শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

কারাবন্দি মা এসে ঈদের জামা-কাপড় কিনে দেবেন, আশা শিশু নূরী-আকলিমার

আমিনুল ইসলাম মল্লিক
প্রকাশিত: ১০ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:০৪ পিএম

শেয়ার করুন:

কারাবন্দি মা এসে ঈদের জামা-কাপড় কিনে দেবেন, আশা শিশু নূরী-আকলিমার
শিশু দুটি জানে না তাদের মা ঈদের আগে মুক্তি পাবেন না। ছবি: সংগৃহীত

একটি নাশকতার মামলায় মা হাফসা আক্তার পুতুল কারাগারে। বাবাও পলাতক। মা-বাবা কাছে না থাকায় এবারের ঈদ আনন্দ মাটি শিশু আকলিমা ও নূর জাহান নূরীর। নানা দাদা চাচা মামা বা পরিবারের অন্য কারও সঙ্গে বাজারে গিয়ে ঈদের জামা কাপড় বা জুতা কিনছে না শিশু দুটি।

নূরী ও আকলিমার আশা, তাদের মা কারামুক্ত হয়ে বের হয়ে আসবেন। মার্কেটে নিয়ে যাবেন। ঈদের জন্য নতুন নতুন জামা-কাপড়, কসমেটিকস, খেলনা কিনে দেবেন।


বিজ্ঞাপন


কিন্তু মায়ের আদরবঞ্চিত শিশু দুটি জানে না তার মা ঈদের আগে আর বের হবেন না। কারণ ইতোমধ্যে ঈদের ছুটি শুরু হয়ে গেছে। দীর্ঘ ছুটিতে গেছে আদালত। এই মুহূর্তে জামিনের আদেশ পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

একটি মামলায় কারাগারে আছেন শিশু নূরী ও আকমিলার মা হাফসা আক্তার পুতুল। সম্প্রতি হাইকোর্ট এই মাকে জামিন দিলেও সেটি স্থগিত করেছেন চেম্বার আদালত। পূর্ণাঙ্গ শুনানির জন্য আপিল বিভাগের ফুল বেঞ্চে শুনানি হবে ঈদের পর।

মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) হাফসা আক্তার পুতুলের আইনজীবী মো. মাকসুদ উল্লাহ ঢাকা মেইলকে বলেন, আমি শিশু দুটির মা হাফসা আক্তার পুতুলের আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। একটি মামলায় সম্প্রতি তাকে হাইকোর্ট জামিন দিয়েছেন। সেই জামিন আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। শুনানি শেষে আদালত হাফসা আক্তার পুতুলের জামিনের আদেশ স্থগিত করা হয়।

জানা যায়, ঘরে দুটি অবুঝ শিশু আছে, তাদের কথা বিবেচনা করে আদালতের কাছে জামিনের আবেদন করা হয়। মাকে কারাগারে রেখে শিশু দুটি ঈদ করতে পারবে না, তাদের কথা বিবেচনা করে জামিন দেওয়া হোক। অথবা জামিন না দিলেও শিশু দুটি যাতে মায়ের সঙ্গে ঈদ করতে পারে এজন্য তাদের কারাগারে পাঠানো হোক। কিন্তু আদালত আইনজীবীর কোনো আর্জি বিবেচনায় নেননি। এখন আর বিবেচনায় নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই, কারণ আদালত বন্ধ।


বিজ্ঞাপন


হাফসা আক্তার পুতুলের আইনজীবী জানান, ঈদের দিন এই দুই শিশুকে নিয়ে যাওয়া হবে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে। মায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করাবেন তাদের চাচা।

নাশকতার অভিযোগে করা মামলায় কারাবন্দি হাফসা আক্তার ঈদের আগে আর মুক্তি পচ্ছেন না। হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিতাদেশ তুলে নিতে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত তার আবেদনে সাড়া দেননি।

উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে গত ৩ এপ্রিল আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের চেম্বার জজ আদালত জামিন স্থগিতাদেশ তুলে নিতে আবেদনের বিষয়ে আগামী ২২ এপ্রিল আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন।

আরও পড়ুন

ঈদ বাজার নিয়ে কখনও বাড়ি ফিরবে না মেহেদী, মা-বাবার স্বপ্ন ভঙ্গ 

এ বিষয়ে আইনজীবী নেতা ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ‘এ দুই শিশু তার মায়ের সঙ্গে ঈদ করতে পারবে না। রাষ্ট্র এখন সাধারণের পাশাপাশি নারী ও শিশু নিপীড়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। এ দুই শিশুর মা হাফসা আক্তার ৩০ বা ৩২ বছর বয়সী, তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। হাইকোর্ট হাফসাকে জামিন দিয়েছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে জামিন স্থগিত করা হয়েছে। জামিন স্থগিতাদেশ তুলে নেওয়ার আবেদন রাষ্ট্রপক্ষের বিরোধিতার কারণে আবার পিছিয়েছে।’

শুনানিতে সিনিয়র আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী ঈদের আগে দুই শিশুর মা হাফসাকে জামিন দেওয়ার আবেদন জানান। তিনি বলেন, আর এক মাস তাকে জেলে রেখে রাষ্ট্রের কী লাভ হবে? হাফসা আক্তারের এক সন্তান নূরীর বয়স চার বছর। আরেক সন্তানের বয়স তার থেকে একটু বেশি। তাদের বাবাও পলাতক। শিশুদের দেখভাল করার কেউ নেই। যে মামলায় তিনি গ্রেফতার রয়েছেন সেটাতে পুলিশ চার থেকে সাড়ে চার মাসেও চার্জশিট দেয়নি।

এ সময় আদালত বলেন, আপনাদের আবেদন আংশিক মঞ্জুর করে জামিন আবেদনের শুনানি আমরা এগিয়ে দিচ্ছি। আগামী ২২ এপ্রিল আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে বিষয়টি শুনানির জন্য থাকবে।

তখন আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, শিশুদের কথা চিন্তা করে হাফসা আক্তারকে জামিন দিতে পারেন। অন্যথায় শিশুদেরও কারাগারে পাঠিয়ে দেন।

এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, হাফসা আক্তার যে ককটেল বিস্ফোরণ করেছেন ভিডিও ফুটেজে তার প্রমাণ রয়েছে।

এআইএম/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর