images

লাইফস্টাইল

স্তনে ব্যথা হওয়ার কারণগুলো জানেন না অনেকেই

লাইফস্টাইল ডেস্ক

১৮ মে ২০২৫, ০৩:৪৬ পিএম

নারীদেহের একটি স্পর্শকাতর অঙ্গ স্তন। নানা শারীরিক জটিলতার সঙ্গে এটি সম্পর্কযুক্ত। নানা কারণে নারীর স্তনে ব্যথা হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় যা ‘মাস্টালজিয়া’ নামে পরিচিত। প্রায় সববয়সী নারীই এই সমস্যায় ভুগতে পারেন। 

হালকা অস্বস্তি থেকে শুরু করে এই ব্যথা তীব্র ও তীক্ষ্ম হতে পারে। বেশিরভাগ নারীই স্তন ব্যথার ব্যাপারটিকে এড়িয়ে যান। খুব একটা গুরুত্ব দেন না কিংবা লজ্জায় লুকিয়ে রাখেন। অথচ এই অঙ্গটির ব্যথা একজন নারীর জীবনযাত্রার মানকে প্রভাবিত করতে পারে। 

স্তন ব্যথার নানা প্রকারভেদ রয়েছে। কেন এই ব্যথা হয়? স্তন ব্যথার লক্ষণ কী? চলুন এসম্পর্কিত তথ্য জেনে নিই এই প্রতিবেদনে-

Breast_Pain

স্তনে ব্যথার প্রকারভেদ:

ফ্রিকোয়েন্সি বা স্পন্দনহারের ওপর ভিত্তি করে, স্তন ব্যথাকে দুটি প্রধান বিভাগে ভাগ করা যায়: 

১. চক্রাকার: এই ধরনের ব্যথার সঙ্গে মাসিক চক্র সম্পর্কিত। উভয় স্তনে এই ব্যথা হয়। প্রায়ই মাসিক বা পিরিয়ড শুরু হওয়ার কদিন আগে স্তন ব্যথা শুরু হয় এবং পিরিয়ড শুরু হওয়ার পর কমে যায়। ২০-৪০ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে এই সমস্যা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। 

আরও পড়ুন-

২. অ-চক্রীয়: এমন ব্যথার সঙ্গে পিরিয়ডের কোনো সম্পর্ক নেই। যেকোনো স্তনে এই ব্যথা দেখা দিতে পারে। এটি ধ্রুবক বা বিরতিহীন হতে পারে। একই স্থানে ব্যথা হতে পারে আবার ছড়িয়ে যেতে পারে। আঘাত, অস্ত্রোপচারের হস্তক্ষেপ, সংক্রমণ ইত্যাদি কারণে স্তনে অ-চক্রীয় ব্যথা হতে পারে।

breast_pain1

স্তনে ব্যথার লক্ষণ:

স্তনে ব্যথার নানা উপসর্গ রয়েছে। এর কিছু লক্ষণ হলো: 

  • স্তন অঞ্চলে কোমলতা বা ব্যথা  
  • জ্বালাপোড়া বা কাঁপার অনুভূতি
  • স্তনে নিবিড়তা
  • তীক্ষ্ণ ব্যথা
  • স্তন ফোলা বা ভারী হওয়া
  • অস্বস্তি যা বগল বা বাহুতে ছড়িয়ে পড়তে পারে

breast_pain2

স্তনে ব্যথার কারণ: 

১. হরমোনের ওঠা-নামার কারণে স্তনে ব্যথা হতে পারে: 

স্তন ব্যথার সঙ্গে হরমোনের পরিবর্তনের সম্পর্ক রয়েছে। পিরিয়ডের সময় হরমোনের ওঠানামার কারণে স্তনে ব্যথা বা কোমলতা দেখা দিতে পারে, বিশেষ করে পিরিয়ডের আগে। কিশোরী মেয়েদের পিরিয়ড হওয়ার আগে ও পরে স্তনে হালকা ব্যথা হয়। দেহে হরমোনের পরিবর্তনের কারণেই এ ব্যথা হয়ে থাকে। এতে ভয়ের কোনো কারণ নেই। পিরিয়ড শেষ হয়ে গেলে এ ব্যথা আর থাকে না।

এছাড়াও গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে হরমোনের পরিবর্তনের কারণে স্তনে ব্যথা বা সংবেদনশীলতা হতে পারে। অনেকসময় মেনোপজের সময় হরমোনের মাত্রা কমে যাওয়ায় স্তনে ব্যথা হতে পারে। কিছুক্ষেত্রে জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি, পিল বা হরমোন থেরাপির কারণে স্তনে ব্যথা হতে পারে।

breast_pain3

২. আঘাতের কারণে স্তনে ব্যথা হতে পারে: 

আঘাতের কারণে কিংবা অন্য অন্য কারণেও স্তনে ব্যথা হতে পারে। বুকের পেশীতে চাপের কারণে এমন ব্যথা হতে পারে। আবার ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাসের কারণে স্তনের সংক্রমণ হতে পারে। যা স্তনে ব্যথা বা প্রদাহ সৃষ্টি করে। 

আরও পড়ুন-

৩. গর্ভধারণের সময় নারীদের স্তনে ব্যথা হতে পারে: 

গর্ভকালীন গর্ভধারণের সময় নারীরা স্তনে ব্যথা অনুভব করতে পারেন। সাধারণত গর্ভবতীর গর্ভাবস্থা তিন মাস চলাকালীন স্তনে ব্যথা হওয়া শুরু হয়। তখন স্তনের আকার বৃদ্ধি পায় এবং অনেক সময় স্তনের ওপর দিয়ে নীলশিরা দেখা যায়। কারণ তখন দেহে অনেক বেশি পরিমাণে রক্ত প্রবাহ হতে থাকে ও হরমোনের পরিবর্তন ঘটে। অনেকসময় নারীদের স্তনে প্রদাহজনিত সমস্যা হয়। ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া অথবা ফাঙ্গাসের আক্রমণে এমনটা হয়ে থাকে। গর্ভাবস্থায় এই বিষয়ে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। কারণ এই ব্যথা থেকে জ্বরও আসতে পারে। এমনটা হলে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। 

breast-pain4

৪. স্তনে সিস্ট হলে ব্যথা হতে পারে: 

স্তনের ভেতর এক ধরনের সিস্ট হতে পারে। এই সিস্টের ভেতর তরল জাতীয় পদার্থ থাকে যার নাম ব্রিজসিস্ট। স্তনের গ্রন্থি যখন বৃদ্ধি পায় তখন অনেকসময় এ সিস্ট দেখা দেয়। সিস্টের কারণে স্তনে ব্যথা হয়। এই সিস্টের আকার বৃদ্ধি পেলে স্তনে হাত দিলেও সিস্ট অনুভব করা যায়। এমনটা হলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

৫. স্তন্যদানের সময় ব্যথা হতে পারে: 

মা হওয়ার পর সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময়ও অনেকের স্তনে ব্যথা হয়ে থাকে। এজন্য বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর আগে ও পরে সব সময় স্তন পরিষ্কার করে নেওয়া ভালো। এতে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া অথবা ফাঙ্গাস হওয়ার আশঙ্কা থাকে না। অনেক সময় স্তনে ঘা হয়ে থাকে যার কারণেও স্তনে ব্যথা হয়। স্তনের নিপল বা বোঁটায় ব্যাকটেরিয়া দেখা দিলে এবং বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর সময় ভাইরাস আক্রমণ করলে ব্যথা হতে পারে।

breast_pain5

এছাড়াও বুকে ব্যথার একটি মারাত্মক কারণ হলো স্তন ক্যানসার। দীর্ঘদিন ধরে যদি স্তনে ব্যথা হয়, সেসঙ্গে স্তনে চাকা অনুভব করেন, স্তনের বোঁটা থেকে পুঁজ বের হয় তাহলে দ্রুত একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। 

(এই লেখাটি স্বাস্থ্য সচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে লেখা। এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত)

এনএম