images

জাতীয়

গুলিবিদ্ধ শফিকুলের সংসার চলবে কীভাবে, দিশেহারা পরিবার

মোস্তফা ইমরুল কায়েস

২৮ জুলাই ২০২৪, ০৮:৫৮ এএম

রাজধানীর মিরপুর-১০ নম্বরের সুইমিং স্টেডিয়ামের বিপরীতে থাকা মোহনা গার্মেন্টসে চাকরি করেন শফিকুল ইসলাম। গত ১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার বিকেলে কাজ শেষে বাসায় যাওয়ার জন্য বের হন। ফ্যাক্টরি থেকে বের হয়ে প্রধান গেটে পা দেওয়া মাত্রই তার পায়ে আঘাত করে অনেকগুলো ছররা গুলি। পুলিশের ছোড়া গুলিতে তার পা থেকে রক্ত ঝরতে থাকে বলে দাবি করেন তার পরিবার। এমন দৃশ্য দেখে গার্মেন্টস মালিক এবং অন্য কর্মচারীরা তাকে উদ্ধার করে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভর্তি করান।

শফিকুলের পরিবার জানায়, তার (শফিকুল) বাম পায়ে ১০৭টি গুলি লেগেছে। যার অনেকগুলো এখনো বের করা সম্ভব হয়নি। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পায়ের নিচের তালুর অংশ। ক্ষত এতটাই বেশি যে, সেখানে চামড়া গজাতে বেশ কিছুদিন সময় লাগবে। তারপর হয়তো অস্ত্রোপচার হবে। কিন্তু তিনি স্বাভাবিকভাবে আর চলাফেরা করতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন ক্ষত আর কষ্ট নিয়ে ভুগতে হবে।

আরও পড়ুন

‘তারা বিনা দোষে আমার ওপর গুলি চালাইল’

একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির এমন পরিণতিতে চিন্তার ভাজ পড়েছে শফিকুলের পরিবারের প্রতিটি সদস্যের মধ্যে। কীভাবে সংসার চলবে আর কীভাবেই বা তার চিকিৎসার ব্যয় মেটাবে তা নিয়ে দুঃশ্চিন্তা কাটছে না শফিকুলের পরিবারের। নানা শঙ্কা নিয়ে এখন দিন পার করছেন গুলিতে আহত গার্মেন্টসকর্মী শফিকুল ইসলামের স্ত্রী রেখা আক্তার ও তার সন্তানেরা।

রেখা আক্তার ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘উনি তো এখন চাকরি করতে পারছেন না। তবে তিনি সুস্থ হোক এটাই আমাদের প্রত্যাশা। সুস্থ হলে এরপর সামনে আমাদের সংসার চলবে কেমনে? বড় মেয়েটা বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠবে। ভাবছি কীভাবে সংসার চলবে আর কীভাবে তার চিকিৎসার খরচ আমরা বহন করব। এসব চিন্তায় মাথা কাজ করছে না।’ কথাগুলো বলার সময় তার চোখ ছলছল করছিল।

dhaka-1রেখা আক্তার বলেন, তার স্বামী সংসারের একমাত্র একজন উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। কলেজপড়ুয়া মেয়ে আর সাত বছরের ছোট ছেলেকে নিয়ে তাদের সংসার। গুলিতে আহত হয়ে স্বামী হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকায় এখন তাদের সুখের সংসার তছনছ হয়ে গেছে।

রেখা জানান, তার কাছে যা টাকা ছিল কয়েকদিনে সব শেষ হয়েছে। এখন চিকিৎসা আর সংসার চালাবেন কী করে এ চিন্তায় তার চোখে ঘুম নেই।

আরও পড়ুন

‘আমরা কোনো অভিযোগও করতে চাই না’

১৮ জুলাই থেকেই হাসপাতালে আছেন রেখা। বড় মেয়ে এবং তিনি মিলে স্বামীর পাশে থেকে তার চিকিৎসার সময় দিচ্ছেন। আতঙ্কে শফিকুলের গ্রামের বাড়ি বরিশাল থেকে তার কোনো আত্মীয়-স্বজন আসতে পারছেন না। তবে সবাই নিয়মিত খোঁজখবর নিচ্ছেন।

রেখা আক্তার আরও জানান, ‘গার্মেন্টস মালিক এখন পর্যন্ত আমাদের কিছু জানায়নি। হয়তো চলতি মাসের বেতনটা দেবে। কিন্তু সেই টাকাও চিকিৎসায় ব্যয় হবে। এরপর কী হবে বলতে পারছি না।’ রেখা ও তার সন্তানের সঙ্গে কথা বলার সময় শফিকুল ঘুমাচ্ছিলেন।

আরও পড়ুন

কোটা আন্দোলন: দৃষ্টিশক্তি হারানোর শঙ্কায় অর্ধশত

শফিকুলের বড় মেয়ে ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘বাবার পা ভালো হতে কতদিন সময় লাগবে আমরা জানি না। গত বৃহস্পতিবার পায়ের তালুতে চামড়া গজানোর জন্য এক বিশেষ মেডিসিন দেওয়া হয়েছে। এরপর ব্যান্ডেজ করা হয়েছে পুরো পা। তবে তার পায়ে এখন গুলি রয়েছে। প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। তার একটাই প্রশ্ন, আমার বাবা তো কোনো অপরাধ করেনি। সেতো চাকরিতে ডিউটি শেষ করে অফিস থেকে বের হচ্ছিলেন।’

এ সময় শফিকুলের ক্ষত পা দেখিয়ে তার মেয়ে বলেন, ‘বাবার পায়ে এখনো গুলি আছে। প্রথমে গুলি লেগেছিল একটি পায়ের আঙ্গুলে। এরপর আরও গুলি লাগে। এগুলোর সংখ্যা ১০৭ এর কম নয়।’

এমআইকে