images

আন্তর্জাতিক

আল-শিফা হাসপাতালে অস্ত্র উদ্ধারের নাটক সাজিয়েছে ইসরায়েল!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

১৮ নভেম্বর ২০২৩, ০৩:১৬ পিএম

গাজার উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত আল-শিফা হাসপাতালটি গত কয়েক দিন ধরে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর হামলায় বিপর্যস্ত হয়ে গেছে। গত বুধবার (১৫ অক্টোবর) সেখানে হামলা চালায় দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী। গাজার বৃহৎ এ হাসপাতালে হামলা চালানোর আগে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) একটি গ্রাফিকস ভিডিও প্রকাশ করে। সেখানে তারা দেখায়, আল-শিফার নিচে সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের বিস্তৃত সুড়ঙ্গ ও কমান্ড সেন্টার রয়েছে। যেখান থেকে ইসরায়েলের ওপর হামলার পরিকল্পনা করা হয়। তবে ইসরায়েল তাদের এ দাবির বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো প্রমাণ দেয়নি।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী হাসপাতাল থেকে (কথিত) উদ্ধার করা কিছু অস্ত্র দেখিয়েছে - যেগুলোর বেশিরভাগই হলো অ্যাসাল্ট রাইফেল। এই অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়টি ইঙ্গিত করছে, সেখানে সশস্ত্র যোদ্ধারা হয়তো ছিলেন। কিন্তু এর মাধ্যমে এটা প্রমাণিত হয়নি যে হাসপাতালের নিচে হামাসের বিশাল কমান্ড সেন্টার ছিল।

আরও পড়ুন: আল-শিফা হাসপাতালের আইসিইউ’র বেশিরভাগ রোগীই মারা গেছেন

এমনকি অস্ত্র উদ্ধারের যে ভিডিও ইসরায়েল প্রকাশ করেছে সেটি চুলচেরা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে এটি ‘সাজানো নাটক’ ছিল।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির বিশ্লেষক জানিয়েছেন, আল-শিফা হাসপাতালের এমআরআই মেশিনের পেছন থেকে উদ্ধারকৃত অস্ত্রের যে ব্যাগটি ইসরায়েলি বাহিনী এক সাংবাদিককে দেখিয়েছে, সেই ব্যাগটি সাংবাদিক আসার কয়েক ঘণ্টা আগে স্কচট্যাপ দিয়ে প্যাচানো হয়েছিল।

এরপর পরবর্তী যে ভিডিও ইসরায়েলিরা প্রকাশ করেছে, সেখানে দেখা গেছে ব্যাগে যে পরিমাণ অস্ত্র ছিল তার চেয়ে বেশি অস্ত্র সাজিয়ে রাখা হয়েছে। এছাড়া ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী দাবি করেছে, আল-শিফার ভেতর থেকে তারা যে ভিডিও প্রকাশ করেছে সেটি এডিট করা হয়নি। এটি একবারে ধারণ করা হয়েছে। তবে বিবিসির বিশ্লেষণে ওঠে এসেছে, ভিডিওটি এডিট করা হয়েছে।

অপর ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, হামলার আগে ইসরায়েল যে গ্রাফিকস ভিডিওটি প্রকাশ করেছিল, সেটিতে দেখানো হয়েছিল হাসপাতালের অনেক নিচে হামাসের কমান্ড সেন্টার অবস্থিত। হয়তো তারা সেখানে এখনও পৌঁছাতে পারেনি। তবে এখন পর্যন্ত ইসরায়েল যেসব প্রমাণ দেখানোর চেষ্টা করেছে— পরবর্তীতে তারা যেসব প্রমাণই দেখাক না কেন সেগুলো নিয়ে মানুষের মধ্যে তীব্র সন্দেহ থাকবে।

হাসপাতালে হামলা এবং এটির ভেতর হামাসের সামরিক অবকাঠামো না পাওয়ার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ যদি ইসরায়েলিরা কোনো কিছু না পায় তাহলে তারা জেনেভা কনভেনশনের চুক্তি ভঙ্গ করেছে। জেনেভে কনভেনশন চুক্তিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে, হাসপাতাল যদি বড় কোনো সামরিক হুমকি না হয় তাহলে এটিতে হামলা চালানো যাবে না। উল্টো হাসপাতাল রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকতে হবে।

]আরও পড়ুন: ‘গাজার শিফা হাসপাতালের অভিযান ইসরায়েলিদের পরাজয় ও ব্যর্থতার প্রমাণ’

হাসপাতালে হামলার কারণে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত করার তদন্ত হবে। যদিও এসব তদন্ত এবং এটির রায় প্রকাশের বিষয়টি অনেক সময়সাপেক্ষ। কিন্তু ইসরায়েল এতে ফেঁসে যাবে।

হাসপাতালে কমান্ড সেন্টার থাকার যে দাবি ইসরায়েল করেছে— সেটিতে যুক্তরাষ্ট্র শুধু সমর্থনই দেয়নি। তারা তাদের নিজস্ব গোয়েন্দা তথ্যের বরাতেও দাবি করেছে, আল-শিফার নিচে হামাসের সামরিক অবকাঠামো আছে।

Screenshot_2023-11-18_151437
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী হাসপাতাল থেকে (কথিত) উদ্ধার করা কিছু অস্ত্র দেখিয়েছে। ছবি: এবিসি নিউজ

কিন্তু এখন পর্যন্ত শক্তিশালী প্রমাণ না পাওয়ার বিষয়টি— যুক্তরাষ্ট্রের অতীত গোয়েন্দা ব্যর্থতার বিষয়টিই আবারও সামনে এনেছে। ইরাকে হামলা চালানোর আগে মার্কিন গোয়েন্দারা বলেছিলেন, দেশটিতে গণবিধ্বংসী অস্ত্র আছে। কিন্তু পরবর্তীতে এর কিছুই পাওয়া যায়নি। 

এ বিষয়ে হামাস বলেছে, আল-শিফা হাসপাতালে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট অনুমতি দিয়েছেন। জো বাইডেনের সবুজ সংকেত পেয়েই ইসরায়েলি সেনারা এ বর্বর অভিযান চালিয়েছে।

ফিলিস্তিনি সংগঠনটি বলেছে, ইসরায়েলিরা শিশু, রোগী এবং নিরপরাধ বেসামরিক নাগরিকদের হত্যায় জড়িত। তাদের জবাবদিহি করতে হবে।

হামাস জানিয়েছে, ইসরায়েলের মিথ্যাচারকে গ্রহণ করেছে হোয়াইট হাউস এবং পেন্টাগন। তারা আল-শিফা হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে আরও গণহত্যা করার জন্য ইসরায়েলকে অনুমতি দিয়েছেন। ইসরায়েলিরা উত্তর গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করেছে। তারা আবারও ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখল করতে চাইছে।

শুক্রবার ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীটির সশস্ত্র শাখা কাসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু ওবাইদা বলেন, ‘নেতানিয়াহু এবং তার যুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রিসভা এখন একটি অবাস্তব বিষয় খুঁজছেন। এটা তাদের অক্ষমতা এবং ফাঁকা ঔদ্ধত্য নির্দেশ করেছে। এটা ইসরায়েলিদের পরাজয় ও ব্যর্থতার প্রমাণ।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, বিবিসি, আল-জাজিরা, মিডল ইস্ট আই, আনাদোলু এজেন্সি

এমইউ