রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

আমিরাত ও নতুন সিরিয়ার সংযোগে সম্ভাবনার হাতছানি

মুহাম্মাদ শোয়াইব
প্রকাশিত: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৩০ পিএম

শেয়ার করুন:

আমিরাত ও নতুন সিরিয়ার সংযোগে সম্ভাবনার হাতছানি

সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ও নতুন সিরিয়ার প্রশাসনের মধ্যকার সাম্প্রতিক যোগাযোগ মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতির এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হিসেবে দেখা যেতে পারে। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনের পর এই প্রথমবার দুই দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে। এই বৈঠক কেবল দুই দেশের নয়, বরং সমগ্র অঞ্চলের ভবিষ্যতের দৃষ্টিভঙ্গিকে নতুন করে সাজাতে পারে।

২৩ ডিসেম্বর, ইউএইর উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ বিন জায়েদ ও সিরিয়ার নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদ আল-শাইবানি ফোনে আলোচনা করেন। আলোচনার বিষয় ছিল ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক জোরদার করা এবং সিরিয়ার ঐক্য, নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রতি ইউএই-এর প্রতিশ্রুতি। ইউএই স্পষ্ট করেছে যে, তারা সিরিয়ার জনগণের জন্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও স্থিতিশীল ভবিষ্যৎ গড়ার প্রচেষ্টায় সমর্থন অব্যাহত রাখবে।


বিজ্ঞাপন


আসাদের পতনের আগে ইউএই সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব রক্ষার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। ২০১১ সালে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইউএই তার নীতি পুনর্নির্ধারণ করে। যার মধ্যে আসাদ সরকারকে আরব লিগে ফিরিয়ে আনার জন্য কার্যকর ভূমিকা পালন করাও অন্তর্ভুক্ত। আসাদের পতনের পর ইউএই দামেস্কের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের জন্য একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

আরও পড়ুন

সিরিয়ায় নিজেদের ভুলের পুনরাবৃত্তি করছে পশ্চিমারা!

উল্লেখযোগ্যভাবে, ইউএইর প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আসাদের শাসনের শেষ দিনগুলোতেও তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। এমনকি ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে আসাদকে আরব দেশে ফিরিয়ে আনার পথে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে আমিরাতে স্বাগত জানান।

সিরিয়ার পুনর্গঠন প্রক্রিয়া ইউএই-এর জন্য একটি বড় সুযোগ হিসেবে দেখা যেতে পারে। ড. সামির আল-আব্দুল্লাহ, হারমন সেন্টার ফর কনটেম্পরারি স্টাডিজের নীতি বিশ্লেষণ বিভাগের পরিচালক, বলেছেন যে সিরিয়া ও ইউএইর সম্পর্ক অন্যান্য আরব দেশের তুলনায় ভিন্ন হতে পারে। তিনি উল্লেখ করেছেন, সিরিয়ার সরকারের উচিত অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের আশ্বাস প্রদান করা, যা সম্পর্ক উন্নয়নের গতি বাড়াবে।


বিজ্ঞাপন


RRR

ইউএই সিরিয়ার পুনর্গঠনে অর্থনৈতিক সহযোগিতার মাধ্যমে সরাসরি উপকৃত হতে পারে। এই প্রকল্পগুলো উভয় দেশের জন্য কর্মসংস্থান এবং বাণিজ্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরি করবে। ইউএই, একটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে, সিরিয়ায় রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনতে এবং পুনর্গঠনের মাধ্যমে অন্যান্য প্রভাবশালী শক্তির ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারে।

ইরানের সিরিয়ায় ভূমিকা ও তার পরিণতি ইউএই-সিরিয়া সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আল-আব্দুল্লাহ বলেন, সিরিয়ার ওপর ইরানের প্রভাব এই সম্পর্ককে একটি বিশেষ দৃষ্টিকোণ দেয়। তবে, সিরিয়ার নতুন প্রশাসন যদি গঠনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং নতুন পাতা উল্টানোর চেষ্টা করে, তাহলে এই প্রভাব সীমিত হতে পারে।

আরও পড়ুন

সিরিয়ার সামনে যত চ্যালেঞ্জ

দামেস্কে ইউএইর দূতাবাস পুনরায় খোলার কাজ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে, আব্দুল্লাহর মতে, এই কাজটি সম্পন্ন হলে তা উভয় দেশের জন্যই উপকারী হবে। এটি ইউএইকে সিরিয়ায় পুনর্গঠন ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে একটি কার্যকর ভূমিকা রাখতে সাহায্য করবে।

ইউএই-সিরিয়া সম্পর্কের পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ থাকলেও সম্ভাবনাগুলো বিশাল। আব্দুল্লাহ বলেন, সিরিয়ার পুনর্গঠন এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে উভয় পক্ষের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর অনেক সুযোগ রয়েছে। সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ অগ্রগতি এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সমন্বয় এই সহযোগিতাকে আরও কার্যকর করতে পারে।

ইউএই-সিরিয়া সম্পর্ক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। এই সম্পর্কের পুনর্গঠন কেবল অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রেই নয়, বরং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ইউএইর কৌশলগত অবস্থান এবং সিরিয়ার পুনর্গঠনে অংশগ্রহণ উভয় দেশের জন্যই লাভজনক হতে পারে। তবে, উভয় পক্ষকে একত্রে কাজ করে আস্থা ও সমন্বয় বাড়াতে হবে। এটাই হতে পারে মধ্যপ্রাচ্যে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা।

জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর