পড়াশোনা ভালো লাগে না, তাই ঢাকায় পাড়ি জমায় ১৪ বছর বয়সী কিশোর মো. সাগর মিয়া। কাজ নেয় চায়ের দোকানে। পড়াশোনা না হলেও ইচ্ছে ছিল বড় ব্যবসায়ী হওয়ার। সাগরের সেই স্বপ্ন চিরতরে থেমে গেছে মাত্র ১৬ বছর বয়সে।
গত ২৪ জুলাই একবুক স্বপ্ন নিয়ে পৃথিবী ছেড়েছে সাগর। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রাণ হারানোদের তালিকায় সেও একজন।
বিজ্ঞাপন
ধানমন্ডি ৩২ নম্বর লেকের পাড়ে তাকওয়া মসজিদের পাশের চায়ের দোকানে কাজ করত সাগর। থাকত রায়ের বাজার এলাকায়।
সাগরের মারা যাওয়ার তথ্য জানা যায় চায়ের দোকানের মালিক আজমিনা বেগম থেকে। তিনি জানান, সাগর তার বাসাতেই থাকতেন। ১৯ জুলাই বিকেলে পুলিশের গুলিতে আহত হন সাগর। সময়মতো চিকিৎসা না পেয়ে প্রাণ হারাতে হয় তাকে৷
নিহত সাগর মিয়ার গ্রামের বাড়ি বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাঘধা ইউনিয়নে। সেখানেই থাকেন সাগরের মা আম্বিয়া বেগম, বাবা নুরুল হক হাওলাদার এবং তার ছোট বোন।
বিজ্ঞাপন
সাগরের বাবা পেশায় একজন নিরাপত্তাপ্রহরী। কাজ করেন বরিশালেই। ১৯ জুলাই ছেলে সাগর মিয়া গুলিবিদ্ধ হলেও তার কাছে সে খবর পৌঁছায় দুই দিন পর।
নুরুল হক বলেন, '১৯ তারিখ আমার ছেলেটা গুলি খাইছে৷ আমি জানছি ২১ তারিখ। শুইনাই ঢাকায় আসি। ওর সাথে যারা ছিল, তাদের থেকে শুনছি, ১৯ তারিখ ধানমন্ডি ১৯ নাম্বারে পুলিশ বক্সে লোকজন আগুন দেয়। ওই জায়গায় সাগরও ছিল। পুলিশ ওরে ধইরা গাড়িতে নিয়া যায়৷ বুকে গুলি করতে চাইছিল। ও কইলো, স্যার, আমার বুকে গুলি কইরেন না। পরে পুলিশ ওরে গাড়ি থেকে নামাইয়া কইছে- তুই দৌড় দে৷ দৌড় দিতে কইয়া দুই পায়ে গুলি করছে। যে পুলিশ ওরে গুলি করছে, ও তাগো চিনতো। ও বারবার কইছে, স্যার আপনারা একটু আগেই আমার দোকানে চা খাইয়া আইছেন। আমি চা খাওয়াইছি।'
আহত হওয়ার পর চিকিৎসা জোটেনি সাগরের। কষ্ট ভরা কণ্ঠে বাবা নুরুল হক বলেন, 'ওরে ঢাকা মেডিকেল নিয়া গেল, ওইখানে চিকিৎসা হয় নাই। পরে পঙ্গু হাসপাতালে (নিটোর) নিয়া আসে। এইখানেও খালি গজ কাপড় প্যাচাইয়া রাখছিল। কোনো চিকিৎসা করে নাই।'
পায়ে গুলি লাগার পর সাগর মারা গেল কীভাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে সাগরের পিতা বলেন, 'ওরে তো কোনো চিকিৎসা দেয় নাই। পরে ২৪ তারিখ ওর অপারেশন করার ব্যবস্থা করা হয়। যে গজ কাপড় প্যাচাইয়া রাখছিল, খোলার পর দেখে ছয় দিনে পোকা হইয়া গেছে। পরে পা দুইটাই কাইটা ফালায়। অপারেশনের আগে অ্যানেস্থেসিয়া দিছিলো, অপারেশন হইছে, কিন্তু আমার পোলাডা আর জাগে নাই। মারা গেছে।'
অপারেশনকালে রক্তের প্রয়োজন ছিল সাগরের৷ চিকিৎসরা পাঁচ ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করতে বলেছিলেন। কিন্তু দুই ব্যাগের বেশি রক্তের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন সাগর যে চায়ের দোকানে কাজ করতেন, সেই দোকানের মালিক আজমিনা বেগম।
এই নারী জানান, আহত হওয়ার পর তাকে যে পুলিশ সদস্যরা গুলি করেছিল, তাদের নাম, পরিচয় জানিয়ে গেছে নিহত সাগর।
আজমিনা বেগম বলেন, 'ও আমারে পুলিশের নাম কইয়া গেছে, ওরা কারা মারছে৷ পুলিশ ফাঁড়ির (ধানমন্ডি) ইনচার্জ। একজন ইকরামুল, আরেকজন শরিফুল। একজন গাড়িতে ছিল, একজন সাথে ছিল। ওরে গাড়ি থেকে নামাইয়া গাছের গোড়ায় ফালাইয়া গুলি করছে।'
কারই/জেবি