শেখ হাসিনার পতনের দাবিতে ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঠেকাতে বেপরোয়া গুলিবর্ষণ চালায় পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বেপরোয়া গুলি চালায় ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগসহ এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরাও। জুলাই-আগস্টের এই হত্যাকাণ্ডে যারা প্রাণ হারান তাদের মধ্যে বড় অংশই তরুণ ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। তাদেরই একজন চট্টগ্রাম পলিটেকনিকের মেধাবী শিক্ষার্থী ওসমান পাটোয়ারী। যিনি ৪ আগস্ট আন্দোলনের অংশ নিয়ে গুলিতে প্রাণ হারান। ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করেছেন তার বাবা আব্দুর রহমান। বিচার দিতে এসে তিনি ছেলেকে হত্যার সঙ্গে জড়িতদের সর্বোচ্চ বিচার দাবি করেন।
ঢাকা মেইলের কাছে ছেলে হারানোর বর্ণনা দিতে গিয়ে আব্দুর রহমান বলেন, ‘আমার ছেলে ওসমান ৪ আগস্ট বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় আমাকে ফোন দিয়ে আন্দোলনে যাওয়ার কথা জানায়। দেশের পরিস্থিতি ভালো না বলে আমি তাকে যেতে নিষেধ করি। তখন সে বলে আমার ছাত্র ভাইয়েরা আন্দোলন করতেছে তারা মারা যাচ্ছে। আমি আজকে মিছিলে যাবই। এরপর আমি তাকে যেতে দেই।’
বিজ্ঞাপন
‘ঠিক চারটা থেকে সাড়ে চারটার দিকে লক্ষীপুরে আমার ছেলে ওসমান গুলিবিদ্ধ হয়। এরপর কে বা কারা ছেলের লাশ ওখান থেকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যায়। যাওয়ার পর আমাকে একজন ফোন বলে ওতো মারা গেছে। আমি তাৎক্ষণিক ঢাকা থেকে বাড়ি গিয়ে আমার ছেলের নিথর দেহ দেখতে পাই। আমি আমার ছেলের বিচার চাই। খুনিদের সর্বোচ্চ সাজা চাই। আওয়ামী সন্ত্রাসীরা আমার ছেলেকে মেরেছে। তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি কামনা করছি।’
ওসমানের বাবা আরও বলেন, ‘আমার ছেলে চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে চতুর্থ সেমিস্টারে পড়াশোনা করতো। আমার এই মেধাবী ছেলে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। শেখ হাসিনা তার স্বজন হারাইছে, কখনো সন্তান হারায় নাই। সন্তান হারানোর ব্যথা সে বুঝে না। সন্তান হারালে শেখ হাসিনা বুঝতো সন্তান হারানোর ব্যথাটা কেমন। আমি বুঝি আমার কাছে সন্তানটা কেমন লাগে। আমি এই ব্যথা ভোলার কথা না ভুলব না।’
লক্ষীপুরে কারা গুলি করেছে? এমন প্রশ্নের জবাবে আব্দুর রহমান বলেন, লক্ষীপুরে আওয়ামী সন্ত্রাসী সালাউদ্দিন টিপু বাহিনী আমার সন্তানকে গুলি করে হত্যা করেছে। অনেকগুলো গুলি করেছে। মাথায় গুলি করেছে, পেছনে গুলি করেছে। আমি সবার কাছে দোয়া চাই।’
‘আমার ছেলে তো ছাত্র মিছিলে গেছে। এটা কী আমার ছেলের অপরাধ? আমি ২২ বছর ৩ মাস আমার ছেলেকে লালন-পালন করেছি কি গুলি খাওয়ার জন্য? গুলি খেয়ে মরার জন্য কি আমি আমার ছেলেকে এতদিন লালন-পালন করেছি। আমি তাকে পড়াশোনা করালাম, আমার মেধা নষ্ট হয়েছে। আমার শ্রম নষ্ট হয়েছে। আমার অর্থ নষ্ট হয়েছে। এটা আমার অপরাধ। আমি তো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মারি নাই। আমি তো শেখ হাসিনার বাবাকে মারি নাই। আমি তো শেখ মুজিবের খুনি না। আমার ছেলেকে কেন গুলি করে মারল। আমি আমার ছেলে হত্যার সর্বোচ্চ সাজা কামনা করছি।’
উল্লেখ্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের সময় পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গুলিতে দেড় হাজারের বেশি ছাত্র-জনতা মারা গেছেন। এ ঘটনায় দোষীদের বিচার চেয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করা হয়েছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৫৮১ জন নিহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্বাস্থ্যবিষয়ক উপকমিটি এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি। বিভিন্ন উৎস থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ এবং নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে বেসরকারি এই তালিকায় এসব নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে যাচাই-বাছাইয়ের পরই চূড়ান্ত তালিকা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।
এআইএম/এমআর