images

আন্তর্জাতিক

গাজার পূর্বাঞ্চলে ইসরায়েলি হামলা, নিহত কমপক্ষে ৩০

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৬:৪৭ পিএম

গাজার পূর্বাঞ্চলে ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৩০ জন নিহত হয়েছেন। স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো এ খবর দিয়েছে।

ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, ‘গাজার পূর্বাঞ্চলে সোমবার ইসরায়েলি বিমান হামলায় ৩০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।’

ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো গাজার আল-জায়তুন এবং আল-শুজাইয়া এলাকায় বেশ কয়েকটি পরিবারকে লক্ষ্য করে আক্রমণ চালায় বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা বেড়ে ১৫,৫২৩

গত কয়েক দিনে গাজার দক্ষিণাঞ্চলে যেভাবে হামলা চালানো হয়েছে এবং এর ফলে সেখানকার হাসপাতালগুলোতে যে চিত্র দেখা গেছে, সেটি রীতিমত আতঙ্কের বলে বর্ণনা করেছেন জাতিসংঘের একজন কর্মকর্তা।

গাজার কোন হাসপাতালে আগে কখনও এমন অবস্থা দেখেননি বলে জানিয়েছেন তিনি। খান ইউনিসের নাসের মেডিকেল হাসপাতালকে "যুদ্ধক্ষেত্র" হিসেবে বর্ণনা করেছেন ইউনিসেফের কর্তকর্তা জেমস এল্ডার।

তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা অবশ্য বলেছেন, তাদের অভিযানে যেন বেসামরিক নাগরিকরা হতাহত না হন, সেজন্য "সর্বোচ্চ চেষ্টা" চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল।

ইউনিসেফের কর্তকর্তা জেমস এল্ডার বলেন, নাসের হাসপাতালের কাছে তিনি ধারাবাহিকভাবে বড় বড় বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাচ্ছেন। গত কয়েক দিনের হামলায় শিশুদের অনেকেই গুরুতর আহত হয়েছেন।

আহতদের মধ্যে অনেক শিশুর মাথায় আঘাত যেমন দেখা যাচ্ছে, তেমনি কারও কারও শরীর আগুনে খুব খারাপভাবে পুড়ে গেছে।

আরও পড়ুন: ফিলিস্তিনিদের হামলায় ৩ ইসরায়েলি সেনা নিহত

জেমস এল্ডার বলেন, "এই হাসপাতালটিতে আমি নিয়মিত যাই। সেখানে ভর্তি শিশুরা এখন আমাকে চেনে। শিশুদের পরিবারের সদস্যরাও আমাকে চেনে। তারা আমার হাত ধরে অনুনয়ের সুরে বলছে যে দয়া করে আমাদের নিরাপদ কোথাও সরিয়ে নিয়ে যান। কিন্তু কোন জায়গাটা আসলে নিরাপদ বলেন?”

তিনি আরও বলেন, “এটা খুবই দু:খজনক যে তারা আমাকে এমন একটি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করছে, যার একমাত্র উত্তর হচ্ছে - গাজার কোথাও নিরাপদ নয়।“

ইসরায়েলের গত কয়েক দিনের টানা বোমা হামলায় ৫০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে বলে গাজায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে।

আর এই যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ১৫ হাজার ৫০০ ছাড়িয়েছে বলেও জানিয়েছেন তারা।

গাজায় অবস্থান করা ব্রিটিশ-ফিলিস্তিনি নাগরিক মোহাম্মদ গালায়নি বলেছেন, সেখানকার শহরের পরিস্থিতি ভয়াবহ রকম বিপর্যয়কর।

সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগে তিনি ফোনে বলেছিলেন, "মানুষ ৫০ দিন বা তারও বেশি সময় ধরে ইসরায়েলের নৃশংস আক্রমণ সহ্য করে চলেছে এবং জীবন ধারণের জন্য যা যা প্রয়োজন, যেমন - খাদ্য, পানি, বিদ্যুৎ, স্যানিটেশন এবং বর্জ্য পরিষেবার অবস্থা খুবই নাজুক।"

গালায়নি একজন বায়ুদূষণ বিশেষজ্ঞ, যিনি যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টারে থাকেন। গত ৭ অক্টোবরের হামলার কিছু দিন আগে মাকে দেখতে তিন মাসের সফরে গাজায় এসেছিলেন তিনি। যুদ্ধ শুরু হওয়ায় এখন সেখানেই আটকা পড়ে আছেন গালায়নি।

অন্যদিকে, শুক্রবার থেকে আবারও হামলা শুরু হওয়ার পর গাজা থেকে ইসরায়েলে নিয়মিত রকেট ছোড়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।

শনিবার তেল আবিবের নিকটবর্তী হলন শহরের ২২ বছর বয়সী এক ব্যক্তি আহতও হয়েছেন, যাকে পরে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

অন্যদিকে, ইসরায়েলের নির্দেশের পর খান ইউনিসে আশ্রয় নেওয়া কয়েক লাখ মানুষের অনেকেই ইতোমধ্যে অন্যত্র সরে গেছেন।

জাতিসংঘের সর্বশেষ হিসেবে বলা হয়েছে যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর গাজায় প্রায় ১৮ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি বলেছেন, গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের "এমন একটি ছোট জায়গায় আরও বেশি করে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে, যেটি ইতোমধ্যেই খুব ছোট।"

অন্যদিকে, আইডিএফের অনলাইনে হামলার জন্য নির্ধারিত এলাকার মানচিত্র পোস্ট করা শুরু হয়েছে। সেখানে দাবি করা হয়েছে যে গাজার সাধারণ নাগরিকদের সরে যেতে বলে বিমান থেকে লিফলেট ফেলা হয়েছে।

বিবিসির সঙ্গে রোববার কথা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সিনিয়র উপদেষ্টা মার্ক রেগেভের। তিনি বলেছেন, বেসামরিক নাগরিকরা মোটেও তাদের হামলার লক্ষ্যবস্তু নয়।

কিন্তু হামাস যেহেতু ঐসব বেসামরিক এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে, ফলে গাজার সাধারণ নাগরিকদের রক্ষা করা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।

গাজায় হামাসের ব্যবহৃত ৮০০টির মতো টানেল পাওয়া গেছে বলে বলছে আইডিএফ। এর মধ্যে ৫০০টি ধ্বংস করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে তারা।

সূত্র : মিডল ইস্ট আই, বিবিসি, ওয়াফা

এমইউ