মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

মুক্তি পেলেন ফিলিস্তিনি বন্দিরা, নেসেটে ট্রাম্পের ভাষণের সময় হট্টগোল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:২৭ এএম

শেয়ার করুন:

মুক্তি পেলেন ফিলিস্তিনি বন্দিরা, নেসেটে ট্রাম্পের ভাষণের সময় হট্টগোল
মুক্তি পেলেন ফিলিস্তিনি বন্দিরা, নেসেটে ট্রাম্পের ভাষণের সময় হট্টগোল

গাজায় চলমান যুদ্ধবিরতির আওতায় বন্দিবিনিময় করেছে হামাস ও ইসরায়েল। সোমবার হামাস ইসরায়েলের কাছে হস্তান্তর করেছে জীবিত ২০ জন জিম্মিকে। এছাড়া ৪ জন মৃত জিম্মির মরদেহও ফেরত দেওয়া হয়েছে। একই দিনে ইসরায়েলও মুক্তি দিয়েছে ১ হাজার ৯৬৮ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে। বন্দিবিনিময় সম্পন্ন হওয়ার মধ্য দিয়ে দুই বছরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় শেষ হলো বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলায় ইসরায়েলে প্রাণ হারান প্রায় ১ হাজার ২০০ জন। ওই হামলার পর হামাস যোদ্ধারা প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায়। এর জেরে গাজায় নির্বিচারে বিমান ও স্থল হামলা শুরু করে ইসরায়েল, যা চলে টানা দুই বছর। এই সময়ে নিহত হয় ৬৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি, আহত ও গৃহহীন হয় আরও বহু মানুষ।


বিজ্ঞাপন


বিভিন্ন পর্যায়ে ধাপে ধাপে অনেক জিম্মিকে আগেই মুক্তি দেয় হামাস। সর্বশেষ গাজায় থাকা ৪৮ জন জিম্মির মধ্যে ২০ জন জীবিত এবং ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানায় হামাস। সোমবার আন্তর্জাতিক সংস্থা রেডক্রসের মাধ্যমে দুই ধাপে জীবিতদের ইসরায়েলের কাছে হস্তান্তর করা হয়। মৃতদের মরদেহ ফেরত দেওয়ার কাজও শুরু হয়েছে।

বিনিময়ের অংশ হিসেবে ইসরায়েল তাদের কারাগারে থাকা ১ হাজার ৯৬৮ জন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেয়। ইসরায়েলি কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, ওফের ও কেতজিওত কারাগার থেকে তাদের মুক্তি দিয়ে পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম ও কেরেম সালোম এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কারাগারের বাইরে জড়ো হন বন্দিদের স্বজনরা। অনেকেই পতাকা হাতে অপেক্ষায় ছিলেন প্রিয়জনকে কাছে পাওয়ার আশায়। অনেক বছর পর বন্দিদের ফিরে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেক পরিবার।

গাজার খান ইউনিসে বন্দিমুক্তির আনন্দে ছোটখাটো উৎসবের আয়োজন করা হয়। সেখানে ফিলিস্তিনি পতাকা ও ব্যানার দিয়ে চত্বর সাজানো হয়। এক ফিলিস্তিনি বাবা ইয়াসির আবু আজুম বলেন, ২০২৩ সালে আমার ছেলেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। দুই বছর পর ওকে ফিরে পেয়েছি। এত খুশি লাগছে যে ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।

অন্যদিকে তেল আবিবেও দেখা গেছে স্বস্তির চিত্র। মুক্তি পাওয়া ইসরায়েলি জিম্মিদের দেখতে ‘হোস্টেজ স্কয়ারে’ ভিড় করেন হাজার হাজার মানুষ। জিম্মিদের রেইম সামরিক ঘাঁটিতে নিয়ে গিয়ে পরিবারদের সঙ্গে মিলিত করা হয়। এক জিম্মির মা বলেন, এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।


বিজ্ঞাপন


এদিকে, বন্দিমুক্তির পাশাপাশি ফিলিস্তিনি বন্দিদের ওপর ইসরায়েলি কারাগারগুলোতে চলা নিপীড়নের বিষয়েও নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনি সাংবাদিক আলা–রিমায়ি জানান, কারাগারে দীর্ঘদিন অনাহারে থাকতে হয়েছে তাকে। ওজন কমেছে প্রায় ৫০ কেজি। মেয়েকে জড়িয়ে ধরলে সে বলে, ‘বাবা তুমি ব্যথা দিচ্ছ।’ তার শরীর এতটাই শুকিয়ে গেছে যে হাড় বেরিয়ে এসেছে।

পশ্চিম তীরের বিরজেইত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বাসিল ফারাজ জানান, কয়েকজন বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হলেও কারাগারে এখনো ফিলিস্তিনি বন্দিদের ওপর নির্যাতন অব্যাহত আছে। অনেকে শারীরিক নিপীড়নের পাশাপাশি যৌন হয়রানির শিকারও হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

বন্দিবিনিময়ের এই দিনটিতেই ইসরায়েলে মধ্যপ্রাচ্য সফরের অংশ হিসেবে যান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দেশটির পার্লামেন্ট নেসেটে ভাষণ দিতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েন তিনি। এক আরব বংশোদ্ভূত ইসরায়েলি আইনপ্রণেতা আয়মান ওদেহ ‘ফিলিস্তিনের মুক্তি চাই’ ও ‘জেনোসাইড’ লেখা একটি কাগজ তুলে ধরেন। এর ফলে কিছু সময়ের জন্য পার্লামেন্টে হট্টগোল সৃষ্টি হয়। পরে আয়মান ও আরেক আইনপ্রণেতা ওফের কাসাইফকে পার্লামেন্ট থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

ভাষণে ট্রাম্প বলেন, বন্দুক নীরব হয়েছে, সাইরেন থেমে গেছে। পবিত্র ভূমির আকাশে এখন সূর্য উঠছে। শান্তি ফিরে এসেছে। তিনি হামলা বন্ধে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ভূমিকার প্রশংসা করেন। একইসঙ্গে গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠায় আরব ও মুসলিম দেশগুলোর মধ্যস্থতাকারী ভূমিকার জন্য কৃতজ্ঞতা জানান।

নেসেটে ভাষণ শেষ করে ট্রাম্প যোগ দেন মিসরের শারম আল–শেখে আয়োজিত আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলনে। গাজায় যুদ্ধবিরতির বাস্তবায়ন ও তা দীর্ঘমেয়াদে বজায় রাখার লক্ষ্যে আয়োজিত এ সম্মেলনে অংশ নেন ২৮টি দেশের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। এখানে গাজা যুদ্ধবিরতির ওপর ভিত্তি করে তৈরি একটি নথিতে সই করেন ট্রাম্পসহ অন্যান্য বিশ্বনেতা।

সম্মেলনে অংশ নেওয়া নেতাদের মধ্যে ছিলেন মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল–সিসি, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান, কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রেডরিখ মের্ৎস, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এবং ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তো।

সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ‘গাজায় যুদ্ধবিরতি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। আমরা যা করেছি, তা পৃথিবী চিরকাল মনে রাখবে। এটি এক অনন্য ও বিশেষ অর্জন।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই অঞ্চলে আমরা এমন একটি ঐতিহ্য গড়ে তুলবো, যা একদিন সবার গর্বের কারণ হবে।’

গাজা যুদ্ধবিরতির নেপথ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় মিসর, কাতার, তুরস্কসহ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে ধন্যবাদ জানান ট্রাম্প। সম্মেলনের সময় মিসরের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘দ্য অনার অব দ্য নিল’ গ্রহণ করেন তিনি। সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ভূমিকাও সম্মেলনে বিশেষভাবে তুলে ধরেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সূত্র: রয়টার্স ও আল–জাজিরা

এইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর