আমিনুল ইসলাম মল্লিক
২৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:০৩ পিএম
বাংলাদেশের ফারহানা করিম ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক গ্যারিসন রবার্ট লুট্রেলের প্রথম পরিচয়টা হয়েছিল একটি মদের বারে। ২০১৬ সালের ৩ জুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিজোরি প্রদেশে তাদের প্রথম পরিচয় হয়। ধীরে ধীরে মন দেওয়া-নেওয়া। এরপর পারস্পারিক বিভিন্ন সিদ্ধান্তে একমত হন তারা। সিদ্ধান্ত নেন বিয়ের, কিন্তু বাঁধ সাধে ধর্ম। লুট্রেল খ্রিষ্টান ধর্মের অনুসারী আর ফারহান করিম মুসলিম। কিন্তু প্রেম মানে না ধর্ম-বর্ণ, জাত-পাত। এমন বাস্তবতায় প্রথম দেখাতেই এই প্রেমিক যুগল সিদ্ধান্ত নেয় বিয়ের। নিজ ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ গ্যারিসন রবার্ট লুট্রেল।
২০১৮ সালের ৩ আগস্ট তাদের বিয়ে হয়। মুসলিম শরিয়াহ মতে মসজিদে বিয়ে সম্পন্ন করেন তারা। বিয়ের দুই বছর পর ২০২০ সালের ১৭ অক্টোবর তাদের কোলজুড়ে আসে প্রথম সন্তান ফাতমির ওয়াল ইকরাম লুট্রেল। এরপর দ্বিতীয় সন্তান ফাতিহ আল আলিম কুইটিসের জন্ম। দ্বিতীয় সন্তান জন্মের আগেই ২০২৩ সালের ২৭ জুন বাংলাদেশে চলে আসেন ফারহানা করিম। তাতেই বাঁধে বিপত্তি।
সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এবং তাদের মুখ দেখতে সাত সমুদ্র তের নদী পার হয়ে বাংলাদেশে আসেন গ্যারিসন রবার্ট লুট্রেল। প্রায় এক বছর ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করে অন্যরকম এক যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন এই মার্কিন নাগরিক। সন্তানদের কাছে পেতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে ঢাকার পারিবারিক আদালত, মানবপাচার ট্রাইব্যুনাল ও সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে মামলা করেছেন লুট্রেল। তিনি এর শেষ দেখতে চান এবং এর জন্য যতদিন বাংলাদেশে থাকা লাগে থাকতে চান।
এক মামলার শুনানি শেষে আদালত বাংলাদেশি মাসহ দুজনের বক্তব্য শুনে সপ্তাহে দুই দিন মার্কিন এই নাগরিককে সন্তানের সঙ্গে দেখা করে সময় কাটানোর আদেশ দেন। ২০২৩ সালের ২৮ নভেম্বর বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের বেঞ্চ আদেশে বলেন, ঢাকার উত্তরা ক্লাবে প্রতি শনি ও মঙ্গলবার তিন বছরের ছেলের সঙ্গে বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সময় কাটাতে পারবেন লুট্রেল।
তবে এক মাস বয়সী অপর সন্তানের সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়ে কোনো আদেশ দেননি আদালত। এছাড়া এই বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য ২০২৪ সালের ১৬ জানুয়ারি দিন ধার্য করা হয়। তবে বাংলাদেশি মা আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করছেন না বলে অভিযোগ গ্যারিসন রবার্ট লুট্রেলের।
সেই আদেশ বাস্তবায়ন না করায় ঢাকার পারিবারিক আদালতে সন্তান অপহরণের মামলা করেছেন এই মার্কিন নাগরিক। সেই মামলার আদেশের অপেক্ষায় আছেন তিনি। এছাড়া গত কিছু দিন ধরে তার সন্তানরা কোথায় আছে সেটাও তিনি জানেন না। ফারহানা করিম ইতোমধ্যে দেশ ছেড়ে চলে গেছেন বলে তথ্য পাওয়ায় তিনি আরও বেশি বিচলিত।
ভুক্তভোগী গ্যারিসন রবার্ট লুট্রেল বলেন, আমি আমার সন্তানকে দেখতে চাই। গত আগস্ট মাসে সর্বশেষ দেখা করেছিলাম। হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী আমি কয়েকবার উত্তরায় গিয়েও দেখা করার সুযোগ পাইনি৷ আমার দুই বাচ্চা কোথায় আছে, কীভাবে আছে সেটি জানতে চাই। বিগত দুই মাস যাবত তাদের খুঁজে পাচ্ছি না। বাচ্চাদের মায়ের সন্ধানও পাওয়া যাচ্ছে না। ফারহানা করিম উত্তরার যে বাসায় ভাড়া থাকতেন সে বাসায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি বাসা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। এ বিষয়ে আমি আদালতে একাধিক মামলা করেছি।
এই মার্কিন নাগরিক বলেন, বাচ্চাদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে আমি মারধরের শিকার হয়েছিলাম, সে বিষয়ে মামলা করেছি। হাইকোর্টে রিট করেছি। সর্বশেষ বাচ্চাদের অপহরণ করা হয়েছে, তাদের উদ্ধার চেয়ে মানবপাচার ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছি।
গ্যারিসন রবার্ট লুট্রেলের আইনজীবী মো. রবিউল আলম ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘ফারহানা করিম অনৈতিক জীবনাচারে অভ্যস্ত। তার হেফাজতে থাকা দুই সন্তানকে উদ্ধার চেয়েছি। সন্তান দুটি কোথায় আছে, কীভাবে আছে এটি তাদের বাবা জানতে চান। ঢাকার পারিবারিক আদালতে দায়ের করা মামলাটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সন্তান দুটি বাবার কাছে থাকুক এমন নির্দেশনা চেয়েছি।’
এই আইনজীবী আরও বলেন, ‘হাইকোর্টের আদেশ ছিল ঢাকার পারিবারিক আদালতের মামলাটি ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে। সে অনুযায়ী মামলাটির বিচারকাজ চলছিল। কিন্তু আমরা হঠাৎ দেখতে পেলাম আসামি ফারহানা করিম আদালতে হাজির না হয়ে বারবার সময় নিচ্ছেন। কিছুদিন যাওয়ার পর আমাদের সন্দেহ হলো, ফারহানা করিম আদালতে কেন আসছেন না৷ কেনই বা তার পক্ষে বার বার সময় নেওয়া হচ্ছে। পরে আদালতের আদেশ অনুযায়ী উত্তরা পুলিশ খোঁজ নিয়ে দেখে, তিনি চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে দেশ ছেড়েছেন। ইউএসে চলে গিয়েছেন।’
রবিউল আলম বলেন, ‘ফারহানা করিম এখনো তার স্বামীকে তালাক দেননি। আবার স্বামীর সঙ্গেও থাকেন না। স্বামীর সঙ্গে না থেকেও তিনি কীভাবে প্রেগনেন্ট হন। পরে আমরা খবর নিয়ে জানতে পারি অন্য পুরুষের সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত জীবনযাপন করছেন।’
এআইএম/জেবি