কাজী রফিক
০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:৪১ পিএম
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবির আন্দোলনে শুরু থেকেই সক্রিয় ছিলেন সাজেদুল হক। পরবর্তী সময়ে এক দফায় রূপ নেওয়া আন্দোলনে হাসিনা সরকারের পতনের মাত্র একদিন আগে ৪ আগস্ট ছাত্রলীগের হামলায় মৃত্যুর হাত থেকে অল্পের জন্য বেঁচে যান তিনি। আহত হওয়ার পর গত প্রায় দুই মাসে চার হাসপাতালে ঘুরেছেন সাজেদুল। তবে পরিবারের দাবি, এখনো কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা মেলেনি।
সাজেদুল হক চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইইউসির তৃতীয় সেমিস্টারের ছাত্র। বাড়ি পটিয়ায়।
সাজেদুল হক আহত হওয়ার বর্ণনা দেন পিতা আমিনুল হক। জানান, গত ৪ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যান সাজেদুল। ঘটনাস্থল চট্টগ্রাম। সেখানে আক্রমণ করে পুলিশ। সশস্ত্র বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পেতে সবাই এলোমেলো দৌড় দেন। আশ্রয় নেন আশপাশের গলিতে৷ সাজেদুল হক যে গলিতে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করেন, সেখানে আবার আক্রমণ করেন স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এ সময় ধারালো অস্ত্র নিয়ে ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী সাজেদুলকে আক্রমণ করেন৷ এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করেন তাকে।
আমিনুল হক বলেন, 'জবাই করার ছুরি আছে না, সেগুলো দিয়ে এলোমেলো কোপ দিছে। ওরা ভাবছে আমার ছেলেটা মারা গেছে৷ তখন ওরা চলে যায়৷ পরে আশপাশের বাসা-বাড়ির মানুষ পানি খাওয়ায়। এক ভ্যানওয়ালা ওরে হাসপাতালে নিয়ে যায়৷ আমাকে ফোন করে।'
সাজেদুলকে প্রথমে নেওয়া হয় আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালে। তবে সেখানকার চিকিৎসকরা তাৎক্ষণিকভাবে তাকে চট্টগ্রাম জেলা হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু পরিবারের দাবি, চট্টগ্রাম জেলা হাসপাতালেও জোটেনি সুচিকিৎসা। অপারেশন করা হলেও তা সঠিক হয়নি।
আমিনুল হক বলেন, 'অপারেশন করল। কিন্তু হাতের অপারেশনটা সঠিক হয়নি। আমি এ বিষয়ে কাগজপত্র চাইলেও আমাকে তারা দেয়নি।'
ছাড়পত্র ছাড়াই অন্য বেসরকারি হাসপাতালে ছেলেকে নিতে বাধ্য হন এই পিতা। পরে সেখান থেকে গত শুক্রবার (৪ অক্টোবর) ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে সাজেদুলকে। হাসপাতালটির এক নম্বর ওয়ার্ডের ১০ নম্বর বিছানায় চিকিৎসাধীন আছেন সাজেদুল। চলছে চিকিৎসার প্রস্তুতি। এরইমধ্যে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে।
গত ৪ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত সন্তানের চিকিৎসার পেছনে আড়াই লাখ টাকার বেশি খরচ করেছেন আমিনুল হক। বলেন, 'আমার বাড়ি-ঘর প্রয়োজনে বিক্রি করব, তাও আমার সন্তানের চিকিৎসাটা হোক। আমি এখন পর্যন্ত ছেলেটার সঠিক চিকিৎসা করাতে পারি নাই। হাতে অপারেশন করল, আঙুল নাড়াতে পারে না। অপারেশন সঠিক হয়নি। এখন এখানে (সিএমএইচ) নিয়ে আসছি। আমি আর কিছু চাই না। আমার ছেলের চিকিৎসা চাই।'
কারই/জেবি