রাফিউজ্জামান রাফি
০৫ আগস্ট ২০২৫, ০৯:৫৪ এএম
আজ ৫ আগস্ট ‘জুলাই বিপ্লবে’র বর্ষপূর্তি। গেল বছরের এই দিনে পতন ঘটে স্বৈরাচারী সরকারের। বিজয় হয় ছাত্র-জনতার। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে ছাত্র জনতার সঙ্গে গলা চড়িয়েছিলেন অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। দাবি আদায়ে রাজপথে নেমেছিলেন। অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ঢাকা মেইলের সঙ্গে কথা বলেছেন জুলাই বিপ্লবের সম্মুখ সারির এ যোদ্ধা।
আজ জুলাই বিপ্লবের বর্ষপূর্তি। দিনটি ঘিয়ে আপনার অনুভূতি কী?
প্রথমত, এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি অভূতপূর্ব অর্জন। স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটানো গেছে। যারা এই আন্দেলনে সম্মুখ সারিতে থেকে প্রাণ দিয়েছেন তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। যাঁরা আহত কিংবা বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাঁদের প্রতিও সহমর্মিতা। অবশ্যই বাংলাদেশের জন্য একটা সুবর্ণ সুযোগ তৈরি হয়েছিল। হয়তো নতুন দেশ গড়ার পথ তৈরি করা যেত।

জুলাই আন্দোলনের বর্ষপূর্তিতে ঘিরে পরিকল্পনা
দিনটি ঘিরে বিশেষ কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে আমি ভীষণ আনন্দিত, উদ্বেলিত। পাশাপাশি যারা শহীদ ও আহত হয়েছেন তাঁদের জন্য মর্মাহত। তবে আমার মনে হয় যত কম উদযাপন, কম মাতামাতি করা যাবে তত ভালো। উদযাপনে বেশি বিশ্বাসী হয়ে গেলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অবক্ষয় দেখা দেয়। সেই জায়গা থেকে আমার কাছে মনে হয়, আমরা অবশ্যই শহীদের স্মরণ করব। আহতদের প্রতি সহানুভূতি জানাব। তবে খুব বেশি উদযাপনের কিছু নেই। এটা নিঃসন্দেহে আমাদের অনেক বড় অর্জন। এই অর্জন বাংলাদেশের ইতিহাসে পাতায় লেখা থাকবে।
আন্দোলনের সময় ভয় কাজ করেছে?
আন্দোলনের সময় ভয় কাজ করেনি। তবে এখন অনেক ভাবি, যদি ওই সরকারের পতন না হতো! চার তারিখে মনে হয়েছিল সরকারের পতন হবে। তখন তো আমরা চারদিন ধরে রাস্তায়। ওই সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গিয়েছিলাম। ভয়, শঙ্কা দুটোই ছিল। কিন্তু তখন খুব বেশি ভয় ছিল না। এতো মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। এতো মানুষকে রাস্তায় দেখেছি। তখন খুব একটা আতঙ্ক বা ভয় কাজ করেনি। আমার মনে হয়েছে এতো ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা রাস্তায় এসে স্লোগান দিচ্ছে, অধিকার চাচ্ছে। ওঁরা যদি পারে আমি কেন পারব না? ওঁরা আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে।

অভ্যুত্থানের পর অনেকে সুযোগ সুবিধা পেয়েছেন। আর আপনাকে হতে হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত সাইবার বুলিংয়ের শিকার…
প্রথমত, আমি কোনো জায়গায় যাইনি। এটা আমার সচেতন সিদ্ধান্ত ছিল। দ্বিতীয়ত, আক্রমণ আমাকে আগেও করত। জুলাই আন্দোলনের সময় করা হয়েছে। এখনও করা হচ্ছে। এটা খুবই নিন্দনীয় কাজ। যারা মনে করেন আওয়ামী লীগ সরকার থাকলেই ভালো ছিল তাঁদের একটা গ্রুপ এসবের সাথে জড়িত। এছাড়াও কিছু কাছের পরিচিত মানুষ, সহকর্মীরা আক্রমণ করেছেন। এটা তাঁদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। একজন কী ধরনের ব্যবহার করবে তা তো আমি নির্ধারণ করতে পারব না।
ক্যারিয়ারে প্রভাব…
আড়াই বছর হয়ে গেছে আমাকে ইন্ডিয়ান ভিসা দেওয়া হয় না। ভিপি নূরের সঙ্গে আমার একটি ছবি ছিল। এ কারণে ভারত ভিসা দিচ্ছে না আড়াই বছর হয়ে গেছে। ভারতের একটি কাজ করার কথা ছিল। সেটাও বাতিল করেছে। তাঁরা কারণ দেখিয়েছে, ‘সাধারণ মানুষ আমাকে চেনেন না’। খুবই হাস্যকর। শেষ মুহূর্তে চুক্তিপত্র পাঠিয়ে দিয়েছে। কাজটি একদম চূড়ান্ত ছিল। কিন্তু হওয়া কাজটি হয়নি। এটা আমার ক্যারিয়ারের ওপর অনেক বড় প্রভাব ফেলেছে। বিশেষ করে আমি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।
দেশে স্বার্থে কখনও আপোষ করেননি। এখন গর্ব হয় নাকি আফসোস করেন?
আমার গর্ব হয় এবং এটার জন্য কোনো অনুশোচনা নেই। বরং আমি খুশি। কারণ ইতিহাসের সঠিক পক্ষে থাকতে পেরেছি। এটা আমার জন্য গর্বের।

প্রত্যাশা এবং প্রাপ্তি…
স্বপ্ন অনেক বেশি ছিল। অনেক পরিবর্তন আশা করেছিলাম। সে তুলনায় কোনো রকমের পরিবর্তন দেখতে পাইনি। উল্টো মব কালচার তৈরি হয়েছে। নারীর প্রতি বিদ্বেষ বেড়েছে। মাজার, ভাস্কর্য, ৩২ নাম্বার ভাঙা হয়েছে। মবকে উসকে দেওয়া হচ্ছে। সাধারণ মানুষ এবং শিল্পীদের নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে। এগুলো আগেরই ব্যবস্থা। আগের ব্যবস্থার পুনরাবৃত্তি দেখতে পাচ্ছি। খুব একটা পরিবর্তন দেখছি না।
জুলাই হত্যাকাণ্ডে বিচার নিয়ে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
হ্যাঁ, আমিও মনে করছি শহীদদের তালিকা এবং আহতদের সুচিকিৎসা বিলম্বিত করা হচ্ছে। এগুলো সবার আগে করা দরকার ছিল এবং বিচার প্রক্রিয়াটা শুরু হওয়ার দরকার ছিল। সেটা অনেক দীর্ঘ হয়েছে আমার কাছে মনে হয়।
সবশেষে…
প্রত্যেকের যার যার অবস্থান থেকে পরিবর্তন হওয়াটা খুব জরুরি। আমরা এতো দুর্নীতিগ্রস্ত, অসৎ জাতি! আমাদের মধ্যে সততার অভাব আছে। দুর্নীতি আমাদেরকে গ্রাস করে নিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে নিজেদের এগিয়ে আসতে হবে। নিজেদের সংশোধন করতে হবে। দেশকে ভালোবাসতে হবে এবং দেশকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
আরআর/