ঢাকা মেইল ডেস্ক
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৩২ পিএম
সিরিয়ায় নতুন প্রশাসনের দায়িত্ব গ্রহণের শর্তাবলী ও সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো এবং তাদের মিত্র ইসরায়েলের কৌশল স্পষ্ট হয়ে উঠছে। এই প্রক্রিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র ধ্বংস, ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ইরানের প্রভাব হ্রাসের বিষয়গুলো বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। নিচে বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণ করা হলো:
১. রাসায়নিক অস্ত্র ধ্বংস ও ইসরায়েলের উদ্বেগ
ওয়াশিংটন ও ইসরায়েলের মূল শর্ত হলো সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্রের সম্পূর্ণ ধ্বংস। ইসরায়েলের নিরাপত্তার জন্য এই অস্ত্রের উপস্থিতি বড় ধরনের উদ্বেগের কারণ। নতুন প্রশাসন এই প্রক্রিয়ায় নমনীয়তা দেখাচ্ছে, যা পশ্চিমাদের সহযোগিতার পথ সুগম করতে পারে। এটি পশ্চিমাদের কাছে সিরিয়ার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
২. সামরিক অবকাঠামো ধ্বংস এবং রাসায়নিক অস্ত্রের ঝুঁকি
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ইতোমধ্যে সিরিয়ার সামরিক অবকাঠামো কার্যত ধ্বংস করে দিয়েছে। কিন্তু রাসায়নিক অস্ত্রের অবশিষ্টাংশ এখনো উদ্বেগের বিষয়। সিরিয়ার সামরিক দুর্বলতা ইসরায়েলের জন্য তাৎক্ষণিক নিরাপত্তা দিলেও রাসায়নিক অস্ত্র নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ইসরাইল নিরাপত্তা পাচ্ছে না।
৩. ইদলিবের নতুন নেতৃত্বের উত্থান
ইদলিব থেকে আহমেদ আশ-শারার নেতৃত্বে নতুন প্রশাসন ক্ষমতায় আসতে পারে। তার দক্ষ কৌশল ও পশ্চিমা স্বার্থের প্রতি সাযুজ্য সিরিয়াকে নতুন ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানে নিয়ে যেতে পারে। সিরিয়াকে পশ্চিমাদের কোলে তুলে দেওয়ার মতো হতে পারে।
৪. এইচটিএসকে সন্ত্রাসী তালিকা থেকে অপসারণ
ওয়াশিংটনের এক কৌশল হতে পারে হাইআতুত তাহরির আশ-শাম (এইচটিএস)-কে সন্ত্রাসী তালিকা থেকে অপসারণ করা। এটি সিরিয়ার নতুন প্রশাসনের বৈধতা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে। তবে এটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিতর্ক সৃষ্টি করতে পারে। পশ্চিমারা এই কৌশলটি গ্রহণ করতে পারে।

৫. নিষেধাজ্ঞা ও ব্ল্যাকমেইল কৌশল
ওয়াশিংটন তার অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে নতুন প্রশাসনের ওপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করবে। এটি সিরিয়াকে পশ্চিমা স্বার্থের অধীন রাখার দীর্ঘমেয়াদী কৌশলের অংশ।
৬. ইরানের প্রভাব হ্রাস ও ইসরায়েলের নিরাপত্তা
সিরিয়া থেকে ইরানের প্রভাব হ্রাস করাই পশ্চিমা কৌশলের অন্যতম মূল লক্ষ্য। এটি ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদী নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সিরিয়ার নতুন প্রশাসন যদি ইরানকে পুরোপুরি দূরে রাখতে পারে, তবে এটি আমেরিকার ভূ-রাজনৈতিক কৌশলকে সফল করবে।
৭. ধর্মীয় ও সামাজিক সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা
সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করাও নতুন প্রশাসনের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতার শর্তাবলীর অন্তর্ভুক্ত। এই পদক্ষেপগুলো আন্তর্জাতিক মহলে সিরিয়ার ভাবমূর্তি উন্নত করতে পারে।
৮. আঞ্চলিক শক্তির ভূমিকা ও দামেস্কের অবস্থান
তুরস্কসহ আঞ্চলিক শক্তির সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন নতুন প্রশাসনের জন্য চ্যালেঞ্জ হতে পারে। সিরিয়ার ভূ-রাজনীতিতে দামেস্কের অবস্থান পুনর্নির্ধারণ এই প্রশাসনের সক্ষমতার উপর নির্ভর করছে।
দামেস্কে নতুন প্রশাসন গঠনের জন্য পশ্চিমা শর্তাবলী মূলত ইসরায়েলি নিরাপত্তা এবং ইরানের প্রভাব হ্রাসের ওপর নির্ভর করছে। রাসায়নিক অস্ত্র ধ্বংস, সামরিক স্থিতিশীলতা ও সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে সিরিয়ার নতুন প্রশাসন আন্তর্জাতিক বৈধতা অর্জনের পথে এগিয়ে যেতে পারে। তবে, ওয়াশিংটনের নিষেধাজ্ঞা ও কৌশলগত চাপ এই প্রক্রিয়াকে দীর্ঘমেয়াদে জটিল করে তুলতে পারে। সিরিয়ার ভূ-রাজনীতির এই পরিবর্তন শুধু মধ্যপ্রাচ্যের নয়, পুরো অঞ্চলের ভবিষ্যৎ স্থিতিশীলতার ওপর গভীর প্রভাব ফেলবে।
জেবি