images

আন্তর্জাতিক

গাজায় চরম দুর্ভিক্ষ, মায়ের কোলেই মৃত্যু হলো ক্ষুধার্ত শিশুর

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

২৬ জুলাই ২০২৫, ০৮:০০ পিএম

গাজা উপত্যকায় ত্রাণ প্রবেশে ইসরায়েলের অবরোধের ফলে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি ফিলিস্তিনিরা। প্রতিদিনই র্দীঘ হচ্ছে ক্ষুধাজনিত কারণে মৃত্যুর মিছিল। এ তালিকায় যুক্ত হলো আরও একজনের নাম। মারাত্মক অপুষ্টিতে ভোগা ছয় মাস বয়সী এক ফিলিস্তিনি শিশু তার মায়ের কোলেই মারা গেছে। মর্মান্তিক ঘটনাটি আন্তর্জাতিকভাবে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শুক্রবার (২৫ জুলাই) জয়নাব আবু হালিব নামের ছয় মাস বয়সী মেয়ে শিশুটিকে দক্ষিণ গাজার একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন তার মা। কিন্তু হাসপাতালে নেওয়ার পথেই মায়ের কোলে প্রাণ হারায় শিশুটি।

শিশুটির মা ইসরা আবু হালিব সিএনএনকে জানান, গত তিন মাসে বেশ কয়েকবার শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। গতকাল তার অবস্থা খারাপ হলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলাম।

তিনি বলেন, ‘যানবাহন না থাকায় আমাকে ৩০ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে হাঁটতে হয়েছিল...কাঁচা রাস্তা এত দীর্ঘ ছিল... আবহাওয়া অনেত গরম ছিল, কিন্তু ক্ষুধার্ত থাকা সত্ত্বেও এবং পানি না থাকা সত্ত্বেও আমি হাঁটতে থাকি। তবে হঠাৎ আমার মনে হলো সে নড়াচড়া এবং শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ করে দিয়েছে; তার শরীর ভারী হয়ে উঠেছে।’

তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে প্রশ্ন রাখেন, ‘আমি আর কি বলবো বুঝতে পারছি না। পৃথিবীর জেগে উঠতে জয়নাবের মতো আর কত নিষ্পাপ শিশুর না খেয়ে মারা উচিৎ?’

cambo
গত ১৫ মার্চ তোলা শিশু জয়নাব আবু হালিবের ছবি (বায়ে) এবং শুক্রবার মৃত্যুর পর তোলা ছবি (ডানে)। 

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ডা. মুনির আল-বোর্শ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সের এক পোস্টে বলেছেন,‘জয়নাব গুরুতর অপুষ্টির জটিলতায় মারা গেছে। তার হাড়ের ওপর শুধু চামড়া অবশিষ্ট ছিল...।’

তিনি আরও জানান, গাজায় পাঁচ বছরের কম বয়সী ২ লাখ ৬০ হাজারেরও বেশি শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে।

এদিকে গাজা উপত্যকাজুড়ে ব্যাপক মাত্রায় দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়েছে বলে দাবি করেছে ১০০টিরও বেশি এনজিও ও মানবাধিকার গোষ্ঠী। তারা অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল গাজার ভেতরে খাদ্য বিতরণ করতে দিচ্ছে না। এতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রুপ নিতে পারে সতর্ক করে গাজায় অবিলম্বে ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং ত্রাণ প্রবেশে ইসরায়েলি বিধিনিষেধ প্রত্যাহারে পদক্ষেপ নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাগুলো। 

এদিকে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, গাজা উপত্যকা বর্তমানে তার ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ মানবিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে চলতি বছরের ২ মার্চ থেকে গাজার সব সীমান্ত ক্রসিং সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে খাদ্য, চিকিৎসা সরবরাহ এবং মানবিক সাহায্যের প্রবেশ ইসরায়েলি অবরোধের কারণে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রুপ নিয়েছে। 

ডব্লিউএফপির অনুমান অনুসারে, ইসরায়েলি অবরোধের কারণে গাজার জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ একটানা বেশ কয়েক দিন ধরে কিছু না খেয়ে আছে। এরমধ্যে ১ লাখ নারী ও শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে। 

ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা এবং অধিকার গোষ্ঠীগুলো উপত্যকাজুড়ে ক্ষুধার কারণে মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমেই আরও বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন, বিশেষ করে শিশু, অসুস্থ এবং বয়স্কদের মধ্যে চরম অপুষ্টি দেখা দিয়েছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গাজা উপত্যকার হাসপাতালগুলোতে গত ২৪ ঘণ্টায় দুর্ভিক্ষ ও অপুষ্টির কারণে নতুন করে ৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরুর পর ক্ষুধাজনিত কারণে নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ১২২ জনে দাঁড়িয়েছে, যার মধ্যে ৮৩ জনই শিশু।


এমএইচআর