আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:২২ পিএম
আজারবাইজান দক্ষিণ ককেশাসের আর্মেনিয়ান-নিয়ন্ত্রিত নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চলে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালালে বহু মানুষ আহত ও নিহত হয়। এ বিষয়ে আল-জাজিরা জানিয়েছে, ‘আজারবাইজানের অভিযানে কয়েক ডজন মানুষ নিহত এবং ২০০ জনেরও বেশি আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট অ্যান্টোনি ব্লিঙ্কেন বিষয়টি নিয়ে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ ও আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ানের সঙ্গে কথা বলেছেন। ব্লিঙ্কেন নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চলে সংঘাত বন্ধ করতে উভয় দেশের প্রতি আহ্বান জানান। অন্যদিকে ওই অঞ্চলে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার আহ্বান জানিয়েছে রাশিয়া।
আজারবাইজানের অভিযোগ, আর্মেনিয়া বিতর্কিত ওই অঞ্চলে সেনা জড়ো করছে। তবে নাগর্নো-কারাবাখে কোনো সেনা মোতায়েনের খবর অস্বীকার করেছে আর্মেনিয়া।
আরও পড়ুন: নাগর্নো-কারাবাখে আজারবাইজানের উগ্রবাদবিরোধী অভিযান শুরু
আর্মেনিয়া উল্টো বলছে, ‘আজারবাইজান নাগর্নো-কারাবাখের জনগণের বিরুদ্ধে বড় ধরনের আগ্রাসন শুরু করেছে। দেশটি অভিযোগ করছে যে আজারবাইজান ওই অঞ্চলে আর্মেনীয় জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে জাতিগত শুদ্ধি অভিযান চালাতে চায়।
আজারবাইজানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, কারাবাখ অঞ্চলে আর্মেনিয়ার সেনাবাহিনী যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়েছে। তারা যদি আত্মসমর্পণ করে কেবল তাহলেই ‘উগ্রবাদবিরোধী তৎপরতা’ বন্ধ হবে। তবে আর্মেনিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এর আগে ওই অঞ্চলে দেশটির কোনো সেনা মোতায়েনের দাবি অস্বীকার করেছে।
আজারবাইজানের ঘনিষ্ঠ মিত্র তুরস্ক বলেছে, ‘আর্মেনিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষ থেকে দীর্ঘ দিন ধরে উস্কানি এবং সশস্ত্র হামলার প্রতিক্রিয়ায় এ হামলা শুরু করেছে আজারবাইজান।’ অবশ্য একই সময়ে তুর্কি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চলে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে একটি ব্যাপকভিত্তিক সংলাপ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।
নাগর্নো-কারাবাখের সর্বোচ্চ মানবাধিকার বিষয়ক কর্মকর্তা গেঘাম স্টেপানিয়ান বলেছেন, মঙ্গলবার রাতে আজারবাইজানের হামলায় তিন নারী ও দু’টি শিশুসহ সাত বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়েছে। এ সময় ১৫ নারী ও ১৩ শিশুসহ ৩৫ জন আহত হয়।
আরও পড়ুন: তুরস্কের বিরুদ্ধে ইরাকি প্রেসিডেন্ট যা বললেন
দক্ষিণ ককেশাস অঞ্চলের বিতর্কিত নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে কয়েক দশক ধরে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাত চলে আসছে। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে অঞ্চলটি আজারবাইজানের বলে স্বীকৃত হলেও ১৯৯০ এর দিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর গেরিলা গোষ্ঠীর সহায়তায় আর্মেনিয়া তা দখল করে নেয়।
এ নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে দুই প্রতিবেশী দেশ আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া অন্তত দু’বার যুদ্ধে জড়িয়েছে। ১৯৯০ এর দশকের গোড়ার দিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর প্রথমবার যুদ্ধে জড়ায় দেশ দু’টি।
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত এ দুই রাষ্ট্র বিতর্কিত নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চলকে কেন্দ্র করে ২০২০ সালে ফের প্রাণঘাতী যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। দুই দেশের সৈন্যদের হামলা-পাল্টা হামলায় সেই যুদ্ধে উভয়পক্ষের সাড়ে ছয় হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে।
যুদ্ধের পর আর্মেনিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র রাশিয়া নাগর্নো-কারাবাখে কয়েক হাজার শান্তিরক্ষী মোতায়েন করে। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সেখান থেকে শান্তিরক্ষীদের পরে প্রত্যাহার করে নেয় দেশটি।
গত বছরের ডিসেম্বর থেকে লাচিন করিডোর নামে পরিচিত নাগর্নো-কারাবাখ ছিটমহলে প্রবেশের একমাত্র পথ অবরোধ করে রেখেছে আজারবাইজান। মঙ্গলবার বাকুতে আজারবাইজানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আর্মেনিয়ার বাহিনীর বিরুদ্ধে আজারি সৈন্যদের অবস্থান লক্ষ্য করে ‘পরিকল্পিত গোলাবর্ষণের’ অভিযোগ করেছে।
সূত্র : আল-জাজিরা, বিবিসি
এমইউ