গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরোচিত হামলার মধ্যে ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডের সর্ববৃহৎ হাসপাতাল আল-শিফা এখন ‘গণকবরে’ পরিণত হয়েছে। হাসপাতালটির নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসা নেওয়া অধিকাংশ রোগীই মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন হাসপাতালটির চিকিৎসক আহমদ মোফিদ আল-মোখালালাতি। জ্বালানি ও অক্সিজেনের অভাবে ভেন্টিলেটরে থাকা বেশিরভাগ আইসিইউয়ের রোগী মারা গেছেন বলে জানান তিনি।
হাসপাতালটির বার্ন ইউনিটের নেতৃত্বদানকারী এই চিকিৎসক কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল-জাজিরাকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে আইসিইউতে থাকা বাকি শিশুদের বেঁচে থাকার সামান্য আশা করছেন তারা।
বিজ্ঞাপন
গাজার সবচেয়ে বড় হাসপাতালটিতে মৌলিক প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের তীব্র ঘাটতির পাশাপাশি কম্পাউন্ডের প্রধান ভবনগুলোতে পানি ও বিদ্যুতের তীব্র অভাব দেখা দিয়েছে। বিদ্যুতের অভাবে অস্ত্রোপচার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে ঢুকে হামাসের নজিরবিহীন হামলায় ১৪ শ’র বেশি মানুষ নিহত এবং ২৪০ জন জিম্মি হওয়ার পর থেকেই ফিলিস্তিনি এই সংগঠনটিকে নিশ্চিহ্ন করার প্রত্যয় নিয়ে গাজায় হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী।
যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় সাড়ে ১১ হাজারের মতো ফিলিস্তিনি নাগরিককে হত্যা করেছে দখলদার ইসরায়েল। হামলার পর থেকে জাতিসংঘের মহাসচিব একাধিকার যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেও তাতে পাত্তা না নিয়ে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে দখলদার ইসরায়েল। বিমান থেকে ফেলা বোমা ও স্থল অভিযানে একের পর এক প্রাণ হারাচ্ছেন ফিলিস্তিনের মানুষ।
বিজ্ঞাপন
যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গাজার উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত আল-শিফা হাসপাতালে রোগীতে ভরে যায়। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির অভাবে আইসিইউতে থাকা শিশুসহ একের পর এক রোগী মারা যেতে থাকেন।
গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের এবিসি নিউজে আল শিফা হাসপাতালের আইসিইউতে থাকা ৬৩ রোগীর ৪৩ জনেরই মৃত্যু হয়েছে বলে খবর প্রকাশিত হয়। এর দুই দিন পর হাসপাতালটির বার্ন ইউনিটের চিকিৎসক আহমদ মোফিদ জানান, আইসিইউতে চিকিৎসাধীন বেশিরভাগ রোগীই মারা গেছেন।
এদিকে আল-শিফা হাসপাতালের পরিচালক আবু সালমিয়া বলেন, ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান শুরুর পর রোগী, চিকিৎসাকর্মী এবং আশ্রয় নেওয়া মিলিয়ে ৭ হাজার লোক হাসপাতালে আটকা পড়েছে। চিকিৎসকরা এখনও রোগীর সেবায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ইসরায়েলি বাহিনী কাউকে ঢুকতে বা বের হতে না দেয়ায় হাসপাতালটি একটি ‘বড় কারাগার’এবং ‘গণকবর’ হয়ে উঠেছে।
আবু সালমিয়া আরও বলেন, ‘আমাদের কিছুই নেই। জ্বালানি নেই, বিদ্যুৎ নেই, খাবার নেই, পানি নেই। প্রতিমুহূর্তে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। গত তিন দিন ধরে হাসপাতালটি অবরোধে রাখা হয়েছে।’
হাসপাতালের অবস্থা নিষ্ঠুর ও বেদনাদায়ক বলে উল্লেখ করে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, হাসপাতালকে ইসরায়েলি বাহিনী তাদের ঘাঁটি বানিয়ে ফেলেছে।
এমআর