images

জাতীয়

ভোটের মাঠ সাজাতে ব্যস্ত ইসি

নিজস্ব প্রতিবেদক

২০ নভেম্বর ২০২৩, ১০:১৯ পিএম

আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। রাজনৈতিক কোনো সমঝোতা না হলে ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী নির্ধারিত দিনেই অনুষ্ঠিত হবে ভোট। এক দিনে দেশের ৩০০ আসনে একযোগে ভোটগ্রহণের লক্ষ্যে পুরোদমে প্রস্তুত হচ্ছে নির্বাচন কমিশন। ভোটের মাঠ সাজাতে রাত-দিন কাজ করছেন ইসি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। নির্ধারিত সময়ের আগেই মাঠ পর্যায়ের কাজ সম্পন্ন করার ব্যাপারে আশার কথা জানিয়েছেন দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।

সোমবার (২০ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন ভবনের সভাকক্ষে নির্বাচনকালীন বাজেট ও ব্যয় নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেছেন নির্বাচন কমিশন কর্মকর্তারা। ইসি সচিব জাহাংগীর আলমের সভাপতিত্বে ওই বৈঠকে বিভিন্ন বাহিনীর প্রতিনিধিরা অংশ নেন। এছাড়া ভোটগ্রহণের যাবতীয় কাজ পুরোদমে চলছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সারাদেশে সব ইউনিয়ন ও পৌরসভা পর্যায়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে সোমবার (২০ নভেম্বর) নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসির উপসচিব (নির্বাচন পরিচালনা-২ অধিশাখা) মো. আতিয়ার রহমানের সই করা এ সংক্রান্ত একটি চিঠি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব বরাবর পাঠানো হয়।

ভোটের মাঠে থাকবেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাড়ে ৭ লাখ সদস্য 

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে গত ১৫ নভেম্বর তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। মোবাইল কোর্ট আইন, ২০০৯ এর আওতায় আচরণবিধি প্রতিপালনে প্রত্যেক নির্বাচনি এলাকায় প্রয়োজনীয়সংখ্যক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের জন্য নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ লক্ষ্যে ৩০০টি সংসদীয় আসনের নির্বাচনী এলাকায় আগামী ২৮ নভেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা প্রয়োজন।

RRR
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ইসির অতিরিক্ত সচিব। ছবি: সংগৃহীত

ইসি জানায়, ন্যূনতম প্রতি তিনটি ইউনিয়নের জন্য একজন, দুর্গম (পার্বত্য এলাকাসহ) ও দূরবর্তী প্রতি দুটি ইউনিয়নের জন্য একজন এবং প্রতি পৌরসভার জন্য তিনজন, তবে বৃহৎ পৌরসভার ক্ষেত্রে চারজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হবে। এছাড়া সিটি করপোরেশনের প্রতি ৪-৫টি সাধারণ ওয়ার্ডের জন্য একজন, তবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় সর্বোচ্চ প্রতি তিনটি ওয়ার্ডের জন্য একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হবে।

চিঠিতে আরও বলা হয়, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ব্যতীত সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানা/জোনে/এলাকায় এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে নিয়োগ প্রদান করা যাবে। যেসব উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্মরত নেই সেসব উপজেলা, বিভাগ/জেলা পর্যায়ে কর্মরত প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে অথবা অন্য কোনো দফতর/প্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে নিয়োগ দেওয়া যাবে।

‘একতরফা’ নির্বাচনের পথে দেশ, ৪৭ বিশিষ্ট নাগরিকের উদ্বেগ 

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট জেলা ম্যাজিস্ট্রেটরা বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে সমন্বয় করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবেন। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে আচরণবিধি প্রতিপালনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ সাংবাদিকদের বলেন, দ্বাদশ নির্বাচনে ভোটের মাঠে নির্বাচনের সময়ে দায়িত্ব পালন করবেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাত লাখ ৪৭ হাজার ৩২২ জন সদস্য। এরমধ্যে এক লাখ ৮২ হাজার ৯১ জন পুলিশ ও র‍্যাব সদস্য, আনসার বাহিনীর সদস্য থাকবেন পাঁচ লাখ ১৬ হাজার। এছাড়া বিজিবির সদস্য থাকবেন ৪৬ হাজার ৮৭৬ জন এবং কোস্টগার্ড সদস্য দুই হাজার ৩৫৫ জন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বরাদ্দ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, বিষয়টি যেহেতু চূড়ান্ত নয়, কাজেই এটা বলতে চাচ্ছি না। তবে কতসংখ্যক সদস্য দায়িত্ব পালন করবে, সেটা জানাতে পারি। পরে তিনি সেই সংখ্যা তুলে ধরেন।

RRR3
মনোনয়ন ফরম বিক্রি করছে আওয়ামী লীগ। ছবি: সংগৃহীত

জানা গেছে, পদমর্যাদা অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ভাতা পেয়ে থাকেন। একজন পুলিশের সর্বনিম্ন ভাতা ৫৩৬ টাকা, সর্বোচ্চ ১২০০ টাকা। র‌্যাবও একই পরিমাণ ভাতা পেয়ে থাকেন। বিজিবি সর্বনিম্ন ৪০০ টাকা, সর্বোচ্চ ১২২৫ টাকা ভাতা পাবে। কোস্টগার্ড সর্বনিম্ন ৬৩৭ টাকা, সর্বোচ্চ ১৮০০ টাকা, আনসার সদস্যরা সর্বনিম্ন এক হাজার, সর্বোচ্চ এক হাজার ৫০ টাকা ভাতা পান।

গত ১৫ নভেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। আগামী ৭ জানুয়ারি একযোগে সংসদের ৩০০ আসনে অনুষ্ঠিত হবে ভোটগ্রহণ। যদিও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা না হওয়ায় নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণের বিষয়টি এখনো নিশ্চিত হয়নি।

‘নির্বাচনের সময় বাড়ানোর প্রয়োজন হলে ভেবে দেখবে কমিশন’

 বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো শেষ পর্যন্ত ভোটে আসবে এমন আশা এখনো করছে নির্বাচন কমিশন। সোমবার নির্বাচন কমিশনার (ইসি) রাশেদা সুলতানা জানিয়েছেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিতে চাইলে প্রয়োজনে আইন দেখে ভোটের সময় বাড়ানোর বিষয়টি ভেবে দেখা হবে।

রাশেদা সুলতানা বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসতে চাইলে নির্বাচন কমিশন তাদের স্বাগত জানাবে। ভোটের সময় বাড়ানোর প্রয়োজন হলে আইন মেনে তাদের জন্য নির্বাচনে আসার পথ তৈরি করা হবে।

তবে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো দলীয় সরকারের অধীনে ভোটে না আসার ব্যাপারে এখনো অনড় রয়েছে। তারা আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে। শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক কোনো সমঝোতা না হলে ক্ষমতাসীন দলসহ যারা আসবে তাদের নিয়েই ভোটগ্রহণের প্রস্তুতি রয়েছে নির্বাচন কমিশনের।

জেবি