images

জাতীয়

ট্রাফিকে ভূমিকা প্রশংসনীয় হলেও শিক্ষার্থীদের দ্রুত ঘরে ফেরানোর তাগিদ

মাহফুজ উল্লাহ হিমু

১২ আগস্ট ২০২৪, ০৩:৫৩ পিএম

ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয় গত ৫ আগস্ট। দীর্ঘ স্বৈরশাসনে রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণের ফলে সরকার পতনের সঙ্গে সঙ্গে এসব প্রতিষ্ঠান মুখ থুবড়ে পড়ে। এর সবচেয়ে বাজে প্রভাব পড়ে পুলিশের ওপর। সারাদেশে থানার পাশাপাশি সড়কও ট্রাফিক পুলিশশূন্য হয়ে যায়। এ অবস্থায় রাষ্ট্র সংস্কারের ঘোষণা দিয়ে ট্রাফিকের দায়িত্ব নেন শিক্ষার্থীরা। তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন সাধারণ মানুষও।

শুরু দিকে অল্প কিছু শিক্ষার্থী এতে অংশ নিলেও ক্রমেই এই সংখ্যা বাড়তে থাকে। ট্রাফিক পুলিশের অবর্তমানে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে তরুণদের এই ভূমিকা সর্বমহলে প্রশংসিত হয়। বিশেষ করে তাদের চাঁদামুক্ত সড়ক ঘোষণায় স্বস্তি প্রকাশ করেন চালকরা। তবে ট্রাফিক আইনের পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাবসহ অধিকসংখ্যক শিক্ষার্থীর উপস্থিতি অনেকটাই বিপত্তির তৈরি করে। এ অবস্থায় দ্রুত সময়ের মধ্যে ট্রাফিক পুলিশের উপস্থিতি নিশ্চিত করে শিক্ষার্থীদের পড়ার টেবিলে পাঠানোর দাবি বিশিষ্টজনদের।

যেভাবে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছেন শিক্ষার্থীরা

সরকারের পতনকে কেন্দ্র করে রাজধানীর বেশির ভাগ পুলিশ বক্স ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। বিক্ষুব্ধ জনতা হামলা করে বিভিন্ন থানায়ও। ফলে জীবনের শঙ্কায় কার্যত পুলিশশূন্য হয়ে পড়ে সারাদেশ। এর প্রভাব পড়ে রাজধানীর ব্যস্ততম সড়কগুলোতেও। তবে ট্রাফিক ব্যবস্থার বিশৃঙ্খলা রুখতে এগিয়ে আসেন ছাত্ররা। সবশেষ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার আহ্বানে ইতোমধ্যে অনেক সড়কে ট্রাফিক পুলিশ ফেরত এলেও এখনো সব পয়েন্টে তাদের দেখা যাচ্ছে না। অনেক স্থানে ট্রাফিক পুলিশের সহায়তায় মাঠে রয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

Sorok2

শিক্ষার্থীরা বলছেন, সড়কে ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় মোড়ে মোড়ে যানযট ও বিশৃঙ্খলা হচ্ছে। এ অবস্থায় স্ব-দায়িত্বে তারা এগিয়ে এসেছেন। এ সময় অনেক শিক্ষার্থী ২০১৮ সালে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন চলাকালে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কাজ করা অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করেন। পুলিশ পুরোপুরি মাঠে এলে তারা ঘরে ফিরে যাবেন।

মগবাজার আদ-দ্বীন গলির সামনে মূল সড়কে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কাজ করা সিদ্ধেশ্বরী কলেজের শিক্ষার্থী আবির হাসান ঢাকা মেইলকে বলেন, তাদের গ্রুপের মোট ৭০ জন শিক্ষার্থী রোস্টার করে এই দায়িত্ব পালন করছেন। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত একটি দল এবং বাকিরা পরে দায়িত্ব পালন করবে। যতদিন পুরোপুরিভাবে ট্রাফিক পুলিশ না আসে এ কার্যক্রম চলবে।

আরও পড়ুন

৬ দিন পর সড়কে ট্রাফিক পুলিশ

সড়কে দায়িত্ব পালন করা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির এক স্বেচ্ছাসেবক বলেন, আমরা করোনা মহামারি, নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে সেবামূলক কাজ করে থাকি। সাম্প্রতিক হিট ওয়েভেও বিভিন্ন এলাকায় ছাউনি তৈরি করে কাজ করেছি। এমনকি সবশেষ আন্দোলনে আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা ও উদ্ধারে কাজ করেছি। এখন ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় তাদের দায়িত্বে সহায়তা করছি৷

Sorok3

এদিকে শিক্ষার্থীদের এই প্রচেষ্টায় সর্বাত্মকভাবে সহায়তা করতে দেখা গেছে সাধারণ মানুষকেও। পানি, শরবত ও শুকনা খাবার নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তারা৷ তাদের প্রসংশায় পঞ্চমুখ হয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষেরা।

আরও পড়ুন

শহরে দেয়াল লিখন ও আলপনা এঁকেছে শিক্ষার্থীরা

নাগরিকদের নানা সমস্যা ও অধিকার নিয়ে কাজ করা বাংলাদেশ সাধারণ নাগরিক সমাজের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘ক্রান্তিলগ্নে তারা যে কাজ করেছে তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। এর জন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই।’

শিক্ষার্থীদের দ্রুত পড়ার টেবিলে ফেরানোর তাগিদ

সড়কে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে শিক্ষার্থীদের ভূমিকার প্রশংসা থাকলেও তা দীর্ঘমেয়াদী হওয়ায় নেতিবাচক দিক নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। স্কুলপড়ুয়াদের ওয়ান ওয়ে সড়কে অবস্থানে ঝুঁকি ও ট্রাফিক নিয়ম না জানায় বিশৃঙ্খল অবস্থা নিয়ে কথা বলছেন সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে নতুন সরকারের যাত্রার কয়েক দিন পেরিয়ে গেলেও ট্রাফিক পুলিশ নিশ্চিত না করতে পারায় সরকারের সমালোচনা করেন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষেরা।

Sorok4

‘ট্রাফিক অ্যালার্ট’ নামে দেশের অন্যতম বড় সড়ক বিষয় ফেসবুক গ্রুপে ইশান ইসলাম নামে এক ব্যবহারকারী বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশের কাজে নামানোর ফলে এতোই উন্নত হইছে যে, দুই ঘণ্টার পথ পার হতে আমার পাঁচ ঘণ্টা লেগেছে৷ এদের কারোরই এই বিষয়ে ধারণা নেই।  কীভাবে কাজ করতে হয় তারা জানে না। যে যেভাবে পারছে করছে। এতে আরও ঝামেলা সৃষ্টি হচ্ছে। তাদের কাজ তো এটা নয়, হ্যাঁ দায়িত্ব বোধ থেকে যাই করছে অনেক করছে সবাই। তবে সবার তো আর জানা নেই কীভাবে ট্রাফিক মেইনটেইন করে, কাজ করে। সঠিক না জ্ঞানের অভাবে এমন হচ্ছে, দ্রুত এই বিষয়ে পদক্ষেপ দেওয়া দরকার। দ্রুত এত বিষয়ে দায়িত্ব না নিলে, ঢাকা শহরে নাজেহাল অবস্থা সৃষ্টি হবে।’

আরও পড়ুন

ঝাড়ু-বেলচা নিয়ে সড়ক পরিষ্কারে নাটোরের শিক্ষার্থীরা

এ বিষয়ে সাধারণ নাগরিক সমাজের মহিউদ্দিন আহমেদ ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘দীর্ঘ সময় শিক্ষার্থীদের সড়কে অবস্থান দেশের জন্য মঙ্গলজনক না। এটা তাদের কাজ না। এর মাধ্যমে তাদের মেধা ও শারীরিক ক্ষতি হচ্ছে। তাদের পড়ার টেবিলে থাকা প্রয়োজন। এই সময়ে আমরা সড়কে ট্রাফিক পুলিশ নামাতে পারলাম না, এটা আমাদের জন্য হতাশার বিষয়। তারা প্রথম যখন কাজ করেছে তখম সড়কে কোনো শৃঙ্খলা ছিল না। তখন তারা পাশে দাঁড়িয়েছে। এটা যেন আর দীর্ঘমেয়াদী না হয়।’

Sorok5

হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘সড়কে এখন কোনো শৃঙ্খলা নেই। এতসংখ্যক মানুষ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে রাস্তায় থাকায় তা বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে। সড়কে গাড়ি বাড়ার সাথে সাথে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বাড়ছে। ওয়ান ওয়ে সড়কে তারা দাঁড়িয়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করছে। এখানে দুর্ঘটনার ঝুঁকি রয়েছে। তাদের ট্রাফিক নিয়ম সম্পর্কেও যথেষ্ট ধারণা নেই। নেতৃত্ব দানকারীদের উচিত ছিল সময় নির্ধারণ ও দায়িত্ব বুঝিয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়োগ করা। তবে এসব কোনো সমাধান নয়, ট্রাফিক পুলিশকে দ্রুত সড়কে ফেরাতে হবে।’

এমএইচ/জেবি