লাইফস্টাইল ডেস্ক
০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:০৭ পিএম
অন্তর্বাস— শরীরের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ও গোপন পোশাক। অথচ এই অতি গুরুত্বপূর্ণ পোশাকটি নিয়ে আমাদের সমাজে সচেতনতার যেমন অভাব, তেমনি ক্রয়ের ক্ষেত্রেও রয়েছে অসংখ্য ত্রুটি। খোলা বাজারে বিভিন্ন ধরনের পোশাকের পাশাপাশি অন্তর্বাসও বিক্রি হয়। এসব অন্তর্বাস তুলনামূলকভাবে সস্তা এবং সহজলভ্য হলেও, এর স্বাস্থ্যসম্মত দিক নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। সাধারণত ফুটপাতে কিংবা বাজারে খোলা জায়গায় বিক্রি হওয়া অন্তর্বাস কতটা নিরাপদ?
ঢাকার পাশেই টঙ্গী স্টেশন রোড কিংবা রাজধানীর নানা ব্যস্ত এলাকাগুলোতে দেখা যায়, খোলা ভ্যানে অস্থায়ী দোকান বসে, যেখানে ব্রা কিংবা অন্যান্য অন্তর্বাস এমনভাবে ঝুলিয়ে রাখা হয় যেন তা কোনো সাধারণ পোশাক! পথচারীদের চোখে পড়লেও, যেন দেখার কেউ নেই। সুলভ মূল্যে এসব অন্তর্বাস কিনতে ভিড় করেন নিম্নআয়ের বহু নারী।
কিন্তু এসব পোশাক তৈরি হয় নিম্নমানের কাপড়ে, থাকে না স্বাস্থ্যকর প্যাকেজিং বা সংরক্ষণের ব্যবস্থা। ধুলোবালিতে ভরা রাস্তার পাশে ঝুলতে থাকা অন্তর্বাস ব্যবহারে যে সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ে, সে বিষয়ে বিক্রেতা তো দূরের কথা, অনেক ক্রেতাও সম্পূর্ণ অজ্ঞ।

খোলা বাজারে বিক্রি হওয়া অন্তর্বাসের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো সংক্রমণের ঝুঁকি। নিম্নমানের কাপড়, অপরিষ্কার সংরক্ষণ ব্যবস্থা এবং অজানা উৎস থেকে আসা এসব পোশাক ত্বকের নানা রোগ সৃষ্টি করতে পারে।
অন্তর্বাসের মতো স্পর্শকাতর পণ্য ব্যবহারে সতর্কতা জরুরি। কারণ, ত্বকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত এই পোশাক যদি অপরিচ্ছন্ন বা নিম্নমানের হয়, তাহলে তা থেকে হতে পারে ফাঙ্গাল ইনফেকশন, চর্মরোগ, অ্যালার্জি, এমনকি প্রজনন স্বাস্থ্যও হুমকিতে পড়তে পারে।
কম মানের সিন্থেটিক কাপড় বা রাসায়নিক রং ব্যবহার করা অন্তর্বাস ত্বকে অ্যালার্জি বা একজিমার কারণ হতে পারে। বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে অনুপযুক্ত অন্তর্বাস ব্যবহারে ইউরিনারি ট্র্যাক ইনফেকশন ও নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে। শিশুদের শরীরও এসব ঝুঁকি থেকে নিরাপদ নয়।

শুধু রাস্তার পাশের বিপণনই নয়, প্রযুক্তির এই যুগে অনলাইন অর্ডারেও এসেছে নতুন এক ঝুঁকি— ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের ভয়। অনেক অনলাইন বিক্রেতা অন্তর্বাস বিক্রির সময় প্যাকেজিং প্রক্রিয়া ভিডিও করে, তা পোস্ট করে সোশ্যাল মিডিয়ায়। উদ্দেশ্য মার্কেটিং, কিন্তু বাস্তবে এতে উন্মোচিত হয়ে যায় ক্রেতার নাম, ঠিকানা, এমনকি মোবাইল নাম্বার! নারী ক্রেতাদের জন্য এটি চরম বিব্রতকর ও বিপজ্জনক একটি পরিস্থিতি। এমনতর গাফিলতির শিকার হয়ে অনেকে সামাজিক হয়রানিরও সম্মুখীন হন।
আরও পড়ুন- অতিরিক্ত সাদাস্রাব: কেন হয়, করণীয় কী?
এই সমস্যাগুলোর পেছনে একদিকে যেমন রয়েছে আর্থিক সীমাবদ্ধতা, অন্যদিকে চরম সচেতনতার অভাব। অন্তর্বাস এখনো সমাজে ‘চুপি চুপি’ কেনার বিষয় হিসেবে বিবেচিত। ফলে মান যাচাই, স্বাস্থ্যঝুঁকি বা গোপনীয়তা নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলার সাহস অনেকে পান না। এছাড়া, বিক্রেতারাও ‘চাহিদা আছে’ বলেই নিচুমানের পণ্য বাজারে ছেড়ে দিচ্ছেন কোনো তদারকি ছাড়াই।
তাহলে করণীয় কী? যদি কেউ খোলা বাজার থেকে অন্তর্বাস কিনতে বাধ্য হন, তাহলে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। অন্তর্বাস কেনার সময় তুলা বা অন্যান্য স্বাস্থ্যসম্মত কাপড় ব্যবহৃত হয়েছে কি না তা যাচাই করুন। নতুন কেনা অন্তর্বাস অবশ্যই গরম পানিতে ধুয়ে ও রোদে শুকিয়ে ব্যবহার করা উচিত। কিছু অন্তর্বাসে সুগন্ধি বা রাসায়নিক প্রয়োগ করা হয়, যা ত্বকের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

অবস্থার এ বাস্তবতায় জরুরি হয়ে পড়েছে কিছু কার্যকর ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ গ্রহণ। সর্বপ্রথম প্রয়োজন ব্যাপক সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ। স্কুল, কলেজ, কর্মক্ষেত্র কিংবা স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে অন্তর্বাস ব্যবহারের স্বাস্থ্যসম্মত দিক নিয়ে সরাসরি আলোচনা এবং প্রচারণা চালানো উচিত, যাতে বিষয়টি আর লজ্জার নয়, সচেতনতার অংশ হয়ে ওঠে।
আরও পড়ুন- অন্তর্বাস না ধুয়ে কতবার পরা যায়?
পাশাপাশি, অনলাইন বিপণনে ক্রেতার গোপনীয়তা রক্ষায় কঠোর আইন প্রয়োগ জরুরি। ক্রেতার অনুমতি ছাড়া যদি কারও নাম, ঠিকানা বা মোবাইল নম্বর অনলাইন ভিডিওতে প্রকাশ করা হয়, তাহলে তা অবশ্যই শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত।
অন্যদিকে, বাজার ব্যবস্থাপনাতেও প্রয়োজন কার্যকর তদারকি। ফুটপাত কিংবা অস্থায়ী দোকানে বিক্রি হওয়া অন্তর্বাসের মান যাচাই এবং অবৈধ বা অস্বাস্থ্যকর পণ্যের বিস্তার রোধে নিয়মিত অভিযান চালানো দরকার।

একইসঙ্গে, নিম্নআয়ের মানুষদের জন্য ‘সাশ্রয়ী অথচ স্বাস্থ্যসম্মত’ অন্তর্বাসের সহজ প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা জরুরি। এ লক্ষ্যে সরকার ও বেসরকারি খাতের যৌথ উদ্যোগ হতে পারে একটি কার্যকর সমাধান, যা দীর্ঘমেয়াদে একটি স্বাস্থ্যবান ও সচেতন সমাজ গঠনে সহায়ক হবে।
খোলা বাজারের অন্তর্বাস স্বল্পমূল্যে পাওয়া গেলেও স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনা করে কেনাকাটা করা উচিত। গুণগত মান ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত না হলে, এসব অন্তর্বাস ব্যবহারে ত্বকের সমস্যা থেকে শুরু করে মারাত্মক সংক্রমণ পর্যন্ত হতে পারে। আমরা যদি অন্তর্বাসকে শুধু সৌন্দর্য বা ব্যক্তিগত ব্যবহারের পণ্য না ভেবে, স্বাস্থ্য, মর্যাদা ও নিরাপত্তার প্রশ্নে গুরুত্ব দিই—তাহলেই গড়ে উঠবে একটি সচেতন ও নিরাপদ সমাজ।
এনএম