images

আন্তর্জাতিক

ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র ছাড়া ‘ধ্বংস’ হবে মধ্যপ্রাচ্য: জর্ডানের বাদশাহ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

১৪ অক্টোবর ২০২৫, ১০:১৪ এএম

চলমান শান্তি প্রক্রিয়া ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দিকে না গেলে মধ্যপ্রাচ্য ধ্বংস হয়ে যাবে বলে সতর্ক করেছেন জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ।

মিসরের শার্ম আল-শেখে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০-দফা শান্তি পরিকল্পনার ওপর অনুষ্ঠিত একটি শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার আগে বিবিসিকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেন তিনি।

শীর্ষ সম্মেলনটি সেই দিনে অনুষ্ঠিত হয় যখন হামাস গাজায় আটক শেষ জীবিত ইসরায়েলি জিম্মিদের ইসরায়েলের হাতে আটক ফিলিস্তিনি বন্দিদের বিনিময়ে মুক্তি দেয়।

বাদশাহ আবদুল্লাহ বলেন, ‘যদি আমরা এই সমস্যার সমাধান না করি, যদি আমরা ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের নাগরিকদের জন্য একটি ভবিষ্যৎ এবং আরব ও মুসলিম বিশ্ব এবং ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি না করি, তাহলে আমরা ধ্বংস হয়ে যাব।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার অনেক প্রচেষ্টা অতীতে ব্যর্থ হয়েছে। একমাত্র সমাধান হলো দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান; ইসরায়েলের পাশাপাশি পশ্চিম তীর ও গাজায় একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা।’

বাদশাহ আশা প্রকাশ করেন, ‘রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিস্থিতি ঠিক করা সম্ভব হবে। যদি আমরা সমাধান না করি, আবারও এই সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে।’

বর্তমান ইসরায়েলি সরকার বারবার দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান প্রত্যাখ্যান করেছে। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করেছেন। তবে একই অধিবেশনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শান্তি পরিকল্পনার রূপরেখা তৈরির জন্য বাদশাহ আবদুল্লাহসহ আঞ্চলিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন।

বাদশাহ আবদুল্লাহ বলেন, “তিনি আমাদের সকলকে যে বার্তাটি দিয়েছিলেন তা হলো-‘এটা বন্ধ করতে হবে, এটা এখনই বন্ধ করতে হবে‘ এবং আমরা বলেছিলাম, যদি কেউ এটা করতে পারে, তাহলে তিনি তা করতে পারেন।”

ইরানের সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধ এবং কাতারে হামাস নেতাদের ওপর ইসরায়েলি হামলাসহ গত দুই বছরের সহিংসতার কথা উল্লেখ করে জর্ডানের বাদশাহ বলেন, ‘আমরা আঞ্চলিক, অথবা উত্তর-দক্ষিণে বিভাজিত হয়ে সংঘাতে জড়ানো, যা সমগ্র বিশ্বকেই প্রভাবিত করতো, যার কতটা কাছাকাছি পৌঁছে গেছি?।

নেতানিয়াহুর কথা বলতে গিয়ে বাদশাহ আবদুল্লাহ বলেন, তিনি তার কথায় বিশ্বাস করেন না। তবে তিনি বিশ্বাস করেন যে এমন কিছু ইসরায়েলি আছেন যাদের সঙ্গে আরব নেতারা শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করতে পারেন।

হামাস এবং যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্তাবলীর অধীনে গাজার শাসনভার একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি সংস্থার কাছে হস্তান্তরের বিষয়ে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে জর্ডানের এই নেতা বলেন, ‘কাতার এবং মিশরের মতো দেশগুলো তাদের সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে, যারা মনে করে, যে এই চুক্তি সবাই মেনে চলবে। তারা খুবই আশাবাদী।’

বাদশাহ আবদুল্লাহ সতর্ক করে বলেন, ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় করা ‘চুক্তির বিষয়বস্তুর ভেতরেই শয়তান রয়েছে’ এবং গাজায় একবার যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলে মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

জর্ডানের বাদশাহ বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে আমাদের আলোচনায়, তিনি জানেন যে এটি কেবল গাজা নয়, এটি কেবল একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক বিষয় নয়। তিনি পুরো অঞ্চলে শান্তি ফিরিয়ে আনার দিকে তাকিয়ে আছেন। ফিলিস্তিনিদের ভবিষ্যৎ না থাকলে যা ঘটবে না।

জর্ডানের অনেকের বিরোধিতা সত্ত্বেও ১৯৯৪ সাল থেকে ইসরায়েলের সঙ্গে একটি শান্তিচুক্তি রয়েছে। দেশটির জনসংখ্যার ৫০ শতাংশেরও বেশি ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত। এছাড়া কিছু নিরাপত্তা ইস্যুতেও দেশ দুটি সহযোগিতা করে।

বর্তমান রাজার প্রয়াত বাবা বাদশাহ হুসেন এবং ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী আইজ্যাক রবিন এই শান্তি চুক্তিতে সম্মত হন। পরের বছর এক ইহুদি চরমপন্থি রবিনকে হত্যা করে।

নিজের জীবদ্দশায় ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রসহ একটি চূড়ান্ত শান্তি চুক্তি দেখতে পাবেন, এটি বিশ্বাস করেন কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে বাদশাহ আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমাকে করতেই হবে, কারণ বিকল্পের অর্থ সম্ভবত এই অঞ্চলের শেষ হবে। আমার মনে আছে, আমার বাবা তার জীবনের শেষের দিকে বলতেন, ‘আমি আমার সন্তানদের এবং তাদের সন্তানদের জন্য শান্তি চাই।' আমার দুই নাতি-নাতনি আছে; তারা সেই শান্তির যোগ্য। তাদের জন্য কতই না খারাপ হবে যদি তারা বড় হয়ে একই কথা বলে যা আমার বাবা বহু বছর আগে বলেছিলেন?’

‘আমি মনে করি এটাই আমাকে এবং এই অঞ্চলে আমাদের অনেককে উৎসাহিত করে যে, শান্তিই একমাত্র বিকল্প। কারণ যদি তা না ঘটে, তাহলে পশ্চিমারা, বিশেষ করে আমেরিকা, কতবার এতে জড়িয়ে পড়ে? ৮০ বছর হয়ে গেছে। এবং আমার মনে হয় আমাদের সকলের এখন বলার সময় এসেছে যে যথেষ্ট হয়েছে।’

এমআর