লাইফস্টাইল ডেস্ক
২২ মে ২০২৫, ০৬:৫০ পিএম
সম্প্রতি আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রস্টেট ক্যানসার ধরা পড়েছে। তারপর নতুন করে এই স্বাস্থ্য সমস্যাটি আলোচনায় এসেছে। বিশ্বজুড়ে অসংখ্য পুরুষ প্রস্টেট ক্যানসারে আক্রান্ত। কিন্তু এই বিষয়ে বেশিরভাগ পুরুষেরই সচেতনতা নেই।
৪০ থেকে ৫০ বছর বয়সী পুরুষদের জন্য প্রস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। তাই রোগটি সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরি। কয়েকটি নিয়মমাফিক পরীক্ষার মাধ্যমে সহজেই প্রস্টেট ক্যানসার চিহ্নিত করা যায়। কিন্তু কী পরীক্ষা করাবেন তা বেশিরভাগ মানুষই জানেন না। এই রোগের লক্ষণ সম্পর্কেও জানেন না অনেকে। ফলে দ্রুত রোগটি ছড়িয়ে স্টেজ ৩ বা ৪ এ চলে যায়। যেখান থেকে রোগীকে সুস্থ করা কঠিন হয়ে পড়ে।

পুরুষদের মূত্রথলির নিচে প্রস্টেট গ্ল্যান্ড রয়েছে। ওই গ্ল্যান্ড থেকে হরমোন নির্গত হয়। হরমোনের ওঠানামার ফলে মূত্রনালিতে সমস্যা হয়। যা থেকে একধরনের ক্যানসারের আশঙ্কা থাকে, যাকে প্রস্টেট ক্যানসার বলে।
ইউরোলজিস্ট ও রোবটিক সার্জন কুমার গৌরবের মতে, এই ক্যানসারের একটি বড় সমস্যা হলো এটি পুরুষদের শরীরে নীরবে বাসা বেঁধে থাকে। অনেক ক্ষেত্রেই লক্ষণ আগে থেকে বোঝা যায় না। তবে কিছু ক্ষেত্রে উপসর্গ প্রকাশ পেতে থাকে। যেমন- প্রস্রাবের সময়ে জ্বালাযন্ত্রণা, বাড়াবাড়ি পর্যায়ে গেলে প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত বের হওয়া, প্রস্টেট গ্ল্যান্ডের আকার অস্বাভাবিক বড় হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।

এই সমস্যা হলে ক্যানসার কোষ এত দ্রুত বিভাজিত হতে থাকে যে, তা মেরুদণ্ড অবধি ছড়িয়ে পড়ে। তখন পিঠ ও পেলভিক এলাকায় ব্যথা শুরু হয়। হাড় দুর্বল হতে থাকে। হাড় ভঙ্গুরও হয়ে যায়। কিছু ক্ষেত্রে পক্ষাঘাত হওয়ার ঝুঁকিও দেখা দেয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রস্রাব নির্গত হওয়ার পথে অনেকসময় টিউমার তৈরি হয়। তবে সবক্ষেত্রে যে তা ক্ষতিকর তেমন নয়। কিছু টিউমার বিনাইন। আবার কিছু ক্ষেত্রে কিডনির সমস্যা থেকেও বিনাইন টিউমার তৈরি হতে পারে। আরেক ধরনের টিউমার হলো ম্যালিগন্যান্ট। এমন টিউমারের প্রমাণ পাওয়া গেলে প্রাথমিকভাবে ক্যানসার হয়েছে বলে ধরে নেওয়া যায়।

প্রস্রাবের সময় জ্বালা কিংবা মূত্রথলিতে সমস্যা হলে অনেকে প্রস্টেট ক্যানসার ভেবে ভয় পান। সত্যিই ক্যানসার হচ্ছে কি না তা জানতে চল্লিশের পর কয়েকটি স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। সেগুলো কী কী?

প্রথমেই যে পরীক্ষাটি করাতে হবে তা হলো আলট্রা সোনোগ্রাফি (ইউএসজি)। এই পরীক্ষায় প্রস্টেটের মাপ বোঝা যাবে। প্রস্টেটটি বড় হয়েছে কি না তা জানা যাবে। যদি দেখা যায় প্রস্টেটটি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গিয়েছে, তাহলে পরের ধাপে হিস্টোপ্যাথোলজিক্যাল পরীক্ষা করাতে হবে।
এটিও এক ধরনের আলট্রা সোনোগ্রাফি। একে ট্রান্স-রেক্টাল আন্ডার সাউন্ড (ট্রাস) টেস্ট বলা হয়। এক্ষেত্রেও প্রস্টেট গ্ল্যান্ডের মাপ দেখা হয়। সেটির আকার বড় হতে শুরু করলে সেখান থেকে কোষের নমুনা নিয়ে তা বায়োপসি করে দেখা হয়, কোষের অনিয়মিত বিভাজন শুরু হয়েছে কি না। এই পরীক্ষা থেকে বোঝা যায়, প্রস্টেট ক্যানসারের আশঙ্কা রয়েছে কি না।

প্রস্টেট ক্যানসার চিহ্নিত করার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হল পিএসএ বা ‘প্রস্টেট-স্পেসিফিক অ্যান্টিজেন টেস্ট’। রক্তের মধ্যে এই ধরনের অ্যান্টিজেনের খোঁজ করা হয়। পিএসএ অ্যান্টিজেনের মাত্রা প্রতি মিলিলিটার রক্তে যদি ৪.০ ন্যানোগ্রামের বেশি হয়, তা হলে অস্বাভাবিক বলে ধরে নেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে বায়োপসি করে দেখা হয়, কোষের অনিয়মিত বিভাজন হচ্ছে কি না বা ক্যানসার কোষ কত দূর অবধি ছড়িয়েছে।
আরও পড়ুন: ক্যানসারের যত ধরন, নামকরণ করা হয় যেভাবে
লিভার ও কিডনির অবস্থা কেমন, তা পরীক্ষা করিয়ে নিন। এতে ক্যানসার চিহ্নিত করা সহজ হয়।

চল্লিশের পরে কোলোনোস্কোপি করানো খুব জরুরি। অ্যাবমিডোন্যাল আলট্রাসাউন্ড পরীক্ষাতেও প্রস্টেট গ্ল্যান্ডের অস্বাভাবিকতা ধরা পড়ে।
অনেকে ভাবেন, অস্টিওপোরোসিস কেবল নারীদের সমস্যা, আসলে তা নয়। চল্লিশের পরে হাড় ভঙ্গুর হওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে পুরুষদেরও। যারা ধূমপান বেশি করেন এবং স্টেরয়েড নেন, তাদের বোন ডেনসিটি বা ‘ডিইএক্সএ স্ক্যান’ করিয়ে রাখা জরুরি।
এনএম