images

আইন-আদালত

ষোড়শ সংশোধনীর রিভিউ শুনতে পারবেন ৬ বিচারপতিই: আপিল বিভাগ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

২৩ নভেম্বর ২০২৩, ১০:৫৯ এএম

বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদ সদস্যদের হাতে এনে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে দেওয়া আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ ছয়জন বিচারপতি শুনতে পারবেন বলে সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন আপিল বিভাগ।

বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

এর আগে গত ১৬ নভেম্বর বহুল আলোচিত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে দেওয়া আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন ৬ জন বিচারপতির বেঞ্চ শুনতে পারবেন কি না, এ বিষয়ে আদেশের জন্য আজকের দিন ধার্য করা হয়।

সেদিন ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ শুনানির জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ছিল। শুনানি পিছিয়ে দেওয়ার জন্য সময় আবেদন করেন রিটকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ।

তিনি সময় আবেদনের সময় প্রশ্ন উপস্থাপন করে বলেন, আপিল বিভাগের ৭ জন বিচারপতি ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন আপিল বিভাগে ৬ জন বিচারপতি রয়েছে। ৬ জন বিচারপতি রিভিউ শুনতে পারবেন কি না? 

এর মধ্যে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, সুপ্রিম কোর্ট বার সভাপতি মোমতাজ উদ্দিন ফকির, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আজমালুল হোসেন কেসি, প্রবীর নিয়োগী, মুরাদ রেজা, তানজীবুল আলম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ তারা সবাই আদালতকে বলেন, এখন আপিল বিভাগে ছয়জন বিচারপতি রয়েছেন। ছয়জন বিচারপতি নিয়েই এখন আপিল বিভাগের ফুল বেঞ্চ। তাই ছয়জন বিচারপতির যোড়শ সংশোধনীর রিভিউ শুনতে বাধা নেই।

তবে এর বিপক্ষে মত দেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী। তিনি বলেন, সম সংখ্যক বিচারপতি বা তার বেশি বিচারপতির বেঞ্চে রিভিউটা শুনানি হওয়াই শ্রেয়। ছয় বিচারপতির বেঞ্চে এই রিভিউ শুনানি হলে নতুন প্রশ্নের সৃষ্টি হতে পারে।

মতামত নেওয়া শেষে আপিল বিভাগ এ বিষয়ে আদেশের জন্য আজকের (বৃহস্পতিবার) দিন ধার্য করেন। একইসঙ্গে মতামতের সপক্ষে রেফারেন্স সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের মঙ্গলবারের (২১ নভেম্বর) মধ্যে আদালতে জমা দিতে বলেন।

আরও পড়ুন

২০১৭ সালের ২৪ ডিসেম্বর বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদ সদস্যদের হাতে এনে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে দেওয়া আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন দাখিল করা হয়।

আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় রাষ্ট্রপক্ষ ৯০৮ পৃষ্ঠার এ রিভিউ আবেদনে ষোড়শ সংশোধনীর পক্ষে ৯৪টি যুক্তি দেখিয়ে আপিল বিভাগের রায় বাতিল চাওয়া হয়েছে।

২০১৭ সালের ৩ জুলাই তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চ ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেন। ৮ মে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি শুরু হয়। ধারাবাহিকভাবে ১১ দিন শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

আপিল শুনানিতে আদালতে মতামত উপস্থাপনকারী ১০ অ্যামিকাস কিউরির (আদালতের বন্ধু) মধ্যে শুধু ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর পক্ষে মত দেন।

আরও পড়ুন

অপর নয় অ্যামিকাস কিউরি ড. কামাল হোসেন, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম আই ফারুকী, আব্দুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া, প্রাক্তন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এফ এম হাসান আরিফ ব্যারিস্টার এম. আমিরুল ইসলাম, বিচারপতি টিএইচ খান, ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, ফিদা এম কামাল, এ জে মোহাম্মদ আলী সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর বিপক্ষে তাদের মতামত তুলে ধরেন।

২০১৬ সালের ৫ মে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ বলে রায় ঘোষণা করেন।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধানটি তুলে দিয়ে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী পাস হয়। ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ৯৬ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন এনে বিচারকের অপসারণের ক্ষমতা সংসদ সদস্যদের হাতে পুনরায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়। যেটি ১৯৭২ সালের সংবিধানেও ছিল।

সংবিধানে এই সংশোধনী হওয়ায় মৌল কাঠামোতে পরিবর্তন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করবে; এমন যুক্তিতে ওই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একই বছরের ৫ নভেম্বর হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করা হয়। ওই রিটের ওপর প্রাথমিক শুনানি শেষে হাইকোর্ট ২০১৪ সালের ৯ নভেম্বর রুল জারি করেন। 

এআইএম/এইউ