নিজস্ব প্রতিবেদক
০৯ জানুয়ারি ২০২৪, ০৮:৩০ পিএম
রাজধানীর ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু আয়ান আহমেদের সুন্নতে খতনা ও মৃত্যুর ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। এ সংক্রান্ত তদন্তের প্রতিবেদন আগামী ১২ জানুয়ারির মধ্যে দিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সেবা বিভাগের সচিবকে আদেশ দিয়েছে কমিশন।
সোমবার (৮ জানুয়ারি) বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের বরাতে কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ এই আদেশ দেন।
আদেশে বলা হয়, গত ৮ জানুয়ারি বিভিন্ন গণমাধ্যমে 'বাঁচানো গেল না সুন্নতে খতনা করাতে গিয়ে মৃত্যুর মুখে থাকা সেই আয়ানকে' শীর্ষক প্রচারিত সংবাদ প্রতিবেদনের প্রতি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে।
প্রকাশিত সংবাদের বরাতে বলা হয়, গত ৩১ ডিসেম্বর সুন্নতে খৎনার জন্য রাজধানীর বাড্ডার মাদানী অ্যাভিনিউয়ে অবস্থিত ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় নার্সারিপড়ুয়া শিশু আয়ানকে। খতনা করাতে সাধারণত লোকাল অ্যানেস্থেসিয়া দেওয়া হয়। কিন্তু অভিযোগ ছিল, তাকে পুরো শরীর অ্যানেস্থেসিয়া দেন চিকিৎসকরা। এ সময় পরিবারের অনুমতি নেয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এরপর আর জ্ঞান ফেরেনি আয়ানের।
তার বাবা শামীম আহমেদ জানান, গত ৩১ ডিসেম্বর ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর প্রথমে অ্যানেস্থেশিয়া করা হয়। ওই অবস্থায় তাকে রেখে মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের এক ঘণ্টা ক্লাস নেওয়া হয়। শেষের দিকে পালস না পাওয়ায় চিকিৎসকরা আয়ানের বুকে বারবার চাপ দিচ্ছিলেন। কিছুক্ষণ পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে গুলশান-২ এ ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
পরে তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। চার দিন তাকে পিআইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
শামীম আহমেদ আরও বলেন, 'আমরা রিপোর্ট কাগজপত্রসহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি তাৎক্ষণিক ইউনাইটেড হাসপাতালে অ্যানেস্থেশিয়া বিভাগের সেই চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেন। শিশুটির ক্ষেত্রে ভুল অ্যানেস্থেশিয়া দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন বলে আমরা জেনেছি। ওর ক্ষতি হলে পুরো দায় ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।'
রোববার (৭ জানুয়ারি) রাত ১১টা ৫০ মিনিটে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় আয়ান। মৃত্যুর ব্যাপারে আয়ানের বাবা শামীম আহমেদ চিকিৎসকদের গাফিলতিকে দায়ী করেছেন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেছেন, এতদিন তারা মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে টালবাহানা করছিল। তিনি এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন।
বাবা শামীম আহমেদ আরও বলেন, গত ৩১ ডিসেম্বর খৎনা করানোর পর থেকেই বাচ্চার আর সেন্স ফেরেনি। তারা ঠিকমত কোনো তথ্যও দেয়নি। এখন মৃত ঘোষণা করল।
অভিযোগে বর্ণিত সুন্নতে খতনার ঘটনায় পরিবারের বিনা অনুমতিতে ভুক্তভোগী শিশুর পুরো শরীরে অ্যানেস্থেসিয়া প্রয়োগ এবং এর ফলে শিশুর মৃত্যু ঘটার বিষয়টি অত্যন্ত হৃদয়বিদারক ও মর্মান্তিক। কমিশন মনে করে, চিকিৎসকের অবহেলা বা ভুল চিকিৎসার কারণে কারও মৃত্যু বা অন্য কোনো ধরনের ক্ষতি মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এ অভিযোগের নিবিড় তদন্তের মাধ্যমে সত্যতা যাচাই করে ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তি এবং একইসঙ্গে ক্ষতিপূরণ আদায় করা আবশ্যক। এ অবস্থায়, অভিযোগের বিষয়টি তদন্তপূর্বক অনতিবিলম্বে কমিশনে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সেবা বিভাগের সচিবকে আদেশ দিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।
এমএইচ/জেবি