লাইফস্টাইল ডেস্ক
২৫ ডিসেম্বর ২০২২, ০৯:৫০ এএম
সমাজের চোখে সাফল্য যাকে বলে সেই টাইপের সফল আমি ছিলাম না। কিন্তু ২০২২ সালে সমাজের তথাকথিত সফলতা আমাকে স্পর্শ করেছে। আমি যখন চাকরির জন্য পড়াশোনা শুরু করি আমার বাবা আমার অলক্ষ্যে নিয়মিত চাকরির পত্রিকা রাখতেন। আমার এলাকার এক ছেলে তখন বিভিন্ন পরীক্ষায় ভালো করছিল। বাবা সেই ছেলের বাবার কাছে তার নম্বরটা চেয়েছিলেন যাতে আমি কথা বলে একটু প্রস্তুতি নিতে পারি। তার বাবা আমার বাবাকে নম্বর দেননি। আমার বিসিএসের ফল প্রকাশ হওয়ার পর তার বাবা এসে আমার বাবার কাছে এসে অনেক কেঁদেছেন। এগুলো আমার অলক্ষ্যে ঘটেছে। বাবা যখন বলছিলেন তার জীবন অনেকটাই পূর্ণ— এর থেকে আর ভালো কী হতে পারে একটা ছেলের জীবনে!
জীবনের জয়গান দেখার সুযোগ সবার হয় না। আমি প্রচণ্ড আশাবাদী বলেই নিজেকে জানি। কিন্তু আমিও হতাশায় ডুবে যাচ্ছিলাম এ বছর। আমার চাকরি হচ্ছে না। প্রিয়জনের জন্য কিছু করা যাচ্ছে না। বাবা-মায়ের চাকরি শেষের দিকে। কিন্তু বছর শেষে দেখলাম, এই বছরটাই আমাকে দু’হাত ভরে দিয়েছে। প্রিয় মানুষকে ঘরে তুলেছি এই বছরেই, যা আমার অনন্য এক প্রাপ্তি।
আমার বাবা-মায়ের খুব ইচ্ছে ছিল আমি মেডিকেলে পড়ি। কিন্তু আমি পারিনি। শুধু এজন্য আমার বাবা আমার অল্প অর্জনে খুশি হলেও মা কখনো খুশি হতে পারেননি। আমি ভাবতাম মাকে খুশি হয়তো করতে পারব না। কিন্তু আমার বিসিএসের রেজাল্টের পর মা এত খুশি হয়েছেন যে বলেছেন, তার জীবনে আর কোনো চাহিদা নেই। আমার মনে হয়, এই অর্জন আমার কাছে অভাবনীয় ছিল। সেটা যখন পেরেছি, সৃষ্টিকর্তার আমাকে নিয়ে হয়তো পরিকল্পনা আছে।
আরও পড়ুন-
>> শত প্রতিকূলতা পেরিয়ে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার গল্প
প্রচুর মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি এ বছর। অনেকে শুভাশিস জানিয়েছেন। জীবনের কান্নার উল্টো দিক দেখেছি বছর জুড়েই। পরিবারের সবাই যার যার অবস্থানে একটা তৃপ্তি নিয়ে আছে, এর থেকে ভালো আর কী হতে পারে! বছর শেষে প্রিয় দল আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জয় করেছে। প্রিয় মেসির হাতে বিশ্বকাপ। এটা ছিল স্বপ্নেরও অতীত।
প্রতিটি মানুষের কিছু সামাজিক দায়বদ্ধতা আছে। আমার ছোট্ট গ্রামের এখনও অনেক মানুষ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। আমার বাবা-মা সারাজীবন শিক্ষার পিছনেই ব্যয় করেছেন। খুব ইচ্ছে আছে গ্রামের শিক্ষার মান বা পরিধি কিভাবে বাড়ানো যায়, সেটা নিয়ে কাজ করার।
আমার কাছে মনে হয় জীবনের সফলতার কোনো শেষ বিন্দু নেই। যেটাকে আজ সফলতা মনে হচ্ছে, সেই সফলতা সামনের দিনে আরও বড় কোনো লক্ষ্য সেট করতে পারে। জীবনে কিছুর জন্য কিছু থেমে থাকে না, প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করা উচিত। অনাগত-অমূলক আশঙ্কা যেন বর্তমানকে বাধাগ্রস্ত না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পরিবারের যারা আছে তারাই প্রকৃত আপনজন। যতটা পারা যায় তাদের উন্নয়নে কাজ করুন, তাদের ভালো রাখার চেষ্টা করুন।
সামনের বছর পুরোটাই আমার ট্রেনিংয়ে কেটে যাবে। আমি চাই সুস্থ-সবল থেকে ট্রেনিং করে যেন ফিরে আসতে পারি। আর সমাজের প্রত্যেকের নিজস্ব কিছু দায়িত্ব থাকে। সবাই যদি নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করে, একদিন সামগ্রিক হতাশা দূর হয়ে সুখী-সমৃদ্ধ এক জনপদ হয়ে উঠবে আমার প্রিয় জন্মভূমি।
লেখক: সহকারী পুলিশ সুপার, ৪০তম বিসিএস
এনএম