নিজস্ব প্রতিবেদক
০৬ আগস্ট ২০২২, ০৭:১৭ পিএম
দেশে হঠাৎ করে অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে ডিজেলসহ সবধরনের জ্বালানি তেলের দাম। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যেই বাসসহ গণপরিবহনের ভাড়া বাড়ানোর তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এই অবস্থায় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ সামগ্রিকভাবে জীবনমানের ওপর বাড়তি চাপ পড়বে বলে জানিয়েছে বিশেষজ্ঞ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। বিশেষত গণপরিবহনের ভাড়া ও পণ্য পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় সবধরনের খাদ্যপণ্যের দামে প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা তাদের।
গলির চায়ের দোকান থেকে শুরু করে টিভির পর্দায় সর্বত্রই আলোচনার বিষয়বস্তু জ্বালানির দাম ও এর প্রভাব। গত কয়েক মাস ধরেই দ্রব্যমূল্যের বাজারে অস্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে। সর্বাধিক ব্যবহৃত বিভিন্ন ওষুধের দাম প্রকারভেদে শতাধিক হারে বেড়েছে। এ বছরের শুরুতে তেলের দাম বৃদ্ধিতে এক দফা বেড়েছে সবধরনের গণপরিবহনের ভাড়া। এরই মধ্যে নতুন করে জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে দিশেহারা অবস্থায় সাধারণ জনগণ।
আরও পড়ুন: তেল নিয়ে হিসাব মিলছে না বিশেষজ্ঞদেরও!
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী ছত্তার মিয়া ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘গত জানুয়ারিতে মাসিক বেতন বেড়েছে দুই হাজার টাকা। অথচ বাসের ভাড়া যে পরিমাণ বেড়েছে, তাতে ইনক্রিমেন্টের বেশিরভাগই বাড়তি বাস ভাড়ায় চলে যাচ্ছে। এর মধ্যে চাল, ডাল, তেল ও সবজির বাড়তি দাম তো আছেই। এর মধ্যে নতুন করে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি মানে সবকিছুর দাম আরেক দফা বাড়া। এই অবস্থা চলতে থাকলে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঢাকায় ছেড়ে যেতে হবে।’
সবজি বাজারে আসা হালিমা বেগম ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম বাড়লেও এখন পর্যন্ত বাজারের শাক-সবজির দাম ঠিক আছে। তবে দোকানিরা বলছে কাল থেকেই হয়তো দাম বেড়ে যাবে। এমনিতেই দাম অনেক বেশি। কয়েক দিনের মধ্যে কাঁচামরিচের দাম বেড়ে ৩০০ টাকায় উঠেছে। প্রায় সব রকম সবজির দামই আকাশছোঁয়া। এরমধ্যে যদি তা আরও বাড়ে তাহলে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে।’
চাপ বাড়বে জনজীবনে
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রভাব সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সাধারণ নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন আহমেদ ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘কাল রাত থেকে ডিজেল চালিত গণপরিবহন ও মালবাহী যান কমে গেছে। মনে করেন, মাল পরিবহনের জন্য একজন ট্রাকচালক চুক্তিতে ছিল। কিন্তু সে যখন পাম্পে গিয়ে দেখল তেল কিনতে তিন হাজার টাকার বেশি লাগবে, তখন স্বাভাবিকভাবেই সে আগের চুক্তিতে যাবে না। এ অবস্থায় পণ্য পরিবহনের খরচ বেড়ে যাবে। ফলে ঢাকাসহ সারাদেশের বাজারে পণ্যের দামও বেড়ে যাবে। একইসঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই গণপরিবহনের ভাড়া বাড়বে। ফলে এটি জনজীবনকে আরও দুর্বিষহ করে দেবে।’
আরও পড়ুন: বাড়তি খরচে সংসার চালানোর চিন্তায় বিমর্ষ তারা
দাম বৃদ্ধির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘সরকারপ্রধান বলেছেন পেট্রোল ও অকটেন আমরা আমদানি করি না। গ্যাস তুলার সময় কিছু উৎপাদন হয়, আর ডিজাইন রিফাইনের সময় পেট্রোল ও অকটেন তৈরি হয়। আমরা এতদিন যাবত জানি আমাদের এসব জ্বালানির যে রিজার্ভে আছে সেটা অনেক দিন চলবে। কিন্তু দাম বৃদ্ধির ব্যাপারে তারা যে কথাটা জানালো তা একেবারেই যুক্তিসঙ্গত না। তাদের ভুল নীতি ও দুর্নীতি হচ্ছে এই দাম বৃদ্ধির মূল কারণ। সরকারের ভুল সিদ্ধান্তের জন্যই দেশের আজকের এই পরিস্থিতি। কয়েকজন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে অনৈতিক সুবিধা দেওয়ার জন্য তারা যে দুর্নীতি করেছে তার ফল এসব। তাদের অন্যায়ের দায় এখন সারাদেশেবাসীকে ভুগতে হবে।’
রাজনীতিবিদরা দায় এড়াতে পারেন না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের রাজনীতিবিদরা এই দায় এড়াতে পারেন না। তারা দীর্ঘদিন যাবত চুপ করে রয়েছেন। সরকার যে ভুল নীতিগুলো গ্রহণ করে তারা এর বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ করেননি। বিরোধীদলগুলো দায়সারা আচরণ করেছে। আপনি রাজনীতি করবেন অথচ সরকার একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নিল, কোনো প্রতিবাদ হলো না তা মেনে নেওয়া যায় না। আজ সবাইকে এর খেসারত দিতে হবে। কারণ এটি এখন ক্যানসারে পরিণত হয়েছে। দেশের বিদ্যুতের খাতে চাহিদা ও উৎপাদনে কোনো সামঞ্জস্য নেই। এ অবস্থায় সামনের সপ্তাহে হয়তো বিদ্যুতের দামও বাড়তে পারে। এসব জনজীবনকে দুর্বিষহ করে দেবে। পরিস্থিতি কতটা খারাপ হয় এখন এটিই দেখার বিষয়।’
আরও পড়ুন: ‘কীভাবে চলবেন’ জানতে চান বাইক চালকরা
এদিকে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত সামগ্রিকভাবে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। ডিজেলের ব্যবহার খাতগুলোতে এর নেতিবাচক পড়বে। বিশেষত পরিবহন, কৃষি, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে উৎপাদান ব্যয় বাড়বে। ফলে এসব খাতে ভোক্তার ওপর অতিরিক্ত পণ্যমূল্যের দায় চাপবে। একইসঙ্গে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বাড়বে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
এমএইচ/জেবি