images

জাতীয়

মিরপুরে নির্বিচারে গাড়ি ভাঙচুর, পেছনে কাদের ইন্ধন?

মোস্তফা ইমরুল কায়েস

১৯ মে ২০২৪, ১০:০৭ পিএম

ঘড়ির কাঁটায় তখন বেলা পৌনে তিনটা। সবেমাত্র মিরপুর-১০ নম্বর মোড় থেকে কিছু যানবাহন ছেড়ে দিয়েছে ট্রাফিক পুলিশ। এমন দৃশ্য দেখামাত্র ছুটে এলো ১০ থেকে ১৫ জন। মিরপুর-২ নম্বরের দিকে ছুটে চলা যানবাহনগুলোর প্রতি নিক্ষেপ করতে থাকল ইটের টুকরো। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে কয়েকজন চালক জানালা দিয়ে মাথা বের করে করজোড়ে অনুনয়-বিনয় করলেন। কিন্তু তাতেও মন গলল না অটোরিকশা চালক নামধারী আন্দোলনকারীদের। নির্বিচারে চালাল ভাঙচুর।

রোববার (১৯ মে) দুপুরে মিরপুর-১০ নম্বরের ফায়ার সার্ভিসের প্রশিক্ষণ ভবনের পাশে দক্ষিণের সড়কে দেখা গেছে এই চিত্র।

সেখানে পাঁচ থেকে সাত মিনিট চলে ভাঙচুর। কোনো যানবাহন তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। একজন অল্পের জন্য রক্ষা পান ইটের টুকরোর আঘাত থেকে। পরে তিনি দ্রুত নেমে পড়েন সিট থেকে।

তবে এ সময় সেই রাস্তায় সেনাবাহিনীর এক সদস্য প্রাইভেটকার নিয়ে যাচ্ছিলেন। তার গাড়িটিও ভাঙচুরের চেষ্টা করে অটোরিকশা চালকরা। এসময় তিনি দরজা খুলে দ্রুত বেরিয়ে আসেন। তাদের উদ্দেশে বলেন- ‘আরেকটি গাড়িও ভাঙচুরের চেষ্টা চালালে অসুবিধা হবে’। তার গায়ে তখন ছিল সেনাবাহিনীর পোশাক। এতে রিকশাচালকরা কিছুটা ভয় পান এবং পিছু হটতে বাধ্য হন।

Mirpur3

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চলন্ত বাসগুলো লক্ষ্য করে অটোরিকশা চালক নামধারী দুর্বৃত্তরা বৃষ্টির মতো ইটের টুকরো ছুড়ে মারে। এতে বেশির ভাগ বাসের সামনের গ্লাস, জানালার গ্লাস ভেঙে যায়। এতে অনেকে আহতও হন। বেপরোয়া ভাঙচুরের দৃশ্য দেখে পথচারীরা দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করতে থাকেন। এ সময় চারপাশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ইটের আঘাতে বসুমতি, দোলাচল, প্রজাপতিসহ ২০টির বেশি বাস, ট্রাক ও প্রাইভেটকার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ভাঙচুরকারী কারা, পেছনে কাদের ইন্ধন?

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভাঙচুরকারীদের অনেকেই বখাটে ও নেশাখোর। যাদের বয়স ১৫ থেকে ২২ এর মধ্যে। এর মাঝে ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সীও কয়েকজন ছিলেন। কারো পরনে কালো লুঙ্গি, কারো কালো চেক টিশার্ট ও কালো প্যান্ট। তারা প্রতিটি গাড়ি ভাঙচুরের পর উল্লাস করছিল৷

আরও পড়ুন

কালশীতে অটোরিকশা চালকদের তাণ্ডব, মামলা করছে পুলিশ

কালশীর ঘটনায় যুবক ‘গুলিবিদ্ধ’, পুলিশ বলছে গুজব

ভাঙচুরকারীদের একজনের মুখে ছিল দাড়ি, পরনে কালো প্যান্ট ও গায়ে ঘিয়া রঙের শার্ট। আর পায়ে চামড়ার স্যান্ডেল। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল আরও দুজন। তাদের পরনে ছিল লুঙ্গি, গায়ে বেগুনি ও হালকা হলুদ রঙের শার্ট। কিছুক্ষণ পর তারা সেই এলাকা ছেড়ে সামনে চলে যায় এবং অন্য আন্দোলনকারীদের সাথে মিশে যায়। ফলে তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।

তারা যখন নির্বিচারে গাড়ি ভাঙচুর করছিল, রাস্তার উল্টো পাশে থাকা একজন পথচারী বলছিলেন, ‘দেখেন না তারা হাতজোড় করছে, তারপরও তারা ছাড়ছে না। কতটা পাষান তারা। এদের আইনের আওতায় আনা হোক।’

Mirpur2

এ ঘটনার প্রায় ২০ মিনিট পর পুলিশ সদস্যরা সম্মিলিতভাবে মিরপুর-২ এর দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন। পরে স্টেডিয়ামের সামনের এলাকা থেকে এক যুবককে আটক করে পুলিশ। পরিস্থিতি শান্ত হলে মিরপুর-২ গামী সড়কে তাণ্ডবের চিহ্ন দেখা গেছে।

এদিকে শ্রমিকদের আন্দোলনের কারণে আজ মিরপুর পল্লবী এলাকা যানজটে থমকে যায়। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা সেই এলাকায় যান চলাচল বন্ধ থাকে। এতে বিপাকে পড়েন হাজারও মানুষ। তবে দুপুরের পর আন্দোলনের রেশ গড়াতে শুরু করে কালশী এলাকায়। সেই এলাকাতে তারা পুলিশের দুটি ট্রাফিক বক্স ভাঙচুর করে এবং আগুন দেয়। সেখানে ঘণ্টাদুয়েক চলে পুলিশের সাথে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া।

আরও পড়ুন

কালশীতে পুলিশ-অটোরিকশা চালকদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

কালশী পুলিশ বক্সে আগুন দিয়েছে অটোরিকশা চালকরা

এলাকাবাসীর কেউ কেউ অভিযোগ করেন, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের এই আন্দোলনে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা এবং বিরোধী মতের কয়েকজন নেতার উস্কানি ও ইন্ধন রয়েছে। তারা সকালে পল্লবী, মিরপুর-২, কালশী এলাকার বস্তিগুলো থেকে উঠতি যুবকদের নিয়ে আসেন। এই যুবকেরাই রাস্তায় ভাঙচুর চালায় এবং পুলিশের ওপর হামলা চালায়। অভিযোগ রয়েছে, হামলাকারীরা মিরপুর-১০ এলাকায় লাঠি হাতে পুলিশের সামনে ঘোরাঘুরি করলেও পুলিশ কাউকে আটক করেনি।

Mirpur4

পুলিশের মিরপুর জোনের ডিসি জসিম উদ্দিন মোল্লা বলেন, এই আন্দোলনের রাজনৈতিক ইন্ধন থাকতেও পারে। তবে সেটি তদন্তের বিষয়। ইন্ধনের বিষয়টি তদন্তে বেরিয়ে এলে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।

এ বিষয়ে ডিএমপির মিরপুর বিভাগের এডিসি মাসুক মিয়া ঢাকা মেইলকে বলেন, এই আন্দোলনে চালক ও মালিকরা কম ছিল বলে আমরা মনে করি। যারা ভাঙচুর চালিয়েছে তাদের শনাক্ত করা হবে। তবে তারা চালক বা শ্রমিক নয়। আন্দোলনকারী ছদ্মবেশে তারা এসেছিল। এছাড়াও তারা পুলিশের ওপর হামলা করেছে। পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করেছে। এসব ঘটনায় মামলা হবে। জড়িতদের অবশ্যই গ্রেফতার করা হবে।

এমআইকে/জেবি