রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

সিরিয়ায় নিজেদের ভুলের পুনরাবৃত্তি করছে পশ্চিমারা!

মুহাম্মাদ শোয়াইব
প্রকাশিত: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:১০ পিএম

শেয়ার করুন:

সিরিয়ায় নিজেদের ভুলের পুনরাবৃত্তি করছে পশ্চিমারা!
ছবি: সংগৃহীত

পশ্চিমারা আবারও সিরিয়ায় একই ভুলের পুনরাবৃত্তি করছে। প্রথমবার তারা বাশার আল-আসাদকে উৎখাত করতে ব্যর্থ হয়েছিল। সেবার সিরিয়ার জনগণ প্রায় একাই স্বৈরাচারী শাসককে ক্ষমতাচ্যুত করতে চলেছিল। কিন্তু ইরান ও রাশিয়ার সহায়তায় আসাদ আবার ক্ষমতা সুসংহত করেন। দ্বিতীয়বার, তারা সিরিয়ার সংকটকে উপেক্ষা করে ইসরায়েলের নিরাপত্তার চারপাশে তাদের কৌশল সাজিয়েছে।

২০১১ সালে সিরিয়ায় বিপ্লব যখন জোরালোভাবে এগিয়ে যাচ্ছিল তখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা একটি ‘লাল রেখা’ টেনেছিলেন। তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, সিরিয়ার সরকার যদি রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করে, তবে তারা কঠোর জবাব পাবে। কিন্তু আসাদ যখন বারবার এই অস্ত্র ব্যবহার করলেন, তখন ওবামা চুপ থাকলেন। এই নীরবতা শুধু আসাদকেই নয়, তার আন্তর্জাতিক মিত্রদেরও আত্মবিশ্বাসী করে তোলে।


বিজ্ঞাপন


ওবামার প্রশাসন বিপ্লবীদের সাহায্য করতে একটি কার্যকর পরিকল্পনাও গ্রহণ করেনি। এমনকি যখন তার সামরিক উপদেষ্টা জেনারেল পেট্রাউস সিরিয়ার বিদ্রোহীদের সহায়তার পরামর্শ দেন, তখনও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। সিরিয়ার জনগণের সংগ্রামকে ‘গৃহযুদ্ধ’ হিসেবে চিত্রিত করে পুরো সংকট থেকে হাত ধুয়ে ফেলেন।

এটি ছিল প্রথম ভুল। কিন্তু দ্বিতীয় ভুলটি আরও ভয়ঙ্কর ও কৌশলগতভাবে ধ্বংসাত্মক। যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা সিরিয়ার জনগণের দুর্ভোগকে পাশ কাটিয়ে ইসরায়েলের নিরাপত্তায় তাদের নীতিকে কেন্দ্রীভূত করেছে।

তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেছেন, সাত বছর আগে জো বাইডেন যখন ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তখন তিনি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানকে স্পষ্টভাবে বলেছিলেন, ‘আমরা চাই না আসাদ চলে যাক।’ কারণ? ইসরায়েল আসাদের পতন চায়নি।

আরও পড়ুন

সিরিয়ার সামনে যত চ্যালেঞ্জ

বাশার পরবর্তী সিরিয়া ও নতুন চ্যালেঞ্জ

পশ্চিমাদের দৃষ্টি বরাবরই ইসরায়েলের দিকে। তারা সিরিয়ার মানুষের জন্য স্থায়ী সমাধান খোঁজার চেয়ে বেশি চিন্তিত ইসরায়েলের সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে। এটি শুধু নীতির দ্বৈততা নয়, এটি নৈতিক ব্যর্থতার একটি স্পষ্ট উদাহরণ।

আজ, সিরিয়ার জনগণ ধ্বংসস্তূপের মধ্যে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে। অথচ পশ্চিমা মিডিয়া ও কর্মকর্তারা সিরিয়ার নতুন প্রশাসনের একমাত্র মূল্যায়ন করছেন ইসরায়েলের প্রতি তাদের অবস্থানের মাধ্যমে। এটি কি শুধু কৌশলগত স্বার্থ, নাকি নৈতিকতার প্রতি চরম অবজ্ঞা?

পশ্চিমাদের ভুলের ফলে মধ্যপ্রাচ্যের সংকট আরও গভীর হয়েছে। প্রথমবার তারা সিরিয়ার জনগণকে বাঁচাতে ব্যর্থ হয়েছিল। এবার তারা ইসরায়েলের নিরাপত্তার নামে একটি ক্ষতবিক্ষত জাতিকে বঞ্চিত করছে। ইতিহাস এ ভুল ক্ষমা করবে না।

লেখক: কলামিস্ট ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশ্লেষক

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর