images

জাতীয়

রস-শরবত বিক্রির ধুম, দম ফেলারও ফুরসত নেই

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

২২ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৪০ পিএম

বছরজুড়ে মৌসুমি ফলের পাশাপাশি আখ, লেবুর শরবত বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন নোয়াখালীর আলাউদ্দিন। তবে চাহিদা বেশি থাকায় গত রমজানে শুরু করেন মেশিনে করে আখের রস বিক্রি। ঈদের পর চলমান তাপপ্রবাহের কারণে পুরোদমে মন দিয়েছেন আখের রস বিক্রিতে। দিনের পর দিন চাহিদা বাড়ায় একজনকে সহযোগী হিসেবে নিয়েছেন আলাউদ্দিন। জানালেন, গরমের কারণে দিন দিন বিক্রি বাড়ছে। গ্লাস প্রতি ২০ টাকায় দিনে ছয় হাজার টাকারও বেশি বিক্রি করতে পারছেন। রমজানে এখনকার চেয়ে অর্ধেক বিক্রি ছিল বলে জানান এই বিক্রেতা।

চাহিদা বাড়ায় আখের দোকানিরাও দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ আলাউদ্দিনের। আগে মাঝারি আকারের এক আঁটি (১০০ আখ) পাঁচ থেকে ছয়শ টাকায় কিনলেও এখন ৮০০ টাকা পর্যন্ত লাগছে। আবার বড় আকারের আখ আঁটিপ্রতি (১০০) এক হাজার থেকে ১১০০ টাকা পর্যন্ত দামে মিললেও এখন সেগুলো কিনতে হচ্ছে ১৩ থেকে ১৪০০ টাকায়।

আরও পড়ুন

তীব্র দাবদাহে রিকশাচালকদের মাঝে ক্যাপ ও ছাতা বিতরণ

পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্কের পাশে আখের রস বিক্রেতা আলাউদ্দিনই নন, ঢাকার মূল সড়কের পাশে কিংবা অলিগলিতে নানা ধরনের ফলের রস, শরবত বিক্রিতাদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে তাপপ্রবাহ। কারণ বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে গত কয়েক দিনে ব্যাপকহারে বিক্রি বেড়েছে।

Ros3

জাতীয় প্রেসক্লাবের উল্টো পাশে বিএমএ ভবনের সামনে আখের রস তৈরির মেশিন নিয়ে বসছেন দুই ভাই। সোমবার (২২ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে পাশে দাঁড়িয়ে দেখা যায়, বড় ভাই খোসা ফেলে দেওয়া আখ একের পর এক মেশিনে দিচ্ছেন। বরফের কুচির সঙ্গে মিলে নিচে রাখা পাত্রে জমা হচ্ছে রস। পরে ছাঁকনি দিয়ে একের পর এক ক্রেতাদের হাতে গ্লাস ভর্তি রস তুলে দিচ্ছেন ছোট ভাই।

পাশের একটি কর অফিসের সহকারী এক লিটারের মাম পানির খালি বোতল নিয়ে আখের রসের জন্য অপেক্ষা করছেন। জানতে চাইলে তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘অফিসের স্যারদের জন্য রস নিতে আসছি। অফিসে এসির মধ্যেও গরম। প্রতিদিনই তারা আখের রস খান।’

বিক্রেতারা জানান, প্রতিগ্লাস ২০ টাকা করে বিক্রি হয়। মামের এক লিটার বোতল ভর্তি করে নিলে গুনতে হবে ১৪০ টাকা।

কথার ফাঁকে ফাঁকে ক্রেতার ভিড় সামলান দুই ভাই। জানালেন, রাজধানীর শ্যামবাজার, সেকশন, কারওয়ান বাজার থেকে মূলত আখ আসে। কখনো নিজেরা নিয়ে আসেন। কখনো আবার আখ বিক্রেতাদের লোকজন পৌঁছে দেন।

আরও পড়ুন

গরমে পেট ঠান্ডা রাখতে বেলের ৩ পদ 

তবে আখ কিংবা এই ধরনের রস বিক্রি যারা করেন তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রসের সঙ্গে মাছে দেওয়া বরফ ব্যবহারের। কিন্তু সব বিক্রেতাই এমন অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করছেন।

প্রেসক্লাবের সামনে এই বিক্রেতার দাবি, মাছে দেওয়া বরফের চেয়ে আইসক্রিমে ব্যবহার করা বরফের দাম দ্বিগুণ। প্রতিটি বরফ কিনতে হয় ৮০ টাকা দিয়ে। ক্রেতাদের ভালো রস খাওয়াতে তারা আইসক্রিমের বরফ ব্যবহার করেন।

যদিও বিক্রেতাদের এমন আশ্বাসেও পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারছেন না ক্রেতারা। তারপরও গরমে স্বস্তি খুঁজতে মান নিয়ে সংশয় থাকার পরও এসব রস খাচ্ছেন বলে জানান ক্রেতারা।

Ros1

বিকন ফার্মাসিউটিক্যালসের কর্মী শহিদুল ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘এক গ্লাস রস খাওয়াতে গরম কমে যাবে এটা মনে করি না। তারপরও সাময়িক তৃপ্তি পেলাম। পুরোটা আখের রস হলে ভালো। কিন্তু এখানে তো রসের চেয়ে বরফের পানিই বেশি। ক্ষতি জেনেও খাচ্ছি। এত কম দামে তো অন্য কোনো ফলের রস, শরবত কিছুই পাবো না।’

এদিকে রসের পাশাপাশি রসালো ফলের দোকানেও ভিড় বেড়েছে। বিশেষ করে আনারস, তরমুজ, পাকা পেঁপে কেটে যারা বিক্রি করেন তাদেরও আয় বেড়েছে এই গরমে।

আরও পড়ুন

তাপদাহে স্বস্তি দিতে তেজগাঁও থানায় পানি ও স্যালাইন বুথ

পল্টন মোড়ে টুরিস্ট পুলিশের প্রধান কার্যাকলয়ের সামনে এমন এক বিক্রেতা বলেন, ‘নরমাল সময়ের চেয়ে বিক্রি বেশি। ফলেরও দাম বাড় বাড়ছে। মানুষ গরমে অস্থির হয়ে পড়ছে। আগে যারা এক প্লেট ফল কিনত এখন তারা দুই প্লেটও খাচ্ছে।’

অবশ্য তার দোকানে দাগ পড়ে যাওয়া পেঁপে, তরমুজ দেখা গেছে। এ বিষয়ে দোকানির ভাষ্য, কম দামে ফল কেটে বিক্রি করছেন। তাই পুরোপুরি ভালো ফল কিনলে এই দামে বিক্রি করতে করতে পারবেন না।

বিইউ/জেবি