লাইফস্টাইল ডেস্ক
১৬ মার্চ ২০২৫, ০১:০০ পিএম
মাথা ব্যথার অনেক ধরন আছে। কিছু ব্যথা সহনশীল হয়। আবার কিছু মাথা ব্যথা হয় তীব্র। অনেকে আবার ভোগেন মাইগ্রেনের সমস্যায়। মাথা ব্যথা মানেই কি মাইগ্রেন (Migraine)? আবহাওয়া পরিবর্তন হলে যেমন জ্বর-সর্দি-কাশি, ভাইরাল ফ্লু, অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে, তেমনি কি মাইগ্রেনের সমস্যা হতে পারে? এমন অনেক প্রশ্নই আমাদের মনে উঁকি দেয় রোজ।
মাইগ্রেন কী, কেন হয়, মাইগ্রেন থেকে বাঁচার উপায় কী? জানুন এই প্রতিবেদনে-
মাথা ব্যথা মানেই মাইগ্রেন নয়। তাহলে কী করে বুঝবেন কোনটি মাইগ্রেন আর কোনটি সাধারণ মাথা ব্যথা? বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতে, মাইগ্রেনের ক্ষেত্রে মাথা ব্যথা একটু বিশেষ ধরনের হয়। যেমন- মাথার একদিকে ব্যথা হতে পারে। একটানা ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত মাথার যন্ত্রণায় একজন কষ্ট পেতে পারেন।
মাইগ্রেন অ্যাটাক হলে কেবল মাথা ব্যথা ছাড়াও আরও একাধিক উপসর্গ দেখা দিতে পারে। যেমন- জোরে আওয়াজ কিংবা তীব্র আলো অসহ্যকর লাগা। অনেকের ক্ষেত্রে ঘুমালে ব্যথা কমে। অনেকক্ষণ না খেয়ে থাকলে কিংবা বেশি খেলে— দুই ক্ষেত্রেই মাইগ্রেন ট্রিগার করতে পারে।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার ওপর এই সমস্যা অনেকটাই নির্ভরশীল। অতিরিক্ত স্ট্রেসের কারণে মাইগ্রেনের ব্যথা বাড়তে পারে। অনেকক্ষণ রোদে থাকলেও মাইগ্রেন ট্রিগার করতে পারে।
ঋতু বদলের সঙ্গে কি মাইগ্রেন অ্যাটাকের কী কোনো সম্পর্ক আছে?
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতে, সিজন চেঞ্জের সঙ্গে মাইগ্রেনের কোনো প্রত্যক্ষ সংযোগ নেই। তবে বেশ কিছু ফিজিক্যাল ও মেন্টাল প্যারামিটার রয়েছে যার প্রভাবে মাইগ্রেন ট্রিগার করতে পারে। এই যেমন- অতিরিক্ত স্ট্রেস, মানসিক চাপের ওঠানামা, মরশুম পরিবর্তনের কারণে অ্যালার্জি— এসবের প্রভাবে মাইগ্রেনের ব্যথা শুরু হতে পারে, বাড়তে পারে। তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া বা হ্রাস পাওয়ার মতো আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণেও এটি দেখা দিতে পারে। তবে সরাসরি ঋতু বদলের সঙ্গে মাইগ্রেনের কোনো সম্পর্ক নেই।
পিরিয়ডের আগে হতে পারে মাইগ্রেন
চিকিৎসকের মতে, জোরে আওয়াজ, বেশি আলো, তীব্র রোদ, স্ট্রেস যেমন মাইগ্রেন ট্রিগারের কারণ, তেমনি হরমোনের ওঠানামার কারণে মাইগ্রেনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই কারণে অনেক নারীর ক্ষেত্রে পিরিয়ডের আগে মাইগ্রেনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে সবার ক্ষেত্রেই যে এমনটা হবে তা নয়। আসলে মাইগ্রেন কেন হয়, এই ব্যথা কার ক্ষেত্রে কেমন হবে, এর ঠিক সুস্পষ্ট ধারণা এখনও চিকিৎসকদের কাছেও নেই।
মাইগ্রেনের কারণ ও চিকিৎসা
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতে, মাইগ্রেনের সমস্যায় মাথা ব্যথার সঙ্গে গা-গোলানো, বমি ভাব এবং সেসঙ্গে মাথা ঘোরানোর সমস্যাও দেখা দিতে পারে। এই মাথা ঘোরানোর সমস্যা দেখা দিলে তাকে ভেস্টিবিউলার মাইগ্রেন বলে। তাই এই উপসর্গ দেখা দিলে একটু সতর্ক হওয়া জরুরি।
আরও পড়ুন- মাইগ্রেনের ব্যথা কমায় এই ৩ খাবার
তবে মাইগ্রেন এখন অনেকেরই হয়। এটি থেকে পুরোপুরি মুক্তি সম্ভব না হলেও অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। মাইগ্রেনের সমস্যা এড়াতে চাইলে যার ক্ষেত্রে যেটা ট্রিগার ফ্যাক্টর, মানে ধরুন কারও ক্ষেত্রে বেশি আলো, কারও ক্ষেত্রে জোরে আওয়াজ, কারও ক্ষেত্রে রোদ- যার ক্ষেত্রে যেটা, সেটা তিনি জানেন, সেই বিষয়টা এড়িয়ে চলা জরুরি। তাহলেই মাইগ্রেনের সমস্যা অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। পাশাপাশি এখন বাজারে অনেক ধরনের ওষুধ পাওয়া যায়। ডাক্তারদের পরামর্শ নিয়ে সেসব ওষুধ ব্যবহার করলে কষ্ট অনেকটাই কমানো সম্ভব।
মাইগ্রেন নিয়ন্ত্রণে রাখতে করণীয়
প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে। আমাদের শরীর অনুযায়ী এই স্লিপ সাইকেল রাতের ঘুমের মাধ্যমেই পূরণ হলে ভালো। কিন্তু কর্মসূত্রে অনেককেই রাত জেগে ডিউটি করতে হয়। সেক্ষেত্রে অন্তত এটুকু খেয়াল রাখতে হবে যাতে একটানা ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুম হয়।
যারা কম্পিউটারে অনেকক্ষণ কাজ করেন, তারা সম্ভব হলে কাজের মাঝে বিরতি নিন। চোখে পানির ছিটা দিন। অবশ্যই কম্পিউটারের স্ক্রিন এমনভাবে বানিয়ে নিন যা চোখকে প্রোটেকশন বা সুরক্ষা দেবে। এছাড়াও যাদের একটানা অনেকক্ষণ কম্পিউটারে কাজ করতে হয়, তারা চোখের সুরক্ষার জন্য বিশেষ চশমা ব্যবহার করুন।
রোদে কাজ করতে হলে ছাতা, সানগ্লাস ব্যবহার করুন। সুযোগ থাকলে মাঝে মাঝে একটু ছায়াতে এসে দাঁড়ানোর চেষ্টা করুন। রোদের প্রভাবে মাইগ্রেন মারাত্মকভাবেই ট্রিগার করতে পারে। অতএব সতর্ক থাকা জরুরি।
আসছে গরমকাল। এসময় শরীর কিছুতেই ডিহাইড্রেট হতে দেওয়া যাবে না। পানিশূন্যতা মাইগ্রেনের সমস্যা বাড়াতে পারে। ঘুমোতে যাওয়ার সময় ফোন স্ক্রলিং, সোশ্যাল মিডিয়া দেখা, ওয়েব-সিরিজ, সিনেমায় বুঁদ হয়ে যাওয়া- এসব অভ্যাস কমাতে হবে। নয়তো ঘুম ঠিকভাবে হবে না। ফলে বাড়বে মাইগ্রেনের ব্যথা।
এনএম