images

আন্তর্জাতিক

মার্কিন শুল্ক নিয়ে প্রবল চাপ, ভারত কী করবে?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

০৪ আগস্ট ২০২৫, ১০:৩০ পিএম

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ডেপুটি চিফ অফ স্টাফ স্টিফেন মিলার বলেছেন, ভারত রাশিয়া থেকে তেল কিনছে। সেই অর্থে রাশিয়া যুদ্ধের খরচ চালাচ্ছে। ভারত চীনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে রাশিয়ার তেল কিনছে জানতে পেরে মানুষ ধাক্কা খেয়েছে। এটা অবাক করার মতো ঘটনা।

মিলারের দাবি, ট্রাম্পের সঙ্গে ভারতের এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অসম্ভব ভালো সম্পর্ক। কিন্তু যুদ্ধের খরচ জোগানোর জন্য অর্থ দেয়ার বিষয়টিও বাস্তব। তাই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে ইউক্রেন যুদ্ধ থামানোর জন্য অনেক বিকল্প আছে।

ভারত কী রাশিয়া থেকে তেল কিনছে?

প্রশ্ন হলো, যুক্তরাষ্ট্রের প্রবল চাপের মুখে পড়েও কি ভারত রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল কিনবে? এখনো পর্যন্ত এ নিয়ে পরস্পরবিরোধী রিপোর্ট সামনে এসেছে। বার্তাসংস্থা রয়টার্স সূত্রকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছিল, ভারতের সরকারি তেল সংস্থাগুলো রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ রেখেছে।

অন্যদিকে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ জানাচ্ছে, ভারত সরকার কোনো তেল শোধনাগার সংস্থাকে রাশিয়া থেকে তেল কিনতে নিষেধ করেনি। সরকারি ও বেসরকারি তেল শোধনাগারগুলিকে বলা হয়েছে, তারা নিজেদের পছন্দমতো জায়গা থেকে তেল কিনতে পারবে।

নিউ ইয়র্ক টাইমসও গত শনিবার জানিয়েছে, ভারত রাশিয়া থেকে তেল কিনবে। ট্রাম্পের সংরক্ষণ নিয়ে হুমকির পরেও তারা তেল কিনবে বলে ভারতের দুইজন প্রবীণ কর্মকর্তা তাদের জানিয়েছে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানিয়েছেন, ঠান্ডা যুদ্ধের সময় থেকে রাশিয়া ভারতকে অস্ত্র বিক্রি করছে। রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক স্থির থেকেছে এবং তা সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। ভারতের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের সম্পর্ক অন্য কোনো দেশের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা ঠিক হবে না। ভারত আশা করে, অ্যামেরিকার সঙ্গেও তাদের ইতিবাচক সম্পর্ক বজায় থাকবে।

আগস্টের শেষ দিকে ভারতের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধিরা সম্ভবত দিল্লি আসবেন। কিন্তু ভারত যুক্তরাষ্ট্রের দাবি মেনে দেশের কৃষি ও ডেইরি ক্ষেত্রকে খুলে দেবে না।

মোদি কি বলেছেন

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত সপ্তাহান্তে বলেছেন, ‘দেশের মানুষের উচিত স্বদেশি জিনিস কেনা। বিশ্বের অর্থনীতি এখন অনেক ঝুঁকির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এখন একটা অস্থির পরিস্থিতি চলছে। এখন আপনারা কী কিনবেন তা গুরুত্বপূর্ণ। আপনারা সেই জিনিস কিনুন যা একজন ভারতীয়দের পরিশ্রমে তৈরি হয়েছে।’

চাপে কতটা ফল হবে?

অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকার বলেছেন, ‘ট্রাম্পের শুল্কের দুই ধরনের প্রতিক্রিয়া থাকবে। স্বল্পমেয়াদী প্রভাব শেয়ার বাজারের উপর পড়ূবে।এই যে শুল্ক বসানো হলো, তার ফলে অনেক সংস্থায় লাভ কম হবে। তাদের শেয়ারের দাম পড়বে। এরকম ক্ষেত্রে এফআইআই খুব তাড়াতাড়ি প্রতিক্রিয়া জানায়। তারা শেয়ার বিক্রি করে চলে যায়। তারা মনে করে, অর্থনীতিতে ধাক্কা লাগবে, টাকার অবমূল্যায়ণ হবে।’

তিনি বলেছেন, ‘দীর্ঘমেয়দী বিষয় হলো, শুল্কের ধাক্কা ওষুধ, ইঞ্জিনিয়ারিং, বাসমতী, ইলেকট্রনিক এবং কিছুটা বস্ত্রশিল্পের উপর পড়বে। আমাদের দেশের জিনিস অ্যামেরিকায় সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয়। আমাদের রপ্তানির ১৮ শতাংশ অ্যামেরিকায় হয়। এটা তো বেশ বড় অংশ। অ্যামেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য  ক্ষতিগ্রস্ত হলে জিডিপি-র উপর প্রভাব পড়বে। ভবিষ্যতে দুই দেশ নতুন করে আলোচনায় বসার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।’

অভিরূপ সরকার জানিয়েছেন, ‘একটা কথা বলব, অ্যামেরিকা যদি যথেচ্ছভাবে শুল্ক বসায়, তাহলে অন্য দেশও অ্যামেরিকাকে বাদ দিয়ে বাণিজ্য করতে শিখে যাবে। ওদের উপরেও দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ভালো হবে না।’

অধ্যাপক শুভনীল চৌধুরী বলেছেন, বর্ধিত শুল্কের প্রভাব আমাদের ওপর ফেলবে। ইলেকট্রনিক, বস্ত্রশিল্প, পরিষেবা ক্ষেত্রের ওপর পড়বে। এর ফলে জিনিসের দাম বাড়বে। চাহিদা কমবে। ফলে শ্রমিকরা ধাক্কা খাবে। আমাদের ক্ষেত্রগুলো বিপন্ন হবে।

শুভ্রনীলের মতে, ‘অ্যামেরিকা আমাদের জরিমানা কেন করবে, সেই অধিকার তাদের আছে কি?’ তিনি বলেছেন, ‘ভারত কী করছে বোঝা যাচ্ছে না। আমরা বলছি, আমরা সমীক্ষা করছি। মোদি বলছেন, স্বদেশি পণ্য ক্রয় করুন। শুল্ক মোকাবিলার কৌশল কী হবে তা স্পষ্ট নয়।’

তিনি মনে করেন, ‘রাশিয়া আমাদের বহুদিনের অংশীদার। আমরা সেখান থেকে আমদানি, রফতানি বন্ধ করে দেব, এটা ঠিক নয়। রাশিয়া তেলের ক্ষেত্রে বড় প্লেয়ার। রাশিয়াকে ছাড়লে আমরা পুরোপুরি মধ্যপ্রাচ্যের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে যাব। ভ্যারিজ সোর্স থাকা উচিত। রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা উচিত। চীন ওদের সঙ্গে বাণিজ্য করছে। রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধের কোনো যুক্তি নেই।’

দ্য টেলিগ্রাফের দিল্লির সাবেক বিজনেস এডিটর জয়ন্ত রায়চৌধুরী জানিয়েছেন, ‘যে সময়ে ট্রাম্প বাড়তি শুল্কের ঘোষণা করলেন, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিদল এসে এবার দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করবে এবং তার ফলে ২০২৩ সালের মধ্যে মোট বাণিজ্যের পরিমাণ দ্বিগুণ হবে বলে আশা করা হচ্ছিল। কিন্তু এখন সেই সম্ভাবনায় ধাক্কা লাগলো।’

সূত্র: ডয়চে ভেলে

এমএইচআর