ে। গত ৫ আগস্টের আগে এই অর্ধকিলোমিটার জায়গাজুড়ে বিশাল অংকের চাঁদাবাজি হতো। কিন্তু এখন সেই পরিস্থিতি না থাকলেও চিত্র বদলায়নি। দোকানিরা আগের মতোই বসছেন। নিয়ম-নীতির কোনো তোয়াক্কা নেই।
সন্ধ্যার পরপর সড়কটিতে যান চালনাচল করা কঠিন হয়ে পড়ে। বিশেষ করে বসিলা এবং ঢাকা উদ্যানবাসীসে পড়তে হয় চরম ভোগান্তিতে। মাঝে মাঝে যানজট লাগলে তা ছাড়তে কয়েক ঘণ্টা লেগে যায়।
আল্লাহ করিম থেকে বেরিবাঁধ পর্যন্ত হাফ কিলোমিটারের সড়কে দেড় শতাধিক দোকান রয়েছে। রাত আটটার পর থেকে এই সড়কে যান চলাচল বাড়ে। ফলে অল্পতেই যানজট লেগে যায়।
কথা হচ্ছিল সবজি বিক্রেতা সবুজের সাথে। তিনি বলছিলেন, ‘এখন আর আমাদের কোনো চাঁদা দিতে হয় না। আগে যেভাবে বসতাম, এখনো সেভাবে বসি। পুলিশ আগে বাধা দিত। কিন্তু এখন কেউ বাধা দেয় না।’

সবুজের কথায় বোঝা গেল সড়কটি দখলে নিয়ে তারা নিজের মতো ব্যবসা চালাচ্ছেন। কিন্তু এই সড়ক ব্যবহার করে লোকজন ঠিকমত যে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে না সেদিকে তাদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।
গত দুই মাসে লক্ষ্য করা গেছে, আগে যেখানে প্রায় দেড়শ দোকানপাট বসত, সেখানে এখন দোকানের সংখ্যা বাড়ছে। ফলে এই সড়কে যানজটের পরিমাণও বেড়েছে। এই যানজটের কারণে অনেকেই বিরক্ত হয়ে লাউতলা ঢাকা উদ্যান এলাকা ছেড়ে আদাবর ও লালমাটিয়া এলাকায় বাসা খুঁজছেন।
মাসুদ আহমেদ নামে একজন জানান, তিনি তিন মাস আগে লাউতলা এলাকায় বাসা নিয়েছেন। সকালে আসার সময় তেমন যানজট পান না। কিন্তু বিকেলে অফিস শেষ করে বাসায় ফিরতে তার রাত ৯টা বেজে যায়। কোনোদিন আল্লাহ করিম থেকে বেরিবাঁধ পর্যন্ত তাকে বহনকারী প্রাইভেটকার পৌঁছাতে ৪০ মিনিট সময় লাগে। এমন অবস্থা গত প্রায় তিন মাস ধরেই চলছে। ফলে তিনি সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, বাসা বদল করবেন।
আরও পড়ুন
শুধু মাসুদ আহমেদ নন, তার মতো অনেকে এখন এই সড়কে যাতায়াত করতে গিয়ে বিরক্ত হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। কোনোদিন যানজট থাকে গভীর রাত পর্যন্ত। ট্রাফিক সদস্যরা এই যানজট নিরসনে তেমন ভূমিকা রাখতে পারছেন না বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের ট্রাফিকের সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ করা হলেও কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
জানা গেছে, স্বল্প দূরত্বের এই সড়কে যানজট লেগে থাকায় তা নিরসনে বিভিন্ন সময় উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও কোনো কাজে আসেনি। বিশেষ করে সাবেক কাউন্সিলর এবং এমপির মধ্যে বিরোধ থাকায় সেটি সম্ভব হয়ে হয়নি বিগত সময়ে। তার ওপর চাঁদাবাজি তো ছিলই।

চলতি বছর সড়কটির টিভিএস শো-রুমের সামনে একটি ওভারব্রিজ তৈরি করা হয়েছে। এর বিপরীত পাশে বেরিবাঁধে যাওয়ার সড়কটি ভাসমান দোকানে ভরপুর থাকায় অনেকে সেটি ব্যবহার করছেন না। ফলে অনেক টাকায় বানানো ওভারব্রিজটিও কাজে আসছে না। এখন সেটি ভাসমান মাদক গ্রহণকারীদের অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে।
এলাকার স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সড়কটিতে আগে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন স্থানীয় নেতা নিয়মিত চাঁদা তুলতেন। কিন্তু গত ৫ আগস্টের পর তারা হাওয়া হয়ে গেছেন। নেতারা হাওয়া হলেও সড়ক ছাড়েননি ব্যবসায়ীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত সরকারের সময়ে আওয়ামী লীগের কয়েকজন কর্মী এই সড়ক থেকে নিয়মিত চাঁদা তুলে সেটি ভাগ করতেন। বাকি টাকা পুলিশের পকেটে দিতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
সম্প্রতি সরেজমিন সড়কটিতে ট্রাফিক পুলিশের কোনো উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি। দিনের পর দিন এমন ভোগান্তির বিষয়টি ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা জানলেও আসেন না বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মীর খাইরুল ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘এসব নিয়ে পুলিশ-সিটি করপোরেশন যৌথভাবে কাজ করছে। ইতোমধ্যে উত্তর সিটির বিভিন্ন সড়কে এমন অবস্থার উন্নতি ঘটেছে। আমরা মোহাম্মদপুরের বিষয়টিও সমাধান করব আশা করছি।’
এমআইকে/জেবি