মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

‘আমরা কোনো অভিযোগও করতে চাই না’

জেলা প্রতিনিধি, ময়মনসিংহ
প্রকাশিত: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৫:৩৬ পিএম

শেয়ার করুন:

ছেলের মৃত্যু নিয়ে বাবা বললেন, কোনো অভিযোগ নেই, দেশে শান্তি ফিরে আসুক

‘ছেলের মৃত্যুর জন্য কাউকে দায়ী করছি না। আমরা কোনো অভিযোগও করতে চাই না।… আর কোনো বাবা-মায়ের কোল যেন এভাবে খালি না হয়।’ আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন ১৯ জুলাই ময়মনসিংহ নগরে কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত রেদুয়ান হোসেন সাগরের বাবা মো. আসাদুজ্জামান।

২৪ বছর বয়সী রেদুয়ান ফুলবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজে হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের অনার্স চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। নগরীর চৌরঙ্গীমোড় এলাকায় তাদের বাসা।


বিজ্ঞাপন


সাগরের বাবা আসাদুজ্জামান পেশায় ব্যবসায়ী। মা রহিমা খাতুন আট বছর ধরে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী। হঠাৎ ছেলের মৃত্যুতে থমকে গেছে পরিবারটির চলার গতি।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) চৌরঙ্গীমোড়ে কথা হয় সাগরের বাবা আসাদুজ্জামানের সঙ্গে। ছেলের মৃত্যুর শোকে পাথর বাবা বলেন, ‘১৭ জুলাই সাগর সেলুনে গিয়ে চুল-দাড়ি কাটার পর ছেলেটাকে বেশ ভালোই লাগছিল। আমাদের কোনো অসুস্থ আত্মীয় স্বজন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসলেই সাগরের সহযোগিতা নিত। বুঝ হওয়ার পর থেকেই সাগর তা করে আসছে।’

‘১৯ জুলাই বিকালে সাগর বাসা থেকে বের হয় হাসপাতালে কাউকে ডাক্তার দেখানোর কথা বলে। সন্ধ্যা হয়ে গেলেও বাসায় না ফেরায় তাকে কল দিয়েছিলাম, রিসিভ করেনি। হঠাৎ ওর মোবাইল থেকে অপরিচিত কেউ কল করে জানায়, সাগর গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে আছে।’

আসাদুজ্জামান বলেন, ‘তাৎক্ষণিক আমার ছোট ভাই সাগরের চাচা আকরামুজ্জামান হাসপাতালে ছুটে গিয়ে দেখে, সাগর আর বেঁচে নেই। তার বুকের বাঁ এবং ডান পাশে গুলি লেগেছিল। ওইদিন রাত ৮টার দিকে কয়েকজন অ্যাম্বুলেন্সে করে লাশ বাসায় পৌঁছে দেয়। পরদিন সকালে জানাজা শেষে মাদ্রাসা কোয়ার্টার কবরস্থানে দাফন করা হয় সাগরকে।’


বিজ্ঞাপন


শোকে মুহ্যমান বাবা বলেন, ‘আমার ছেলেটা অত্যন্ত নম্র ও ভদ্র ছিল। কোনো দিন কারও সঙ্গে বেয়াদবি করেনি। কারো দিকে চোখ তুলে তাকায়নি। তার এমন মৃত্যুতে কষ্ট আছে, তবে দুঃখ করি না। সবই আল্লাহর ইচ্ছা।’

‘সে দিয়েছে আবার ভালো মনে করে নিয়ে গেছে। না হয় কেন আমার ছেলে হাসপাতালের কথা বলে মিন্টু কলেজ এলাকায় গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাবে। তার তো ওখানে যাওয়ার কথা না।’

এক প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান বলেন, ‘যা কপালে ছিল তাই হয়েছে; আমরা এ ঘটনায় কাউকে দায়ী করি না। পুলিশ খোঁজখবর নিয়েছে। তারা বলেছে, কোনো অভিযোগ থাকলে করার জন্য। কিন্তু আমরা কোনো অভিযোগ করতে চাই না।… দেশে শান্তি ফিরে আসুক।’

আরও পড়ুন

সাগরের চাচা আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘সাগর জন্মের পর থেকে আমাকে বাবা বলে ডাকত। কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে আমার কাছেই আবদার করত। আমি তাকে সন্তানের মত মানুষ করেছি। কারণ সে আমাদের বংশের বড় সন্তান।’

এসব কথা বলার সময় আশরাফুজ্জামানের চোখের পানি টলমল করছিল। তিনি বলেন, ‘সাগর হিসাব বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করলেও আইটিতে খুব দক্ষ ছিল। সবসময় ব্যতিক্রম কিছু করার চেষ্টা করত। ছেলেটা আমাদের এভাবে ছেড়ে চলে যাবে বুঝতে পারিনি। এক বছর আগে তার বাবা বাসা করেছেন; কত স্বপ্ন কত আশা নিয়ে।’

‘যার জন্য করেছে সেই তো আজ নেই। মেয়েটাকে বিয়ে দিয়ে দিলে কে থাকবে এ বাসায়। সাগর কোনো রাজনীতি করত না। তবে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রকিবুল ইসলাম রাকিবের সঙ্গে সাগরের ভালো সম্পর্ক ছিল। আল্লাহ যা ভালো মনে করেছেন, তাই হয়েছে।’

ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ মাঈন উদ্দিন বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত সাগরের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় কোনো অভিযোগ করেনি। তবে অভিযোগ না করলেও বিষয়টি পুলিশ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবে।

প্রতিনিধি/একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর