images

জাতীয়

বেঁচে আছে অসুস্থ ছেলে, মাকে মিথ্যা আশ্বাস বাবার

মোস্তফা ইমরুল কায়েস

০৬ জানুয়ারি ২০২৪, ০২:৪২ পিএম

‘ছেলে তো বেঁচে নেই, আমি জানি। কিন্তু কি করব! তবুও তার মাকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে রেখেছি। ছেলে বেঁচে আছে, অসুস্থ। এই বলেছি। তাছাড়া তো উপায় নাই।’

শনিবার (০৬ জানুয়ারি) দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে বেনাপোল এক্সপ্রেসের যাত্রী আবু তালহা নামে নিখোঁজ এক যুবকের বাবা আব্দুল হকের সঙ্গে কথা হলে অসুস্থ স্ত্রীকে এমন মিথ্যা আশ্বাস দেওয়ার কথা জানান তিনি।

শুক্রবার (০৫ জানুয়ারি) রাতে রাজধানীর গোপীবাগ এলাকায় বেনাপোল ট্রেনে আগুনের ঘটনার খবর শুনে ঢাকায় ছুটে এসেছেন আব্দুল হক। কারণ শুক্রবার রাতে বেনাপোল এক্সপ্রেসের যাত্রী ছিল তার ছেলে তালহা। ঘটনার পর থেকে তিনি তার ছেলেকে খুঁজে পাচ্ছেন না। ফলে দেরি না করে পরিবার নিয়ে রাতেই ছুটে এসেছেন ঢাকায়। স্ত্রী ও ছোট ছেলেকে নিয়ে উঠেছেন একটি আবাসিক হোটেলে। ছেলের খোঁজ পাওয়ার জন্য ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালের মর্গ পর্যন্ত ছোটাছুটি করেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার কোথাও খোঁজ মেলেনি। তিনি থাকেন ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গায়।

আব্দুল হক বলছিলেন, সকালে ঢামেকের মর্গে আসছি। এক যুবকের লাশ দেখালো। তার হাত পা মুখ পুরোটাই পুড়ে গেছে। কোনোভাবে চেনা যাচ্ছে না। কিন্তু আমার মন বলছে সেই যুবকটাই আমার ছেলে। কারণ সেই ট্রেনে আমার ছেলেও ছিল। সন্ধ্যা সাড়ে চারটার দিকে তার সাথে কথা হয়েছে। ঘটনা জানার পর তার মোবাইল ফোনে আমরা অসংখ্যবার কল করেছি কিন্তু ফোনটা বন্ধ।

আবু তালহা (২৫) উত্তরবঙ্গের সৈয়দপুরে সেনাবাহিনী পরিচালিত একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিকাল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ি উপজেলায়। কিন্তু পরিবার থাকতো ফরিদপুরে।

আব্দুল হক আরও বলেন, আমি তো জানি ছেলে বেঁচে নেই। কিন্তু তার মাকে তো বোঝানো যাবে না। এ কারণে মিথ্যা বলছি যে তোমার ছেলে হয়ত কোনো হাসপাতালে অসুস্থ হয়ে ভর্তি আছে। কিন্তু ওর মা-তো বিশ্বাস করছে না। সে বলছে আমার ছেলে বেঁচে নেই। ও জান্নাতের পাখি হয়ে গেছে।

এসময় ছেলের গতকালের (শুক্রবার) স্মৃতি আওড়াতে গিয়ে কান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ও বাড়ি থেকে আসার দিন আগে বলছিল আব্বা আমি দই খাব। তখন আমি অটো নিয়ে ছুটে গিয়ে দেড় কেজির দই আনলাম। সে বলছিল- চলে যাচ্ছি দই খাব না এটা কি করে হয়। শুধু কি তাই, আমার ছেলে তার স্যারদের জন্য ১২ কেজি খেজুরের গুড়ও নিয়েছিল। গুড়গুলো খোলা নিলে নষ্ট হবে এজন্য আমি নিজে সেগুলো একটা কাগজে মোড়ায়ে বেঁধে একটা ব্যাগে দিলাম।

আব্দুল হক জানান, তার ছেলের সাথে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় শেষ কথা হয়। তার ঢাকায় এসে ট্রেন বদল করে পঞ্চগড় এক্সপ্রেসে সৈয়দপুর যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই তারা ট্রেনে আগুনের খবর পান। এরপর দেরি না করে রাতেই ছুটে এসেছেন ছেলের সন্ধানে। 

শুক্রবার রাতে গোপীবাগে ট্রেনে আগুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ডিবি বিএনপির এক নেতাসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে। 
 
এমআইকে/এএস